Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24খোলা বাজার২৪, বুধবার, ০১ জুন ২০১৬: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থ বছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করবেন। নতুন বাজেটের বিভিন্ন দিক, পুর্বাপর বাস্তবতা ও ভল-মন্দের স্বরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনসহ সরকারের করণীয় ও সর্তকতা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ।
প্রশ্নকর্তা : অর্থমন্ত্রী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বাজেটের এই আকার আপনার কাছে কি উচ্চাভিলাসী বলে মনে হয়?
আবু আহমেদ : অর্থবছরের শুরুতে উচ্চাভিলাসী বাজেট দিলে কি হবে! পরেতো বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। মাঝপথে এসে আবার বাজেট সংশোধন করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটও কিন্তু সংশোধন করে কমানো হয়েছে। অর্থবিলে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঘোষণা দিলেও আসলে এতবড় বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এত টাকা কোথা থেকে আসবে? বাজেটে আকারের চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সম্পদের জোগান। হয়তোবা কিছু রাজস্ব আদায় বাড়বে, বিদেশী ঋণ, ডিপোজিট থেকে অর্থায়নও হয়তো কিছু বাড়বে। কিন্তু বাজেটের আকারের সমান তো আর বাড়বে না।
প্রশ্নকর্তা : বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবছর বাজেটের আকার কেন বাড়ছে?
আবু আহমেদ : আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে যতবেশি অর্থের যোগান হয় সরকার ততবেশি অর্থ ব্যয় করে। এ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আবার অপচয় ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে অর্থের যোগান বাড়লেই বাজেটের আকার বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বর্তমানে সরকারী ব্যয় যদি দক্ষতার সঙ্গে করা হতো, নির্দিষ্ট সময়সীমা মানা হতো, দুর্নীতি কম হতো তা হলেও বাজেটের আকার বাড়ানো নিয়ে একটা যুক্তি উপস্থাপন করা যেত।
সুতরাং বাজেট বড় হলেই আসলে আমরা খুশি হতে পারি না। হয়তোবা সরকার খুশি হতে পারে। কারণ সরকারের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এর সুফল ভোগ করেন। ব্যয় বাড়লে তারা নানা ফাঁক ফোকর ব্যবহার করে এর থেকে সুবিধা নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ক্ষেত্র ও প্রকল্পে বড় বড় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যায়। কিন্তু এই বরাদ্দের অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়। দুর্নীতি আর সময়সীমা যে মানা হয়না তাতো দৃশ্যমান। সুতরাং বাজেটের আকার বড় হলেও জনগণের কল্যাণ প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রশ্নকর্তা : বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে প্রতিঘন্টায় রাজস্ব বোর্ডকে প্রায় ২৪ কোটি টাকা কর আদায় করতে হবে। আপনার দৃষ্টিতে এটা কতটুকু বাস্তব সম্মত?
আবু আহমেদ : এতবড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। চলতি অর্থবছরও রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না বলে ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। সামনের অর্থবছরেও এটাই করা হবে। অর্থমন্ত্রনালয় হয়তো বছরের শুরুতে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিবে। কিন্তু বছরের মাঝপথে তা সংশোধন করে আবার কমানো হবে।
প্রশ্নকর্তা : রাজস্ব ঘাটতি বা লক্ষ্যমাত্রা পুরণে ব্যর্থতার কারণ কি?
আবু আহমেদ : আসলে দেশের রাজস্ব আদায় নির্ভর করে বিনিয়োগের উপর। দেশের অধিকাংশ রাজস্ব আসে কর্পোরেট ট্যাক্স খাত থেকে। এটা সরাসরি বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত। বিনিয়োগ না বাড়লে রাজস্ব আদায় বাড়বে না। মোদ্দাকথা রাজস্ব আদায়ের সফলতা-ব্যর্থতা পুরোটাই বিনিয়োগের উপর নির্ভর করছে। আয়কর বলেন, ভ্যাট বলেন, আমদানি রফতানি বলেন, সবগুলোই ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এছাড়া বাংলাদেশে মাত্র ১৮ লাখ মানুষের ই-টিআইএন রয়েছে। এরমধ্যে কর দেয় মাত্র ১১ লাখ মানুষ। বড় করদাতারাও ঠিক মতো কর দেয় না। এটাও রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। পরিস্থিতি উত্তোরণে কর ফাঁকিবাজদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
প্রশ্নকর্তা : উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় রাজস্ব বাজেট অনেক বেশি দেওয়া হয়। এর কারণ কি?
