খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০১৬: রাজশাহী : রাজশাহীর তানোর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের অফিস সহকারী আসাদুল ইসলাম মুজিব নগর সরকারের ভূয়া কর্মচারী (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে প্রায় ২৫ বছর ধরে চাকরি করে সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১১ জুলাই তরিকুল ইসলাম বাদি হয়ে আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব এবং দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ওদিকে ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে আসাদুল বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাঁপে ব্যস্ত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদের মাধ্যমে চাকরি গ্রহণের পর থেকে আসাদুল ইসলাম ঘুষ-দূর্নীতি ও ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে স্ত্রী-কন্যাসহ নামে বে-নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। রাজশাহী মহানগরীর নতুন হড়গ্রাম ডিঙ্গাডোবা গীর্জার পূর্বদিকে প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল আলীশান বাড়ি করেছেন। স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে এফডিআর ও কোটি কোটি নগদ অর্থ সঞ্চিত রেখেছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মেয়েকে প্রশাসন ক্যাডারে (এসিল্যান্ড) চাকরি নিয়ে দিয়েছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলায় বর্মরত রয়েছেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে জামাইকে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন। তিনি চঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মেয়ে জামাইও ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যর প্লট কিনেছে। এছাড়াও রাজশাহী ও বগুড়ায় বিপুল পরিমান সম্পত্তি ও বাগান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মাত্র ১২ বছরের আসাদুল ইসলাম জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া মুজিব নগর সরকারের কর্মচারি (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে আসাদুল ইসলাম প্রায় ২৫ বছর ধরে নির্বিঘেœ চাকরি করে যাচ্ছে। এদিকে এসব অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিকার, তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, পিআরএল ও পেনশন বাতিল, ২৫ বছর ধরে সরকারী কোষাগার থেকে গ্রহণকৃত অর্থ ফেরত, জেল-জরিমানাসহ আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের তরিকুল ইসলাম গত ১১ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব এবং দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হক এমপি দূর্নীতিবাজ আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক কড়া নোটিশ দেয়ার জন্য ডেপুটি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছেন। তরিকুল ইসলামের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের (বর্তমান মৃত) ফজলার রহমান ও (বর্তমান মৃত) সেফালী বেগমের দ্বিতীয় সন্তান আসাদুল ইসলামের বয়স বড়জোর ১২ বছর হবে। ফলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বা মুজিব নগর সরকারের চাকরি করার তার কোনো সুযোগ ছিলনা। অখচ আসাদুল ইসলাম জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে ভূয়া মুজিব নগর সরকারের কর্মচারি (ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা) দেখিয়ে ১৯৯০ সালের দিকে লোভনীয় তৎকালীন ত্রাণ ও পূর্ণবাসন মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর পদে অফিস সহকারী হিসেবে গ্রহণ করেন। আসাদুল ইসলাম একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার প্রতিপক্ষরা তাকে সমাজের চোখে হেয়প্রতিপন্ন করতে এসব অভিযোগ করেছেন।