খোলা বাজার২৪, রোববার, ২৪ জুলাই ২০১৬: : মুন্সীগঞ্জে আইসক্রিমের নামে শিশুরা কী খাচ্ছে? মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভায় বিএসটিআই এর অনুমোদন বিহীন একাধিক নি¤œ মানের আইসক্রীম কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানাগুলো হচ্ছে, নিউ লামহা আইনক্রিম, যুবরাজ আইসক্রিম, মীম আইসক্রিম, বনলতা, নিউ স্টার, নিউ লাভা, এশিয়া আইসক্রিমসহ প্রায় ৮-১০ টি আইসক্রিম তৈরীর কারখানা। আইসক্রিম ছোট বড় সবার কাছে লোভনীয় একটি পন্য। রোধের তীব্র খরতাপে শিশু ও তরুনদের প্রান জুড়ায় আইসক্রিম। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখাযায়, অসাধু কারখানার মালিকরা অভিজাত কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নি¤œ মানের আইসক্রিম তৈরী করা যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশাসন এসব কারখানাগুলোতে অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখায় এখন মালিকরা পুরোদমে চালাচ্ছে উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম। এসব কারখানার কোন বৈধ কোন লাইসেন্স বা বিএসটিআই এর অনুমোদন নেই। কেবল মাত্র ইউনিয়ন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে এসব কারখানা। অধিকাংশ কারখানায় আইসক্রিম তৈরীতে খাল, ডোবার ও নোংরা পানি প্রতিনিয়ত ব্যবহার হচ্ছে। মানুষ বিশুদ্ধতার জন্য বোতলের পানি পান করে থাকেন। যে কোন অনুষ্ঠানে অতিথিরা নোংরা পানি দিয়ে তৈরী বরফ মিশ্রিত বোরহানী খাচ্ছি গ্লাস ভরে ভরে। আসলে কি বিশুদ্ধ পানি খাচ্ছি? এসব কারখানাগুলোতে মাছ বা অন্যান্য খাদ্য হিমায়িত করার জন্য এসব বরফ ব্যবহার করা হয়। আর অসাধু আইসক্রিম ফ্যাক্টরীর মালিকরা এই বরফকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সর্বরাহ করে। নোংরা পানি সাথে ঘনচিনি, আটা, ময়দা, সেকারিন ও বিভিন্ন কালারের রঙ মিশিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে এসব আইসক্রীম। আবার প্লাষ্টিকের পাইপের মধ্যে কেমিক্যাল রঙ মিশিয়ে সাথে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকার পদার্থ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পাইপ আইসক্রিম। আবার বাঁশের কাঠিতে তৈরী হচ্ছে কাঠি আইসক্রিম। আইসক্রিম রাখার বক্সগুলোর অবস্থা অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। আইসক্রিমগুলো মরিচা ধরা কক্সশিটে সংরক্ষন করা হচ্ছে। আবার সেটা খোলা অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলোকে আইসক্রিম বলা যাবেনা। ‘আইসবার’ বলা যাবে। আইসের সাথে ক্রিম (দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য কিংবা ক্রিম) জাতীয় উপাদেয় উপাদান মিশ্রিত ছাড়া তৈরি হয় বলে এগুলোকে আইসক্রিম বলা যাবে না। দুধ কিংবা ক্রিমবিহীন আইসক্রিমকে ‘আইসবার’ বলা হয়। এসব আইসক্রিম স্কুল- কলেজের সামনে ও ফুটপাতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। এসব আইসক্রীম তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ’ঘনচিনি’ যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় সোডিয়াম সাইক্লোমেড বলা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্যও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এহসানুল করিম বলেন, এসব খাদ্য শিশু স্বাস্থের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব আইসক্রিম খেলে শিশুদের দেহে টাইফয়েডের সম্ভাবনা থাকে। এসব আইসক্রিম সোডিয়াম সাইক্লোমেড নামক ঘনচিনি ব্যবহৃত হয় যা খেলে শিশুদের পেটের রোগ ও কেন্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধিপায়।
সরেজমিনে বেশীরভাগ কারখানায় গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। কোন কোন কারখানার গিয়ে ম্যানেজার ও শ্রমিকদের পাওয়া গেলেও তার কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। লামহা কারখানার শ্রমিক মোঃ ইউসুফ জানান, আইসক্রিম তৈরীতে পানি, ঘনচিনি, সেকেরেন, ময়দা, বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়। এসব নোংরা খাবার শিশুদের জন্য ক্ষতিকার আপনি সেটা জানেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক বলেন, এটা নোংরা খাবার কিন্তু আমরা কি করবো মালিক বানাতে বলে তাই বানাই। আমরা তো কর্মচারী যা বলার মালিককে বলুন। পরে একাধিক কারখানায় গিয়ে একই কথা শোনা যায়।
স্যানেটারী ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন মোল্লা বলেন,এসব প্রতিষ্ঠানের কোন বিএসটিআই এর অনুমোদন নেই। আগে একবার এই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর বন্ধ ছিল। এসব কারখানার মালিকদের সংশোধন হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আদেশ অমান্য করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক একে এম শওকত আলম মজুমদার বলেন, এসব আইসক্রিম কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।