খোলা বাজার২৪, রোববার, ১২ জুন ২০১৬: তাপস কুমার, নাটোর: নাটোরের বনপাড়ায় খ্রিষ্টান মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে বাড়ীর অপর ভাড়াটিয়া মনোয়ারা বেগম মনিকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। রবিবার বেলা তিনটার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল আল আমিনের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আজ সোমবার শুনানীর দিন ধার্য করে তাকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।অপরদিকে নিহত মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে নাটোর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ,বিক্ষেভ মিছিল এবং মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ, খ্রিস্টান এসাসিয়েশন এবং এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।। পরে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দরা। পাশাপাশি সকল গীর্জা ও খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীর বাড়িতে আগামী সাত দিন কালো পতাকা উত্তোলন করার কর্মসূচী দেন তারা। গত ৫জুন ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করার পর ওই দিনই বিকেলে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে খুনীদের গ্রেফতার করতে সাত দিনের আলটিমেটাম দেয় বনপাড়া খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন।এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী রোববার বেলা ৩টার দিকে নিহত সুনিল গোমেজের বাড়িতে যান এবং নিহতের স্বজনদের শান্তনা দেন।
নাটোরের গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সুনিল গোমেজ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাই তালুকদার জানান, সুনিল গোমেজ হত্যাকান্ডের পর থেকে বিভিন্ন সুত্র থেকে তাকে সন্দেহ করা হয়। পরে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তার ভাড়া বাসা থেকে মনোয়ারা বেগম মনিকে গ্রেফতার করে নাটোরে আনা হয়। আজ রবিবার বেলা তিনটার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল আল আমিনের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক আগামীকাল সোমবার শুনানীর দিন ধার্য করে তাকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
অপরদিকে সনীল গোমেজ হত্যকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বনপাড়া কেন্দ্রীয় গীর্জা প্রাঙ্গন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের বনপাড়া বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাইপাস মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে ওই মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এসময় পাশাপাশি নাটোর-ঢাকা ও নাটোর-পাবনা মহাসড়ক প্রায় ১ঘন্টা অবরোধ করে রাখা হয়। এতে বনপাড়া বাইপাস মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বনপাড়া ধর্মপল্লীর সহ-সভাপতি বেনেডিক্ট গোমেজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নাটোর শাখার সভাপতি চিত্ত রঞ্জন সাহা, বড়াইগ্রাম শাখার সভাপতি ধীরেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মিলন আই গোমেজ, ঢাকা খ্রিষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারী দীপক পিরিছ, বনপাড়া খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি বাবলু রেনেতোষ কোড়াইয়া, যুগ্ম সম্পাদক পদ্মিনী কস্তা ও বনপাড়া, জোনাইল, শ্রীখন্ডি, বোর্ণি, রাজাপুর, পাবনা জেলার চাটমোহর মথুরাপুর, ফৈলজনা খ্রিষ্টান ধর্মপল্লী থেকে আগত বিভিন্ন খ্রিষ্টান নেৃতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘু নয় সুনীল গোমেজ বাংলাদেশের একজন অতি নিরীহ ও সাধারণ মানুষ। তাকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা সহ দেশে চলমান গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত। প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে সরকারকে কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি প্রভাবমুক্ত ও কারও আজ্ঞাবহ না থেকে নিরপেক্ষভাবে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও জানান, সুনীল হত্যার পর সাত দিনের আলটিমেটাম দিলেও মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ হত্যাকারী কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। সুনীল হত্যার বিচার দাবি করে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সমাজ আজ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে এই হত্যার আসল রহস্য ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এছাড়া বেলা তিনটার বনপাড়া নিহত সুনীল গোমেজের বাড়ীতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী। এসময় তার সাথে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিহত সুনীল গোমেজের স্ত্রী কন্যা ও স্বজনদের শান্তনা দেন। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন , সুনীল গোমেজের মত একজন নিরিহ মানুষকে হত্যা একটি দুঃখ জনক ঘটনা।এই নৃশংস হত্যাকান্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, একদলীয় শাসন চলছে। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। একারণেই একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশে সন্ত্রাস মাথা চারা দিয়ে উঠছে। নিরিহ মানুষ খুনের ঘটনা ঘটছে। তিনি এ সমস্যা সমাধানে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে দেশ থেকে এসকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।
