খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬: নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র আদায় করে পরিচালনা পর্ষদ তাতে সই নিয়েছিল বলে আদালতকে জানাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা পড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ছাত্রের বক্তব্যের ভিত্তিতে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই শিক্ষার্থীও ‘একেক সময় একেক কথা বলেছে’।
যে প্রক্রিয়ায় শ্যামল কান্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তা বিধি বহির্ভূত হওয়ায় ওই শিক্ষককে পুনর্বহাল করা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, চার দফা সুপারিশসহ কমিটির ওই প্রতিবেদন হাতে এসেছে। হলফনামা করে প্রতিবেদন আকারে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে স্কুলপ্রাঙ্গনে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে একদল লোক। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
দেশজুড়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ওই ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। পাশাপাশি ওই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চায় আদালত।
আগামী ২৯ মে বিষয়টি আবার আদালতে উঠবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস জামান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু অভিযোগকারী মো. রিফাত হাসানের স্কুল কমিটির সামনে উপস্থাপিত জবানবন্দি ও গণমাধ্যমে প্রদত্ত জবানবন্দি এবং রিফাতের মায়ের লিখিত অভিযোগ ও মৌখিক অভিযোগে দেওয়া জবানবন্দির মধ্যে গরমিল লক্ষ করা যায় (বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত) সেহেতু বিতর্কিত বিষয়টির সত্যতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হতে পারে।
অপর সুপারিশে বলা হয়, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগপত্র জোর করে আদায় ও সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি আইন সিদ্ধ হয়নি বিধায় তিনি স্বপদে বহাল আছেন বলে বিবেচিত হতে পারে।
এই কমিটির তদন্তের ভিত্তিতেই শ্যামল কান্তিকে স্বপদে পুনর্বহালের পাশাপাশি ওই স্কুলের পরিচালন পর্ষদ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
গত ১৯ মে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছিত করার আগে ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, প্রাথমিক তদন্তে তার সত্যতা মেলেনি।