আবু আহমেদ : বাজেটে এডিবির সাইজ বড় হলে অনেকে খুশি হয়। ব্যাক্তিগতভাবে আমি আসলে খুশি হতে পারি না। কারণ এডিবির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও বড় হতে থাকে। ঋণ করে অর্থ এনে এর সঠিক ব্যবহার হয় না।
এটা ঠিক রাজস্ব বাজেট অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ সরকারের কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো কাজ না থাকলেও তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অনেককে আবার যোগ্যতা বিবেচনায় না নিয়েই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগই আনডার অ্যাপ্লয়। এ কারণে রাজস্ব বাজেটের উপর বেশি চাপ তৈরি হচ্ছে। তা না হলে বিশাল অংকের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন ভাতা আসবে কোথা থেকে?
অথচ একসময় রাজস্ব বাজেটের চেয়ে উন্নয়ন বাজেট বেশি হত। এরপর তা প্রায় সমান সমান হয়। বর্তমানে রাজস্ব বাজেট উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি হয়। মূল বাজেটের তিন-চতুর্থাংশের সমান রাজস্ব বাজেট করা হচ্ছে। ৪ ভাগের মাত্র ১ ভাগ উন্নয়ন বাজেট করা হয়। সরকারী প্রশাসনের অধিক লোকবলের বেতনভাতা পরিশোধ করতে গিয়ে রাজস্ব বাজেট বাড়ানো হচ্ছে। আর রাজস্ব আসছে সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের থেকে ট্যাক্স আদায় বাবদ। তারা কত দিবে। ট্যাক্স দেওয়ারও তো একটা সীমা আছে। জনগণকে করভার থেকে মুক্ত করতে ছোট সাইজের সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
জনকল্যাণে বাজেট আমরা তখনই বলবো যখন রাজস্ব বাজেটের তুলনায় উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়বে। উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়লে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সরকারী কর্কমর্তাদের বেতন বাড়ানোর এখন কোনো দরকার ছিল না। বেতন বাড়ানোর কারণে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি প্রয়োজন হবে সামনের বছর। এই টাকাতো জনগণ থেকে ট্যাক্স বাবদ আদায় করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ভাগ্য ভাল যে তেলের মূল্য কমেছে। এ খাতে সরকারকে আর ভর্তূকি দিতে হচ্ছে না। এটা না হলে রাজস্ব বাজেটের উপর আরো চাপ পড়তো।
প্রশ্নকর্তা : সরকার ও দেশের অর্থনীতি কি সমান তালে বেড়ে উঠছে? বাজেটে কি তারই প্রতিফলন ঘটছে?
আবু আহমেদ : মোটেও না। দেশের অর্থনীতির তুলনায় সরকার অনেক বড় হয়ে গেছে। একসময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অনেক ঋণ দিত। তখন বিশ্ব ব্যাংকের একটা চাপ ছিল ‘সাইজ অব দ্যা গভর্নমেন্ট, ছোট হতে হবে। এখন আর কেউ বলার নেই। এখন দেশে বিদেশে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলে না।
এই কারণে আমাদের অর্থনীতির তুলনায় সরকারের সাইজ অনেক বড় হয়ে গেছে। অর্থনীতির তুলনায় দেশে সরকারী লোক বেশি অর্থাৎ দেশের মাথা ভারী হয়ে গেছে। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ জনগণ। কারণ জনগণের ট্যাক্স দিয়ে সরকারকে পালন করতে হয়।
একটা কথা আছে ‘স্মল গভর্নমেন্ট ইজ আ গুড গভর্ন্যান্স। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এটা গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলা হয়। এমনকি ভারতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারও এই নীতি মেনে সরকার গঠন করেছে। এটা বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে কিছুটা মানা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান তা হারিয়ে গেছে। বর্তমানে সরকারের সাইজ বড় হচ্ছে সেই সঙ্গে সুশাসনও হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দুর্নীতিও বাড়ছে। সরকারের আকার যে হারে বাড়ছে ও বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির যে নাম অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এভাবে চললে তা থেকে সহজে বের হওয়া যাবে না।
প্রশ্নকর্তা : বাজেটে কোন খাতে বেশি বরাদ্দ করা উচিৎ বলে আপনারা মনে করেন?
