খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬: অক্সিডেন্টালের রিগ ড্রিলিং যন্ত্রপাতি সহ জার্মান ডয়টেগ কো¤পানীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় সর্বমোট ২৯,৪৭০,৪০০ মার্কিন ডলার।রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় সর্বমোট ২৯,৪৭০,৪০০ মার্কিন ডলার।অক্সিডেন্টাল কো¤পানী তদন্ত রিপোর্ট বীমা কো¤পানীর নিকট জমা দিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতিপুরনের স¤পুর্ন টাকা আদায় করে নিয়েছে বলে এক তথ্যে জানা গেছে। তদন্ত রিপোর্টে কাজে লাগিয়ে অক্সিডেন্টাল তার ক্ষতিপুরণের টাকা আদায় করে নিলেও আমাদের গ্যাস স¤পদ, বন ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশকে প্রদানের ক্ষেত্রে নানা টাল বাহানা করে আসছে। তাদের সাথে স¤পাদিত মুল চুক্তি পিএসসি–৯৪ অনুযায়ী ক্ষতিপুরণের টাকা অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল ও শেভরন পরিশোধে বাধ্য।এছাড়া শেভরন কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতে হুইলিং চার্জের মামলায় বাংলাদেশ আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করে। এই রায়ে বাংলাদেশ শেভরনের কাছ থেকে গ্যাস পাইপ লাইনের হুইলিং চার্জ বাবদ প্রতি বছর ২ হাজার ৭শত কোটি টাকা পাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক আইনী লড়াইয়ের বাংলাদেশের ব্যয় হয় মাত্র ৫ কোটি টাকা। মাগুরছড়ার ক্ষতিপুরন আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যে, বিষয়টি ফয়সালার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে বাংলাদেশ আইনী লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।ফয়সালার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে বাংলাদেশ আইনী লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।১৯৯৭ সালের জুন মাসে স্থানটি রাতারাতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। এখনো প্রতি বছর ‘মাগুরছড়া দিবস’– ছাড়াও মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে মাগুরছড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে জনগণের সামনে আবির্ভূত হয়। ১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস। এ বছর মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ব্লো–আউটের ১৯ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন ব্লো–আউটের পর থেকেই ক্ষতিপূরণের দাবীতে দীর্ঘ আন্দোলন করে আসছে মাগুরছড়ার গ্যাস স¤পদ ও পরিবেশ ধ্বংশের ক্ষতিপুরণ আদায় জাতীয় কমিটি’’। কিন্তু ১৯৯৭– সময় থেকে মাগুরছড়ার গ্যাস স¤পদ, পরিবেশ–প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কো¤পানী অক্সিডেন্টাল–ইউনোকল–শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।ক্ষতিপূরণ মার্কিন কো¤পানী অক্সিডেন্টাল–ইউনোকল–শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।২০০৮ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল ১১ টায় লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ব্লো–আউট সংঘটিত হলে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ বৃক্ষাদিসহ একটি খাসিয়ার পান পুঞ্জি ভষ্মিভুত হয়। ভূ–তাত্বিক জরিপের ফলে অবলা বন্যপ্রাণী পালিয়ে লোকালয়ে অথবা অন্যত্র আশ্রয় নিতে গিয়ে মারা যায় অসংখ্য মেছো বাঘ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় লাউয়াছড়ার আশপাশের বাসিন্দাদের। যার ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সিসমিক জরিপের ফলে লাউয়াছড়া বন ও আশপাশের বাসিন্দাদের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকারও অধিক। এমনি ভাবে ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন মার্কিন কো¤পানি অক্সিডেন্টাল কূপ খনন কালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে মার্কিন কো¤পানী শেভরন ত্রিডি ভুতাত্বিক জরিপ চালিয়ে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। সংরক্ষিত বনে এ ধরণের জরিপ নিষিদ্ধ থাকলেও শেভরনকে তেলগ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি দেওয়ায় জরিপ কাজের ফলে অসংখ্য বন্যপ্রানী লোকালয়ে বেরিয়ে যায়। শেভরনের সিসমিক জরীপকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী ও পাখি বিভিন্ন এলাকার মানুষের হাতে ধরা পড়ে। ত্রিমাত্রিক ভূ–তাত্বিক জরিপ চলার সময় লাউয়াছড়া বনে হঠাৎ আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাৎক্ষনিক তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছিল এবং এতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হযেছিল। জেরিন চা বাগান ও মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের জামে মসজিদ সংগ্লন্ন প্রায় ১০০ গজ দুরত্বে ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বোমা বিস্ফোরন ঘটায় ভূ–ক¤পনের ফলে জামে মসজিদ সহ গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক কাচা–পাকা ভবনে ফাটল ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন অংশে জরিপ কাজে নিয়োজিত শত শত মানুষ ও জরিপ কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনের শব্দের কারণে লাউয়াছড়া বন থেকে হরিণসহ বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। ভূ–তাত্বিক জরিপের ফলে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রানী ভীত হয়ে পালিয়েছে। এসময় অনেক প্রাণী লোকালয়ে যাওয়ায় মারাও গেছে। ফলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রমের পরিবর্তে বন্যপ্রাণীর বিপদজনক স্থানে পরিণত হয়। বিপন্ন হয় লাউয়াছড়ার জীব বৈচিত্র আর বন্যপ্রাণী। