খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৮ মে ২০১৬: রাজধানীর ব্যস্ততম একটি এলাকা মগবাজার ও মৌচাক। প্রতিদিন এই রাস্তাটিতে হাজারো মানুষের পথচলা। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের উড়াল সড়কের পিলার উঠতে দেখে যানজট মুক্তির আশা জাগালেও আলোচিত এই ফ্লাইওভারে অন্য নাম এখন ভোগান্তি। আর সম্প্রতি শুরু হওয়া বৃষ্টিতে রাস্তার হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় এই ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুক্রবার সকালে শান্তিনগর থেকে মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার ও সাতরাস্তা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে জন দুর্ভোগের ভয়াবহ চিত্র। মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়াল সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজের জন্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যান চলাচল। এই রাস্তার দু’পাশে ফুটপাতগুলোতে বসেছে হকার। এছাড়া নির্মাণ কাজের বিভিন্ন সামগ্রী রাখায় পথচারীদের চলাচলে বিঘœ ঘটছে।
এমনিতেই বৃষ্টিতে পানি জমে সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক, তার ওপর শান্তিনগর এলাকায় চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তা খুঁড়ে করা হয়েছে মাটির উঁচু ঢিবি। এই এলাকায় তাই যানজট ও জলজট নিত্যদিনের চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরে চলা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ ও গভীর গর্তের। আর যত্রতত্র পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রীতে সংকুচিত হওয়া সড়কের যানজটে নাকাল রাজধানী বাসী। একই অবস্থা মালিবাগ মোড়েও। আর এই দৃশ্যটা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে মৌচাক মোড়ে এসে। মৌচাক থেকে রামপুরা ও মগবাজার দুই দিকের সড়ক খানাখন্দে এতই বেহাল যে গাড়ি চলছে হেলে দুলে।
রিকশা নিয়ে মগবাজার থেকে মালিবাগের দিকে আসছিলেন চালক মো. আজিজ। মাঝ রাস্তায় গর্ত আর পানি জমে থাকায় গর্তে পড়ে উল্টে গেছে রিকশাটি। আজিজের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, কি কমু বিপদে আছি। বুঝবার পারতাছেন না। সামনেই তো দেখলেন রিকশাডা কেমনে উল্টাই গেল।
এ ধরণের ঘটনা এই রাস্তায় এখন নিত্য দিনের সঙ্গী বলেও জানান আজিজ।
ভোগান্তরি নাম মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার ২মালিবাগ মোড়ে দাড়িয়ে কথা হয় বলাকা বাসের ড্রাইভার মফিজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, কি কইমু। সরকার তো ফ্লাইওভার বানাইতেছে না আমগো শাস্তি দিতাছে। আগে তাও বৃষ্টি আছিল না। তাই কোনো মতে পারাপার হওয়া যাইতো। কিন্তু এহন দেহেন বৃষ্টির তাণ্ডব বাড়ছে। এই রাস্তায় গাড়ি নিয়া আসা মানে নিজের বিপদ ডাইকা আনা।
ড্রাইভার আজিজের সঙ্গে কথা বলার পর যাওয়া হয় মৌচাক মার্কেটের সামনে। সেখানে দাড়িয়ে আছেন এক নারী। নাম মোসলেমা আকতার। তিনি সায়েদাবাদ যাবেন। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, আমার বাসা মৌচাকে। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট যাওয়ার জন্যে সায়দাবাদ যাব। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি কোনো গাড়িতে উঠতে পারছি না। তার উপরে রাস্তায় পা ফেলার কোনো উপায় নেই। সব জায়গায় হাঁটু সমান পানি।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত দ্রুত এই ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা। আমরা খুব সমস্যায় আছি। এর প্রতিকার চাই। এটা তো রাস্তা না। খালে পরিণত হয়েছে।
সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুরগামী বলাকা সার্ভিসের যাত্রী আমিন হাসান বলেন, আমার বাসা মহাখালী। অফিস মতিঝিলে। মহাখালী থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত আসতে যে সময় খরচ হয় তার চেয়ে তিনগুণ সময় লাগে মালিবাগ মোড় পাড় হতে।
প্রতিদিনের এই ধকল সহ্য করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় মালিবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই রাস্তায় আগে থেকেই যানজট বেশি। তবে এখন বৃষ্টি আর ফ্লাইওভারে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, জন সাধারণের দুর্ভোগ কমাতে মগবাজার থেকে মৌচাক ফ্লাইওভারে কাজ হাতে নেয় সরকার। তবে সম্প্রতি সময়ে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে মগবাজার থেকে রমনা থানার সামনে দিয়ে ফ্লাইওভারটির আরেক অংশ খুলে দেওয়ায় দুর্ভোগ অনেকটা কমে এসেছে।
এ বিষয়ে এলজিইডি’র তত্ত্বাবধায়ক ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, ফ্লাইওভারে কাজ চলার কারণে জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে সত্যি। কিন্তু এর কাজ শেষ হলে সুবিধাও তারাই ভোগ করবেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নাভানা-সিমপ্লেক্সের করা সাতরাস্তা থেকে মগবাজার অংশের কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
বৈদেশিক সহায়তা ও দেশীয় অর্থায়নে নির্মিতব্য সোয়া আট কিলোমিটার বিস্তৃত মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দু’টি প্যাকেজের (ডব্লিউ-৫ ও ডব্লিউ-৬) কাজ করছে চীনের মেটরোলজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভার সিজ কোম্পানি ও দেশি তমা কনস্ট্রাকশন। অন্য প্যাকেজের (ডব্লিউ-৪) কাজ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও দেশি নাভানা কনস্ট্রাকশন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইওভার প্রকল্পের ২৬৫ টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫৫টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। সর্বসাকুল্যে বর্তমানে ডব্লিউ-৪ (সাতরাস্তা-রমনা থানা) প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৭২ শতাংশের কিছু বেশি ও ডব্লিউ-৬ (বাংলামোটর-মৌচাক) প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশের মত। তবে প্রকল্পের সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ডব্লিউ-৫ (মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ) এর কাজ হয়েছে অনেক কম। মাত্র ৩১ শতাংশ। পরিবর্তন ডটকম