আবু আহমেদ : শিক্ষা খাতে বেশি বরাদ্দ রাখলে ভাল হয়। যদিও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের প্রায় সবটুকুই বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয়ে যায়। বাস্তবমুখী শিক্ষার জন্য কোন ল্যাবরেটরি স্থাপন বা শিক্ষাক্ষেত্রের অবকাঠামো উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহার হয় না। যার কারণে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের সুফল শিক্ষার্থীরা পায় না।
উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, ১০-১৫ জন একসঙ্গে বসে দরবার করে একটা কলেজ এমপিও ভুক্ত করে নিচ্ছে। অথচ কলেজগুলোতে বছর শেষের পরীক্ষায় কোনো ছাত্র পাশ করতে পারে না। কারণ এসব কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। কিন্তু প্রতিবছর তাদের বেতন ভাতা বাবদ সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
আমাদের দেশের শির্ক্ষার্থীরা উভয় সংকটে আছে। সরকার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে শিক্ষা দিলেও এর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার প্রাইভেট সেক্টর মান সম্মত শিক্ষা দিলেও তারা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে। শিক্ষার্থিরা যাবে কোথায়!
প্রশ্নকর্তা : আসছে বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী। এটাকে কি চ্যালেঞ্জিং মনে করেন?
আবু আহমেদ : ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা আরো একটু সময় চাচ্ছেন। কারণ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অটোমেটেড যে সকল যন্ত্রপাতি দরকার তা অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই।
সরকার চাইলেই এ আইন যে কোনো সময় সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাচ্ছে আরো একটু সময় দেওয়া হোক। এটা করা হলে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ ভ্যাট বহাল চাচ্ছেন। এ বিষয়টা নতুন আইনে বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রশ্নকর্তা : বড় প্রকল্পের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এটাকে কিভাবে দেখবেন?
আবু আহমেদ : এটা অর্থমন্ত্রীর ভাল উদ্যোগ হলেও একটা কথা থেকে যায়। তা হলো আমাদের দেশে প্রকল্পের কাজতো শেষ হয় না। এর সুফল পেতে হলে নির্দিষ্ট সময় মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে ধাপে ধাপে যে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় তা পরিহার করতে হবে। পদ্মা ব্রিজের কাজ প্রথম যখন শুরু হয়েছিল তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। এরপর ১৮ হাজার, ২২ হাজার ও সর্বশেষ চতুর্থ ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন আছে মানুষের মধ্যে।
প্রশ্নকর্তা : দেশের বিনিয়োগ স্থবিরতার উত্তোরণ ঘটাতে বাজেটে কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন আছে কি?
আবু আহমেদ : বাজেটে প্রণোদনা দিতে পারে। তবে তাতেও মনে হয় খুব একটা লাভ হবে না। বিনিয়োগ পরিস্থিতির বর্তমান সংকট কাটানোর পুরো বিষয়টা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। আমাদের দেশে এখন বিভক্ত সমাজ বিরাজ করছে। আর বিভক্ত সমাজে কোনো দিন বেশি বিনিয়োগ হয় না। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা নিশ্চিত করে সবাইকে নিয়ে বসতে হবে। সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। কেউ শত্রু কেউ মিত্র কোনো যুক্তির মধ্যে পড়ে না। একটা অংশকে ধরো, মারো, কাটো পরিস্থিতি এমন হলে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কখনোই ভাল হবে না। সেই সঙ্গে অর্থপাচারও ঠেকানো যাবে না। সবার আগে প্রয়োজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নিরপেক্ষ প্রশাসন ও আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে বিনিয়োগের জন্য।
বর্তমান পরিস্থিতি হচ্ছে সরকারের সঙ্গে সখ্য থাকলে ভাল ব্যবসা করা যায়। সরকার কতজনের সঙ্গে সখ্য করবে? আর কতজনইবা ব্যবসা করবে। ‘রুল বেইজ, ব্যবসা হলে সবাই বিনিয়োগ করার সুযোগ পেত। অনেক মধ্যম মানের উদ্যোগ-উদ্যোক্তা সৃষ্টি হত। আমাদের দেশেতো তা নেই।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসও বড় একটা বিষয়। সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে সেটা দেশের সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ জনগনকে বিশ্বাস করতে হবে সরকারের দাবি সঠিক। তা হলেই বিনিয়োগ বাড়বে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে বিনিয়োগের জন্য বেরিয়ে আসবে।
এখানে আরো কিছু বিষয় আছে সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া পানামা পেপারস, সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লুট এই বিষয়গুলোর নেতিবাচক প্রভাব সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। কারণ মানুষ বিশ্বাস করে এদেশে অর্থ রাখলে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং বিনিয়োগেরতো প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্নকর্তা : বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্য নিম্নমুখী। এর কোনো সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে কি?
