খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৮ মে ২০১৬: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী শেয়ার ব্যবসা করেন। শেয়ারবাজারের বহু গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগেই জানতে পারেন। এ জন্য তাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই কারণে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে শেয়ার ব্যবসা করতে না পারেন, সে চিন্তাও করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
শেয়ারবাজার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জেনে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধে যতটা প্রয়োজন ততটাই কঠোর হতে হবে বিএসইসিকে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিএসইসির যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা রয়েছে। তার পরও প্রয়োজনে সরকারের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব মার্কেটস অ্যান্ড ইস্যুয়ার কোম্পানিজ (এসআরএমআইসি) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা শেয়ার ব্যবসা করেন। ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে আর্থিক বছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণার আগে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে মূল্য সংবেদনশীল সব তথ্য জানাতে হয়। এর বাইরে বছরব্যাপী অনেক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জেনে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মীদের। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের শেয়ার কেনাবেচা নির্দিষ্ট সময় বা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেছে এ বিভাগ।
একইভাবে তালিকাভুক্ত ৪৭ বীমা কোম্পানির অনেক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর কর্মকর্তারা আগেই জানতে পারেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ অন্তত ২০ কর্মকর্তার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিইআরসি) কর্মকর্তাদের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জেনে এ খাতের তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করা বা সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে শেয়ার ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়ার পর বিইআরসি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বিএসইসি।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে এ বিষয়ে বৈঠক করবে বিএসইসি। সংস্থাগুলোকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণবিধিতে সংশোধন এনে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানানো হবে। এর বাইরে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট আইনেও সংশোধন এনে এ সংক্রান্ত ধারা সংযোজন করা হবে।
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগাম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানার এবং শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগের বিষয়ে এসআরএমআইসি বিভাগ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানার কারণে বিএসইসির কর্মকর্তাদের কেউ শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২৯১ কোম্পানির মধ্যে ১১৯ কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ ও বিইআরসির নিয়ন্ত্রণাধীন। তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রচলনের সুপারিশ এসেছে।