খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০১৬: মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর : পার্বতীপুর উপজেলার প্রায় গ্রামে-গঞ্জের হাট-বাজার গুলোতে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন প্রাণী পল্লী চিকিৎসকরা গরু,ছাগলসহ বিভিন্ন পশু পালনের চিকিৎসা সেবা চলছে দেদারছে। কর্তৃপক্ষ জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পল্লী চিকিৎসকদের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ ডাক্তাররা। তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে গরু ছাগল হাঁস ও মুরগী।
জানা যায়, পার্বতীপুর উপজেলার প্রানী সম্পদ কার্য্যলয়ে পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নের গরু,ছাগলসহ বিভিন্ন পশু পালনের চিকিৎসা সেবা দিতে প্রাণীসম্পদ ডাক্তার রয়েছেন একজন, ভেটেনারী সার্জন (ভিএস) ১জন, ভিএফএ রয়েছেন ৩জন,এফ এ আই ১জন ও কম্পাউন্ডার ১ জন।
পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জের হাট-বাজারে সাটিফিকেট বিহিন হাতুড়ে প্রানী চিকিৎসক রয়েছে প্রায় শতাধিক। এরা এলাকায় নিজেকে পশু ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রানীসম্পদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এসব হাতুড়ে প্রানী পল্লী চিকিৎসকের দাপটে উপজেলা প্রাণীসম্পদ ডাক্তার যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন। এমনি বেশ ক’জন প্রাণী পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে হাফিজুল ইসলাম খোকন, মিন্টু, জাকারিয়া, অহিদুল,মোস্তাফিজার,মিজাউর রহমান দুলাল,আব্দুল কাইয়ম, নুর আলম সরকার, মো:বেলাল হোসেন, বখতিয়ার হোসেন, আকতারুজ্জামান সরকার, ফজিল উদ্দিন, আব্দুর রউফ, মানিক, আজিজার রহমান, আসাদ, রাজু, মোহসিন, কল্পনা রানী, সাদেকুল, শাহিন, মাহামুদ, মহিবুল ইসলাম, ওবায়দুল হক, আবু কালামসহ প্রায় শতাধীক হাতুড়ে প্রানী পল্লী চিকিৎসক ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বিলি করেছেন। এমনকি তারা ভিজিটিং কার্ডে ডাক্তার ও উল্লেখ করেছেন।
এসব হাতুড়ে প্রানী পল্লী চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারনে এলাকায় অনেক গরু ছাগল, হাস মুরগী মারা যাওয়ার আনেক অভিযোগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার হাবড়া ইউনিয়নের শেরপুর রামপুর গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, গত ৫ দিনে ওই গ্রামের ৩০টি দেশী ও বিদেশী গরু মারা গেছে। এদের মধ্যে মাহমুদ কবিরের ৩টি, ওসমান আলীর ৩টি, আহের আলীর ৩টি মন্তাজুল ৩টি, লালটুর ২টি, সুন্দরা মুমর্ুুর ২টি, আইয়ব আলীর ২টি মোতালেব, সোহরাব, মহিবুল, অনিছুর, হাছিনুর, ফারুক হোসেন, বাচ্চু মন্তল, আানোয়ার হোসেন, ইয়াছিন আলী, মোতাহার হোসেন, হারিছ উদ্দীন ও জলিল হোসেনের ১টি করে গরু মারা গেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। গ্রামের কৃষক মাহমুদ কবির বলেন, ঈদের পর থেকেই তাদের গ্রামে গরু মারা যাওয়া শুরু হয়। বাধ্য হয়ে তারা দূর্গাপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মাহমুদ আলী লিটন, ফুলবাড়ীর মিন্টু, বাগড়া রসুলপুরের জাকির হোসেন ও স্থানীয় পশু চিকিৎসক অহিদুল ইসলামের কাছে চিকিৎসা নেন গ্রামবাসী। চিকিৎসকরা ট্যাবলেট ও ইনজেকশন দেওয়ার পরপরেই গরু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে তারা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। একই গ্রামের মোতাহার আলী বলেন, গরুর মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হচ্ছে এবং কিছুই খেতে চাচ্ছেনা। পল্লী চিকিৎসক লিটন ইনজেকশন দেওয়ার পরপরেই গরু মারা গেলে ওই চিকিৎসক অন্য পশুর চিকিৎসা না দিয়েই পালিয়ে যায় গ্রামে থেকে। আরশেদ আলম নামের এক কৃষক বলেন, গরুর মড়ক দেখে তার গ্রামের ইয়াছিন হাবিব হাবিবুল্লাসহ অনেকেই নাম মাত্র মূল্যে গরু বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাদের গ্রামে গরু মরা যাওয়ার খবরে পাশর্^বর্তী পূর্ব শেরপুর, পশ্চিম শেরপুর, মধ্যপাড়া ও দুধিপুর গ্রামেও খুরা রোগের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ সংবাদে পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইদ্রিস আলী তার অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ছুটে যান গ্রামে। পর পরই ছুটে আসেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শংঙ্কর কুমার বোশাক। তারা জানান, হাতুড়ে প্রানী পল্লী চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারনে এলাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে খুরা রোগ। তারা জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন প্রতিশোধক খুরা রোগের টিকা। নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে খুরা রোগ।
এ ঘটনার দুই মাস পূর্বেও এমনি অবস্থা ঘটেছিল উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে। হাতুড়ে চিকিৎকদের ভুল চিকিৎসায় সে সময়েও অনেক গরু বাছুর মারা যায়।
হাতুড়ে পল্লী চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় অনেক গোবাদী পশু মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও তারা থেমে নেই। নেই প্রানীসম্পদ কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ। প্রানী পল্লী চিকিৎসকদের একটি সমিতিও রয়েছে। রয়েছে সবার মোটরসাইকেল। কোন সংবাদ পেলেই তারা তড়িঘড়ি করে গিয়ে পশুর চিকিৎসা দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহাদয়ও কি অসহায়? সচেতন মহল এসব হাতুড়ে প্রানী পল্লী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ মন্ত্রনালয় কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তা না হলে এসব ভুয়া সাটিফিকেটধারী প্রানী পল্লী চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসার কারনে এলাকা থেকে প্রানী সম্পদ বিলিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই ধারনা করছেন।