আবু আহমেদ : আমাদের দেশে তেলের যে দর কমানো হয়েছে তা খুবই সামান্য। সরকার পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ৩৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান পূরনের জন্য তেল বিক্রি করে ব্যবসা করছে। আরে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগই অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই অর্থ কেন মানুষকে দিতে হবে?
আমাদের পাশের দেশসমূহ ভারত, চায়না, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় তেলের দর উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়েছে। এতে করে তাদের দেশে তেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাদের দেশের অর্থনীতিও এখন চাঙ্গা। অর্থনীতিতে একটা কথা আছে- তেলের ব্যবহার বাড়লে যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।
উৎপাদন ব্যয় কমায় পণ্যমূল্যও কমতে থাকে। সুতরাং তেলের দর আরো কমানো উচিত।
প্রশ্নকর্তা : চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকার দাবি করছে। আপনার কি মতামত?
আবু আহমেদ : ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে তা আমাদের সকলের জন্য খুশির সংবাদ। তবে দেশী বিদেশী অনেক সংস্থা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে না। এখানে আসল কথা হলো সরকার অর্থ বছর শেষে যদি বলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পরে যদি আবার তা নেমে যায়, তা হলে সরকারই বিপদে পড়বে। সরকারের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে উঠবে। সুতরাং সরকারের বুঝেশুনেই জিডিপির হিসাব দেওয়া উচিত।
প্রশ্নকর্তা : খেলাপি ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকা আদায়ে বাজেটে কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন আছে কি?
আবু আহমেদ : আমি এ টাকা উদ্ধারের কোনো আলামত দেখছি না। এদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনা খেলাপি ঋণের পক্ষে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ৫০০ কোটি টাকার উপর যারা খেলাপি আছেন তাদের বিষয়ে বার বার সময় বাড়াচ্ছে। কারণ তারা বড় খেলোয়াড়। তারা ঋণের সুদও ঠিকমত পরিশোধ করে না। সুদ মাফ পেয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ৪ ব্যাংক যতদিন এদেশে থাকবে ততদিন খেলাপী ঋণের কলঙ্ক মোচন করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্নকর্তা : নতুন বাজেট কতটুকু জনকল্যাণ বয়ে আনবে বলে আপনি মনে করেন?
আবু আহমেদ : এখানে আসলে নতুন কিছু হবে না। গত বছরের বাজেটেরই একটা সংস্করণ হবে। অর্থমন্ত্রী ভুর্তকিতে বড় ধরনের বরাদ্দ দিবেন বলেছেন। এই ভুর্তকিটা আসলে কোথায় যায়। সাধারণ মানুষ এর সুফল পায় না। এগুলো সরকারের লোকসানে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যায়। জনগণের টাকা দিয়ে সরকার এগুলো লালন-পালন করে আসছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালী এই ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর মূলধন যোগান দেওয়া হয়। এর মূল কারণ এ ব্যাংকগুলোতে চুরির পথ বন্ধ করা হয়নি। চুরির পথ খোলা থাকলে যত মূলধনই দেন কুলোতে পারবেন না। বাজেটে সবার আগে চুরির পথ বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া উচিত। পরিবর্তন