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছিল আজও তা পূরণ হয়নি। বছর ঘুরে এই দিনটি এলে শ্রীমঙ্গলবাসী সেই বিভিষীকাময় গ্যাস বিস্ফোরণের দিনের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। অথচ তেল গ্যাসে সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগের অন্যতম ৩টি গ্যাসকূপে ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আজও পায়নি সিলেটবাসী। বিভিন্ন সরকারের আমলে এ ক্ষতিপূরনকে পাশ কাটিয়ে বার বার বদল হয়েছে বিদেশী কো¤পানীর নাম। কিন্তু ক্ষতিপূরণের বিষয়টি থেকে গেছে অন্তরালে। নানা প্রতিকী কর্মসূচী আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে মাগুরছড়া দিবস।দেশের মোট ৭৩টি কূপের মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৩৮টি কূপ। সিলেট বিভাগের তেল গ্যাস সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন যে বিস্ফোরন ঘটে তার মাত্রা ছিল ভয়াবহ। তৎকালীন সময়ে মার্কিন তেল গ্যাস কো¤পানী অক্সিডেন্টাল ছিল এই কূপ খননের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই স্থানে গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতি হয় ৭৩‘হাজার কোটি টাকা। মাগুরছড়া মূল গ্যাস জোনের আয়তন ছিল ৫ কিলোমিটার। এ কূপে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটেরও অধিক গ্যাস মজুত ছিল। যার বাজার মূল্য ছিল ৩৬‘হাজার ৪‘শ কোটি টাকা। পাশাপাশি এই বিস্ফোরণে প্রাকৃতিক ও জীব বৈচির্ত্যে সমৃদ্ধ অরণ্যের ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকার ও মাগুরছড়াবাসীকে কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে অক্সিডেন্টাল হাত বদল হয় ইউনোকল নামে। একটা সময় সেই দাবী পরিশোধে সোচ্চার হয়ে উঠে মাগুরছড়ার গ্যাস স¤পদ ও পরিবেশ ধ্বংশের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি, তেল–গ্যাস–বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য বাম রাজনৈতিক দল ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সেই দাবীকে উপেক্ষা করে আবার কো¤পানী বদল হয়। যা এখন শেভরন নামে পরিচিত।দাবীকে উপেক্ষা করে আবার কো¤পানী বদল হয়।মাগুরছড়া বিস্ফোরণের কয়েক বছর যেতে না যেতে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারী সিলেটের সুনামগঞ্জের টেংরাটিলার গ্যাসকূপে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ। বিদেশী বহুজাতিক তেল গ্যাস কো¤পানী নাইকো ছিল এই গ্যাস কূপের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। টানা এক মাস গ্যাস জ্বলে। যার পরিমান ছিল ১০ বিলিয়ন ঘনফুট। এ কূপে মজুত ছিল ৩৭৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে উত্তোলন যোগ্য গ্যাস ছিল ৯০ বিলিয়ন ঘনফুট। সেখানেও পরিবেশের ক্ষতি হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।এদিকে তেল গ্যাস খনিজ স¤পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি জানায়, ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন সিলেটের ১৪ নম্বর ব্লকের সুরমা বেসিনে মাগুড়ছড়ায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির রক্ষণশীল হিসাবেও গ্যাস স¤পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া পরিবেশ এর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদের এবং পুরোটা পরিমাপযোগ্য নয়। ১৯৯৯ সালে ইউনোক্যাল নামে আরেকটি মার্কিন কো¤পানির সাথে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। মাগুড়ছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোন ফয়সালা না করেই পরবর্তীকালে ইউনোক্যাল–এর ব্যবসা গ্রহণ করেছে আরেকটি মার্কিন কো¤পানি শেভরন। এখন এই কো¤পানির কাছ থেকেই আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে।টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুটো বিস্ফোরণ ঘটে। কানাডীয় কো¤পানি নাইকোর অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হলে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন মতে তার পরিমাণ ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স–নাইকো’র রিপোর্ট মতে ২৬৮ বিসিএফ।বাপেক্স–নাইকো’র রিপোর্ট মতে ২৬৮ বিসিএফ।গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুড়ছড়া ও ছাতক টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুতের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় শুধুমাত্র গ্যাস স¤পদের ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কো¤পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদে জীববৈচিত্র বিপর্যয়সহ পরিবেশ ক্ষতি বিবেচনা করি, যদি মানবিক ক্ষতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা করি, যদি এই গ্যাস স¤পদের অভাবে বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটের হিসাব যোগ করি তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। উল্লেখ্য যে, এই দুটো ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছে তা দিয়ে বর্তমান হিসাবে প্রায় দুই বছরে সারাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল।প্রায় দুই বছরে সারাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল।মার্কিন কো¤পানি শেভ্রন ও কানাডীয় কো¤পানি নাইকোর কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো তাদেরকে নানারকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা স¤প্রসারণ করা হচ্ছে। আমরা এই ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করে তা জ্বালানী খাত সহ দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করতে জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এই অর্থ আদায়ে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ নেবার দাবি জানাচ্ছি।