খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬: এমপির উপস্থিতিতে কান ধরে উঠবস করানো শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শুক্রবার এই লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।
তবে শিক্ষকের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি পাশের মসজিদের মাইকে এমন প্রচারণা চালিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এতে এমপির হাত রয়েছে। শিক্ষককে লাঞ্ছনা করার সময় এমপি সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
ওই শিক্ষকের পরিবার অভিযোগ করেছে, স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফখরুল ইসলাম তার বোন পারভীন আক্তারকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বসানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন। তিনি (শ্যামল কান্তি) এ স্কুলে প্রায় সতের বছর ধরে প্রধান শিক্ষক। টিনশেড ভবন থেকে স্কুলটিকে এখন পাকা ভবনে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। তাই শ্যামল কান্তি রাজি হচ্ছিলেন না স্কুলের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। সম্প্রতি তার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত ক্লাসে বসে কোকিলের ডাক, কাকের ডাক দিয়ে দুষ্টুমি করছিল। তিনি নিষেধ করলেও ওই ছাত্র শোনেনি। এতে তিনি রিফাতকে শাসন করেন। শাসনের এই ঘটনাকে পুঁজি করেন গুজব রটনাকারীরা।
ছাত্রকে শাসন করার ঘটনার পর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, কমিটির সদস্য ইউএনও অফিসের পিয়ন মিজানুর রহমান, মতিউর রহমান মিজু, মোবারক মিলে গুজব রটায় যে রিফাতকে মারার সময় তিনি ইসলাম ধর্মবিরোধী কথা বলেছেন। তারা রিফাতের মা রিনা বেগমকে দিয়ে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দেওয়ায়।
শুক্রবার তাকে স্কুলে ডেকে আনা হয় এ বলে যে, স্কুলে এমপি সাহেবের দেওয়া পঞ্চাশ লাখ টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে মিটিং হবে। তিনি স্কুলে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে পাশের মসজিদের মাইকে (তিনি) ধর্মীয় অবমাননা করেছেন বলে প্রচার করে জনসাধারণকে স্কুলে আসতে আহ্বান জানানো হয়। জনতা স্কুলে এসে ম্যানেজিং কমিটির লোকজনের সহায়তায় তাকে গণপিটুনি দিতে থাকে। একপর্যায়ে শ্যামল কান্তি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না।
এমপি সেলিম ওসমান সে সময় বলেন, ‘আমি জানতে পারি যে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি সেখানে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু তাকে বাইরে নিয়ে আসতে পারছিল না। কয়েক হাজার জনতা তাদের ঘিরে রেখেছিল। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে জনতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে উদ্ধার করি। তাকে থানায় নিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতের ব্যবস্থা করি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী সবিতা হালদার বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। তারা এমনভাবে গুজব রটিয়েছে যে, আমরা আবারো হামলার শিকার হতে পারি।’
নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমানকে জাতির কাছে মাফ চাওয়ার জন্য সোমবার আহ্বান জানান।
তবে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় পুলিশের করার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দীন। ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ফৌজদারি কোনো অপরাধ হয়নি তাই পুলিশের করার কিছু নেই।’
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার বলেছেন, ‘যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের শাস্তি পেতে হবে।’
বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।