খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২১ মে, ২০১৬: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর আগে বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলা উপকূল অতিক্রম করে। পরে এটি চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, শনিবার বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে রোয়ানু চট্টগ্রামে আঘাত হানে।
ঝড়ে ঘর ও গাছ চাপা এবং পাহাড় ধসে এ পর্যন্ত ১৬ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে ও ঘর ধসে গেছে। ঘরবাড়ি ও সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ৫৪ কিলোমিটার নিয়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
বাঁশখালী : ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে খানখানাবাদ ইউনিয়নে চারজন এবং ছনুয়া ইউনিয়নে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন।
ওসি আরো জানান, বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ, গণ্ডামারা, শেখের খিল ও ছনুয়ায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দুপুরে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়ে।
ছনুয়ায় নিহত নারীর নাম তাহেরা বেগম, তার স্বামী মো. হারুন। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় টিনের ঘরের চাল পড়ে রাজিব (১২) নামে নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া, বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শনিবার সকাল থেকে পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জেলার অধিকাংশ গ্রামেও বিদ্যুৎ সরবরহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পিডিবি।
ভোলা : জেলায় শনিবার ভোরে ঝড়ে ঘর চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)। তজুমদ্দিনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল উদ্দিন দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পটুয়াখালী : শনিবার সকালে ঝড়ে ঘর ভেঙে পড়ে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নে নয়া বিবি (৫২) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ঝড়ে ওই এলাকার আরো ১০-১২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে কক্সবাজারে কুতুবদিয়া উপজেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১০ জন। শনিবার বেলা ৩টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
নিহতরা হলেন- উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)। ইকবাল দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল নৌকার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক বলেন, আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার সাড়ে ২৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ কোথাও আংশিক ও কোথাও সর্ম্পূণ ধসে গেছে। এ ছাড়া শতাধিক বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত এবং জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।
নোয়াখালী: রোয়ানুর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার ২নং চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ নগর গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে মরিয়ম নেছার (১০)লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসী। এ ছাড়া জাহাজমারা ইউনিয়নের সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী রিফুলা বেগম (৪৭) নামে আরেক জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসান মো. মাঈন উদ্দিন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার ও লাশ দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।