Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

60খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬: যৌবনে পদার্পণ করার সাথে সাথেই মেয়েরা ত্বকের ব্যাপারে বিশেষ যতœশীল হয়ে ওঠেন। ত্বককে কোমল, মোহনীয় ও লাবণ্যময় করে তোলার জন্য শুরু হয় কত প্রচেষ্টা। সৌন্দর্য চর্চায় যে যা বলেন, সেটাকেই গ্রহণ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বান্ধবী বা অন্য কারো কাছ থেকে ত্বকের পরিচর্যায় তারা যে পরামর্শ গ্রহণ করে সে সব ভুল। এসব প্রচলিত ভুল ধারণা প্রয়োগ করার জন্য ত্বকের ক্ষতি হয় বেশি। বর্তমান লেখাটিতে এ রকম পাঁচটি প্রচলিত ভুল ধারণার কথা উল্লেখ করে পাশাপাশি প্রকৃত পরমর্শ দেওয়া হলো।
প্রচলিত ধারণা-১ : অ্যান্টিরিংকেল বা বলিরেখা প্রতিরোধকারী ক্রিমগুলো ত্বককে নাজুক করে তোলে
কিছু কিছু বিউটি থেরাপিস্ট এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে,অতিরিক্ত আলফা হাইড্রোক্সি এসিড বা ট্রেটিনয়েন ব্যবহারে ত্বক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। কিন্তু ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তাঁদের মতে, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড বা ট্রেটিনয়েনের ব্যাপক ব্যবহার ত্বককে সুডৌল ও মজবুত করে।
এই রাসায়নিক উপাদান ত্বকের ওপরের মৃত কোষগুলোকে তুলে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রেটিনয়েন ত্বকে কোলাজেন নামক এক ধরনের স্পঞ্জ সদৃশ প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে যা ত্বকে পরিপূর্ণতা আনে এবং ত্বকের কোষগুলোর মধ্যকার বন্ধনকে সুদৃঢ় করে, অন্য কথায় বলা যায় এটা সত্যিকার অর্থে ত্বককে পুরু করে তোলে। আলফা হাইড্রোক্সি এসিডের ঘনত্ব যত বেশি হয়, কোলাজেন উৎপাদনও তত বেড়ে যায়। তা সত্ত্বেও বেশি মাত্রায় এসব পদার্থ বা আরো বেশি শক্তিশালী পদার্থ ব্যবহার করলে ত্বক নাজুক অনুভূত হতে পারে বা নাজুক দেখাতে পারে। তাই একক এন্টি রিংকেল ক্রিম ব্যবহার করবেন এবং শুরুতে ব্যবহার করবেন কম, সপ্তাহে তিনবার। তাহলে ত্বক ক্রমে এর উপযুক্ত হয়ে উঠবে। তারপর ক্রিমটি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারবেন। আলফা হাইড্রোক্সি এসিড যদি খুব অস্বস্তিকর হয় তাহলে বিটা হাইড্রোক্সি (স্যালিসাইলিক) এসিড ব্যবহার করুন। এটাতে এন্টি ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে।
প্রচলিত ধারণা-২ : দিনে দুইবার মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা প্রয়োজন
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক প্রকৃতির হয় তাহলে দিনে দুইবার পরিষ্কার করার কারণে ত্বকে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে সমস্যা আরো বেড়ে যায়। ডিটারজেন্ট ও গরম পানি ত্বক সুরক্ষাকারী প্রাকৃতিক তেলকে সরিয়ে দেয়। এতে ঠান্ডা ও বাতাসে ত্বক প্রচণ্ড সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই সবেচেয়ে ভালো উপায় হলো রাতে হাল্কা ক্লিনজার দিয়ে মেকআপ তুলে ফেলা; তাহলে সকাল পর্যন্ত মুখ পরিষ্কার থাকবে। সকালে যদি আরো সতেজ অনুভূতি অনুভব করতে চান তাহলে ক্লিনজার দিয়ে হাল্কা মুছে নিন এবং মুখে ঠান্ডা পানি ছিটান।
প্রচলিত ধারণা-৩ :ঠোঁটে বাম ব্যবহার করলে বারবার তা ব্যবহার করতে হয়
এ ধারণার অর্থ হলো বাম অথবা লিপজেল আপনার জন্য ক্ষতিকর এবং এটা ব্যবহার করার পর ছেড়ে দিলে আপনার ঠোঁট ফেটে যাবে এবং খসখসে হয়ে উঠবে। দুটি ধারণার কোনোটিই সত্য নয়।
তাহলে শীত এলে আপনি কেন ঠোঁটে বাম বা লিপজেল ব্যবহারে বাধ্য হন? ঠোঁটের ত্বক বিশেষভাবে পাতলা হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁটের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার জন্য ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ওঠে। একবার ঠোঁটে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ঠোঁট পিচ্ছিল ও মসৃণ হয়। তবে তৈলাক্ত পদার্থটুকু মুছে ফেললে ঠোঁট দুটো আরো বেশি শুষ্ক বলে মনে হয়। এতে আপনি আরো বেশি বাম ব্যবহার করেন। এর অর্থ এই নয় যে, আপনি বাম বা লিপজেলে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ঠোঁটের শুষ্কতা প্রতিরোধে বাম বা লিপজেল ব্যবহারে ক্ষতি নেই।
প্রচলিত ধারণা-৪ : ধোঁয়া চেহারাকে নষ্ট করে দেয়
এ ধারণাও সত্য নয়। বিভিন্ন শহরে যে পরিমাণে ধোঁয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ধারণাটি সত্য হলে সবার চেহারাই খারাপ হয়ে যেত। দূষিত বাতাস সরাসরি ত্বকের ক্ষতি করে বা ত্বক বিনষ্টকারী ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোকে কার্যকর করে তোলে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যতিক্রম হলো সিগারেটের ধোঁয়া। এটি ত্বকে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয়, ক্ষত উপসমে বিলম্ব ঘটায় এবং ত্বকে দ্রুত বলিরেখা বা ভাঁজ সৃষ্টি করে।
প্রচলিত ধারণা-৫ : মুখে সাদা দাগ হওয়া মানে ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
সাদা দাগ, চুলকানি ও আঁশ ওঠার ঘটনা যদি ব্যাপক এলাকা যেমন, থুতনি, নাক অথবা গালে হয় তাহলে এটাকে ত্বকের শুষ্কতা বলা যেতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু স্থানে যেমন- নাসারন্ধ্রের চারপাশে, কপালের ওপরে যেখান থেকে চুল শুরু হয়েছে, অথবা ভুরুতে সাদা দাগ হওয়া সম্ভবত প্রসাধন সামগ্রীর প্রতি অ্যালার্জি অথবা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের (ত্বকের প্রদাহ যা ত্বকের তেল নির্গমনকারী এলাকাগুলোতে দুশ্চিন্তা বা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে) লক্ষণ।
প্রচুর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে এর কোনো সমাধান হয় না। বরং আরো খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। লোশনে অ্যালার্জি থাকলে এর প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে। তিনি হালকা হাইড্রোকরটিসন ক্রিম ব্যবহারের জন্য দিতে পারেন অথবা ত্বক পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।