Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

5kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬: ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা।
নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে ও স্থলবন্দরগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে তারা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন আসলাম।
ইসরাইলভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জেরুজালেম অনলাইন ডটকম’-এ মোসাদ এবং ইসরাইলের প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠকের সংবাদ প্রকাশের পরই তৎপর হয়ে উঠেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ দেশের বেশ কয়েকজন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সাতজনের মধ্যে দুজন হলেন মোসাদের বাংলাদেশী এজেন্ট। এদের মধ্যে এজেন্ট সিপান কুমার বসুর বাড়ি খুলনায় আর বিবেক দেবের বাড়ি ভারতের কলকাতায়। সাতজনের মধ্যে জামায়াত ঘরানার চার নেতা, চট্টগ্রামের এক সাংবাদিকও রয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা আরো জানান, সম্প্রতি ভারতে মোসাদের সঙ্গে আসলাম চৌধুরী বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পর সিপানকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
‘জেরুজালেম অনলাইন ডটকম’ পত্রিকায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদি সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করছেন তিনি। এন সাফাদি বলেছেন, ‘শিগগিরই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তারা। নতুন সরকার ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’
তবে ‘জেরুজালেম অনলাইন ডটকম’-এ প্রকাশিত ওই সংবাদের গ্রুপ ছবিতে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে দেখা যায় নি।ওই সংবাদ প্রকাশের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আসলাম। পরে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক ভিডিও বার্তায় আসলাম মোসাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তবে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের কথা তিনি অস্বীকার করেন।ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ওদের নিজস্ব বৈঠক ছিল, সরকার উৎখাতের বৈঠক নয়। দিল্লি সফরকালে ট্যুরিস্ট বাসে চলার সময় সিপন বাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পরে আমরা লোটাস টেম্পলে তাদের সাথে একটি ছবিও তুলি। পরে ওদের নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠক হয়। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। আমি গেছি ব্যবসায়িক কাজে। আমি মোসাদ সম্পর্কে জানতাম না। এখন লেখালেখির পর ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কে জানি।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সবার সাথে কথা বলি। এটাতো সরকার উচ্ছেদের কোনো কিছু না। আমি মনে করি, সরকার পরিবর্তন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটা আওয়ামী লীগ ও অন্য কোনো সরকারই হোক। চক্রান্ত করে কোনো সরকার পরিবর্তন করা যায় না।’
তবে ব্যাপারটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে প্রশাসন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের কিছু প্রমাণ আমারা পেয়েছি। এক্ষেত্রে যাদের সম্পৃক্ততার কথা এসেছে, তাদের ব্যাপারে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছি। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইসলাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সম্পর্কে সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। তারা মুসলিম দেশগুলোতে মারাত্মক ধরণের অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করে যাচ্ছে, এটা একেবারে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ। সেই সূত্রে তারা বাংলাদেশকে টার্গেট করতে পারে। মুসলমান প্রধান দেশ হিসেবে এখানে তাদের সাবোটেজ তারা চালাতে পারে। মোসাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।’