খোলা বাজার২৪, রোববার, ১০ জুলাই ২০১৬: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অবস্থিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পাহাড় ধ্বসের ফলে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকি এড়াতে ঈদ আনন্দে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশের আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, ভূমিক¤প, ঝড়-তুফানে প্রকৃতি রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। কয়েক শত বছরের পুরনো পাথরঘেরা পাহাড় মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা নিকেতন বড়লেখার মাধবকুণ্ডে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে গত ১৪ জুন রাতে । প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বাংলাদেশের সববৃহৎ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে অবিরাম ঝর্ণাধারা আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রটি প্রকৃতির রুদ্র-রোষে পড়েছে। ১৪ জুন রাতে দুই শ’ ফুট উপর থেকে বিশাল পাথরের কয়েকটি খণ্ড ধ্বসে পড়ে ঝর্ণাধারায়। উপর থেকে টিলা ধ্বসে পড়ে মূল ঝর্ণার বামপাশে। এদিকে, মূল প্রবেশদ্বার থেকে ঝরণায় যাওয়ার সরু পথে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অবিরাম ধারা শব্দ সৃষ্টি করছে মায়াময় পরিবেশের। প্রকৃতি যেনো বর্ণনার উপাচার নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। পর্যটকদের জন্য উৎকৃষ্ট পর্যটন কেন্দ্র এ জলপ্রপাতটি। মায়াময় পরিবেশের টানে ঈদ আনন্দে উপচে পড়েন পর্যটকরা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের ঈদে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এ পাহাড়ি জলকন্যা সৌন্দর্য্যপিপাসু ও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে টানছে। জেলার বড়লেখা উপজেলার ৮নং দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গৌড়নগর মৌজায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদের ছুটিতে নারী-পুরুষ, শিশু ও বিদেশি পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অঝোর ধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এর পরিচিতি প্রকাশ পায়। জলপ্রপাত এলাকায় জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেস্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রেঁস্তোরা। বড়লেখায় স্থাপিত দেশের প্রথম ইকোপার্ক, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, আশপাশ এলাকার চা ও কমলা বাগান, পাহাড়ি টিলা আর হাকালুকি হাওর দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের দিন দিন কাছে টানছে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান- এ মৌসুমে এ অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরের শুরুতে দু’দফা ভূমিক¤প, ঝড়-তুফান, জলবায়ু ও আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন এসব কারণে রাস্তায় ফাঁটল ও পাহাড়ে ধ্বস নেমেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, বনবিভাগসহ একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই মুহূর্তে কিছু করার নেই।শীত মৌসুমে মাধবকুণ্ডের শ্রী বৃদ্ধির জন্য প্রজেক্ট করা হবে। এখন ইজারাদারদের বলা হয়েছে, তারা যেনো সংস্কার করেন। এবারের ঈদে পর্যটকদের উপচেপড়া ঢল কিভাবে সামাল দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান- সতর্কতা অবলম্বন করে পর্যটন পুলিশের মাধ্যমে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্ট করছি। এদিকে পাবনার সিরাজগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক আবু সাঈদ জানান- আমি আগে এখানে বেড়াতে এসেছিলাম- তখন খুব সুন্দর লাগতো। এখন সেই সুন্দর নেই এবং ভয় লাগছে পাহাড় ধ্বসের এ দৃশ্য দেখে। আরেক পর্যটক রিয়াজ জানান, ১৪ জুন রাতের বেলা এ ঘটনা ঘটেছে; যদি দিনের বেলা ঘটতো, তাহলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারতো। এ মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ আগাম বৃষ্টি হওয়াতে ধ্বস নামতে পারে। স্থানীয় পর্যটক মনিরুল ইসলাম রিপন জানান, ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এখানে এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি ভয়ঙ্কর, এতো বড় পাথরের খণ্ড খসে পড়েছে। এ বিষয়ে উপ-বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রাজেশ চাকমা একই মন্তব্য করে জানান- মাধবকুণ্ডের সৌন্দর্য্য পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে। বিষয়টি বনবিভাগের একার নয়। আমরা প্রজেক্ট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। তাই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্কে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।