Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

pic-hospitalখোলা বাজার২৪, বুধবার, ২২ জুন ২০১৬: আব্দুস সালাম, মুন্সীগঞ্জ: জনবল সংকটে মুন্সীগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ডাক্তারদের না পাওয়া গেলেও তাদের চেম্বারে পাওয়া যায়।তাদের চেম্বার পান- সিগারেটের দোকানের মতো ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে।অনিয়ম আর দূর্নীতি এখানে নিয়ম।সংবেদনশীল এই বিষয় নিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছে। অথচ সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের মালিকরা চিকিৎসার নামে রোগীদের নিয়ে গলাকাটা ব্যবসা করছে। তাদের নানা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে গ্রামের গরীব মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন।সরকারী হাসপাতালগুলোতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কটে জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার অভাব। সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ২৯৫ টি পদের বিপরীতে বর্তমানে মাত্র ২২০ জন চিকিৎসক রয়েছে। পদ শুন্য রয়েছে ৭৫ টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে অধিকাংশ ডাক্তার থাকেনা। থাকেন ঢাকায় কিংবা মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে। জেলা সদর হাসপাতালে ২২ টি পদের বিপরীতে ডাক্তার মাত্র ২২জন। সকাল থেকে দুপুর ২টার পর হাসপাতালে আর কোন ঢাক্তার থাকেনা। পরদিন সকালে এসে ভর্তি রোগী দেখেন। বিকাল ৫ টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত একজন ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার থাকেন। এতে করে গুরুত্বর রোগীদের ঢাকায় রেফার্ড করেন ডাক্তাররা। তাছাড়া ভর্তি রোগীর অবস্থার বেগতিক হলে ঢাকা কিংবা ক্লিনিকে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। ২ টি সিনিয়র স্টাফ নার্স পদ খালি আছে শুন্য বহু বছর ধরে। মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট ডাক্তাররা সকালে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ড রাউন্ড দিয়ে ৭০% কাজ শেষ করেন। পরে বহিঃ বিভাগের রোগীদের নামমাত্র দায়সারা চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন বলে অভিযোগ হাসপাতালে আসা রোগীদের। হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটের কারনে সিভিল সার্জন তার বিশেষ ক্ষমতা বলে উপলোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রেষনের মাধ্যমে এনে হাসপাতালের বহিঃ বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডাক্তার সংকটের কারনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্তএকজন ডাক্তার গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী দেখেন। এতে করে রোগীরা তাদের কাংক্ষিত সেবা পাচ্ছেনা। গত- বিএনপির আমলে ২০০৬ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়, কিন্তু জনবল রয়ে গেছে ৫০ শয্যার হাসপাতালের মতোই। অথচ ৫০ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল থাকার কথা তারও অর্ধেকের কম রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তিনটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার মধ্যে একটি এ্যাম্বুলেন্স কোনমতে ঠিকঠাক করে ড্রাইভার জসিম চালায়। বেশীর ভাগ সময়ই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে।একটি মাত্র এ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের ড্রাইভার মনির এবং আতাউর এ দু”জনে ভাগাভাগি করে একটি এ্যাম্বুলেন্স চালায়।একজন চালালে বাকী ২ জন বেকার সময় পার করেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিভিল সার্জনের একান্ত ড্রাইভার মোঃ মোশারফ হোসেন তাকওয়া নামের দুটি বেসরকারী এ্যাস্বুলেন্স হাসপাতালের রোগীদের পরিবহন করেন। রোগীদের ঢাকা নিয়ে যেতে বেসরকারী এ্যাস্বুলেন্সগুলো রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে যেভাবে পারছেন হাতিয়ে নিচ্ছেন বাড়তি টাকা।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী আব্দুল্লাহ জানান,হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে ব্যাপক নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। গেটে কোন দারোয়ান না থাকার কারনে দিনে রাতে দেদারছে বহিরাগত লোক ঢুকে পরছে ওয়ার্ডে। প্রতিনিয়ত ওয়ার্ডের ভিতর রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা চুরি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, আমরা চরম নিরাপত্তাহীতায় আছি বিশেষ রাত্রীকালীন সময়ে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। নার্স সংকট রয়েছে এ কারনে শিক্ষানুবিশ ছাত্রীদের দিয়েই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, রাতে ওয়ার্ডে হুট করে বহিরাগত লোক ঢুকে পরে এতে শিক্ষানবিশ নার্সরা রাতেও ডিউটি করতে ভয় পায়।অনেক সময় পাগল, নেশাগ্রস্থলোকও ওয়ার্ডে ঢুকে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরন করে। সিনিয়র নার্সদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই।বেসরকারী এ্যাস্বুলেন্স মালিক মোঃ মোশারফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সরকারী হাসপাতালের সরকারী এ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার সমান ভাড়া নিচ্ছি। বেশী ভাড়া কখনও নিচ্ছিনা রোগীদের কাছ থেকে।
সিভিল সার্জন ডাঃ শহিদুল ইসলাম বলেন,হাসপাতাগুলোতে ডাক্তার সংকট আছে ।তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে ডাক্তার সংকট কেটে যাবে সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।নিরাপত্তার অভাব আছে কিন্তু হাসপাতালে নাইট গার্ড ও দারোয়ানের কোন পোষ্ট নেই।তাছাড়া বাকী যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।