খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০১৬: বিএনপি নেতা ড. ওসমান ফারুক উধাও। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত শেষে মামলা হবে এমন ঘোষণার তিন দিন পর থেকে জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীর আর কোনো হদিস নেই। কেউ বলছেন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ বলছেন, দেশেই আত্মগোপন করে আছেন বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পদে কাজ করা সাবেক এই অর্থনীতিবিদ। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছেও ওসমান ফারুকের কোনো খোঁজ নেই।
অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে দলীয় নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক দিকগুলোর সঙ্গেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল ওসমান ফারুকের। বিশেষ করে শমসের মবিন চৌধূরীর পদত্যাগ ও রিয়াজ রহমানের আহত হওয়ার পর পররাষ্ট্র উইং-এ ওসমান ফারুকের ওপর বিএনপির নির্ভরশীলতা বেড়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় গত ৪ মে ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়। তদন্ত শেষে মামলা হওয়ার কথা। এই ঘটনার তিন দিন পর্যন্ত ওসমান ফারুক তার গুলশানের বাসাতেই ছিলেন। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও ব্যবহার করতেন। সে সময় তিনি দাবি করেছিলেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এরপর ওসমান ফারুকের আর কোনো হদিস কেউ দিতে পারছেন না। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা সম্পর্কে জানতে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে কেউ কিছু জানাতে পারেননি। কিছুদিন আগে বৈদেশিক একটি নম্বর থেকে একবার ফোন করলেও এখন সে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। ওসমান ফারুকের গুলশানের বাসায় গেলেও তার বাসার নিরাপত্তা কর্মীরা কোনো কথা বলতে চাননি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দুজনই জানান, তারা নিজেও ওসমান ফারুকের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। মাহবুবুর রহমান বলেন, শুনেছি, দলের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতাই ওসমান ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
ওসমান ফারুকের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিতে যোগ দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন ওসমান ফারুক। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান রাজনৈতিক অঙ্গনে ওসমান ফারুকের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। ফজলুর রহমানের কাছে ওসমান ফারুকের খোঁজ জানতে চাইলে তিনি পাল্টা অনুরোধ করেন- তাদের নেতা সম্পর্কে কোনো খোঁজ পেলে জানানোর জন্য।
বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনপির নতুন স্থায়ী কমিটির সম্ভাব্য তালিকায় ওসমান ফারুকের নাম ছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক হতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে তৃতীয় এক পক্ষের সহায়তায় ওসমান ফারুক কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দিয়েছেন বলে বিএনপির ভেতর জোর আলোচনা রয়েছে।