খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বিভিন্ন দেশে ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪টি নতুন মিশন খোলা হয়েছে।
আজ সংসদে সরকারি দলের সদস্য সেলিনা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ১৩ মেয়াদে ১০টি এবং ১৪ সালে বাকী ৪টি মিশন খোলা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এছাড়াও সকল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় নাইজেরিয়ার আবুজা, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স ও রুমানিয়ার বুখারেস্ট-এ খুব শিগগিরই মিশনের কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়াও ৭টি নতুন মিশন চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো হলো- আফগানিস্তান (কাবুল), সুদান (খার্তুম), সিয়েরালিওন (ফ্রিটাউন, ভারত (গুয়াহাটি ও চেন্নাই), অস্ট্রেলিয়া (সিডনী) ও কানাডা (টরন্টো)।
মাহমুদ আলী বলেন, মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের অভিন্ন পানি বন্টন চুক্তি বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমান্তে হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ, সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ আরো সহজতর করাসহ অন্যান্য সকল ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায় নিশ্চিতকরণ, মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান, বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, এশিয়ান হাইওয়েতে সংযুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ এবং নেপাল ও ভুটানের সাথে অভিন্ন পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশী শ্রম ও পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং প্রতিষ্ঠিত বাজার সুসংহতকরণ, জন কূটনীতির যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা, প্রবাসী বাংলাদেশীদের উন্নততর কনস্যুলার সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন আলোচিত ইস্যু যেমন- জলবায়ু পরিবর্তন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি), অভিবাসন, কূটনীতি, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা ইত্যাদি আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হচ্ছে।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, এমডিজি-তে বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার পর এসডিজি-এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে সহায়তা করা, উন্নততর দেশগুলোর সাথে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা ‘টেকনোলজি ট্রান্সফার’র চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ চীন ও জাপানের সাথে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বিসিআইএম এবং বিআইজিবি’র লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগে কার্যকর ভূমিকা পালন করে অসাছে। বাংলাদেশের পণ্য ও শ্রম বাজার সম্প্রসারণ এবং প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি নতুন নতুন রপ্তানি ক্ষেত্র সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর সকল দেশে অদক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি দক্ষ ও পেশাজীবী জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ তৈরি এবং সকল প্রবাসীর সব ধরনের কনস্যুলার সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে এ সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে এবং বিদেশস্থ মিশনসমূহে জনবল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ড এখন বহুমাত্রিক। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সমুন্নত করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য একটি সমন্বিত, কার্যকর ও বেগবান পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা এবং সরকারের গৃহীত রূপকল্পের আলোকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি ও তৎপরতা অধিকতর দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।