Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

50খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০১৬: শয়ে শয়ে সাপ নিয়ে ভারতের বিহার রাজ্যে শুরু হয়েছে সাপের মেলা। যে মেলায় নানা প্রজাতির বিষধর সাপের পাশাপাশি রয়েছে নির্বিষ সাপও। বিহারের বেগুসরাই শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে আগাপুর গ্রামে বসেছে এই অভিনব সাপের মেলা।

হিন্দু পৌরাণিক শাস্ত্র মতে, নাগপঞ্চমী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এই সাপমেলার। হিন্দু মতে, পাতাল লোকের অধীশ্বর হলেন নাগরাজ। সেই নাগ দেবতার পুজো করা হয় এই নাগ পঞ্চমীতে। যে নাগ পঞ্চমী পুজো বিহার ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও পালিত হয়। তবে বিহারে এই পুজোতে বসে জ্যান্ত সাপেদের নিতে এই মেলা। বিহারের অতি প্রাচীন মেলা এই আগাপুরের সাপের মেলা। এ মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপ নিয়ে আসা হয়। বিষধর কেউটে, গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শাখামুটির মতো সাপ নিয়ে এই মেলায় চলছে সাপের খেলাও।
চিরাচরিত সংস্কার আর গা শিউরে ওঠা রোমাঞ্চ এখানে মিলেমিশে একাকার। এই মেলায় আসা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার হাতেই রয়েছে নানা ধরনের জ্যান্ত সাপ। কোনোটা নির্বিষ তো কোনোটা বিষধর। কেউ সেই সব সাপকে গলায় মালা করে, কেউ বা হাতে পেঁচিয়ে আবার কেউ কোমরে পেঁচিয়ে নিয়ে দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে। একটু অসতর্ক হলেই ছোবল অনিবার্য। সাপের ফণা তোলার হিসিহিসে শব্দ মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে।
নাগরাজের পাশাপাশি এখানে সাপের দেবী মনসারও পূজা হয়। মনসাকে নিয়ে যত গান আছে, আর কোনো দেবীকে বা তাঁর বাহনকে নিয়ে বোধ হয় তা নেই। সাপের আছে বিষ, কাজেই সাপে ভয় আছে, সাপ নিয়ে কিংবদন্তিও রয়েছে অসংখ্য। যদিও সব সাপের বিষ নেই। সব সাপ করে নাকো ফোঁসফাঁস। আর সাপ নিয়ে ‘মনসা মেলা’ বাংলার গ্রামগঞ্জে তো অঢেল। নাগপঞ্চমী শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপঞ্চমী অর্থাৎ পূর্ণিমার পরে যে কৃষ্ণপক্ষ তার পঞ্চম দিন। নাগপঞ্চমীতে মনসাপুজোর রেওয়াজ আছে গোটা ভারতে। অনন্ত নাগ, বাসুকি নাগ, শঙ্খনাগ, পদ্মনাগ এমন সব কত কত লায়েক সর্পদেব-দেবীর পুজো করা হয় এ দিন। ঘরের মূল প্রবেশপথের দুই পাশে মনসা ডাল (সিজও বলে) ভেঙে এনে রাখা হয়।
এ গাছ ক্যাকটাস-জাতীয়। এর সঙ্গে কিন্তু সাপের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু জনশ্র“তি আছে, গ্রীষ্মের প্রখরতা যত বাড়ে, সাপের বিষও তত বাড়ে। অম্বুবাচীর দিন থেকে সাপের বিষ কমে। অম্বুবাচীতে বৃষ্টি হবেই, এমন এক লোক-প্রত্যাশা থাকে গ্রামীণ জীবনে। বর্ষায় সাপ বেশি বের হয় বলেই এ সময় এই নাগ পুজো।
অনন্তদেবের ‘স্মৃতি কৌস্তভ’ গ্রন্থে দাক্ষিণাত্যে অগ্রহায়ণের শুক্লা পঞ্চমীতে নাগ পুজো প্রসিদ্ধ। আবার রাঢ়বঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চলে ভাদ্র মাসে গ্রামকে গ্রাম যে অরন্ধন করে (আগের দিনের রান্না পরের দিন খায়, ওই দিন উনুন জ্বলে না) তাকেও মনসা পুজো অরন্ধন বলে। সাপ আর লোকাচার মনসামঙ্গল থেকেই প্রচলিত। তবে অনেকাংশে সহজ করে নেওয়া হয়েছে।
বিহারের বেগুসরাইয়ের আগাপুর গ্রামের এই সাপের মেলা শতাব্দীপ্রাচীন। নাগপঞ্চমী উপলক্ষে এই মেলায় ভক্তিভরে পুজো করা হয় সর্প দেবতার। স্থানীয় মহিলারা ফণাতোলা বিষধর সাপের মাথায় ফুল ঠেকিয়ে পুজো দেন, প্রার্থনা করেন। সাপেদের উদ্দেশে দেওয়া হয় দুধ-কলাও। কথিত আছে, এই মেলায় এসে সর্প দেবতার আশীর্বাদ নিতে পারলে বছরভর সর্পদেবতা সন্তুষ্ট থাকেন। সাপে কাটার ভয় থাকে না কারোরই।
বেগুসরাইয়ের আগাপুর গ্রামে নাগপঞ্চমী উপলক্ষে এক মাস আগে থেকেই চলে এই মেলার আয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দারা সাপ ধরে তা বাড়িতে ছোট-বড় ঝুড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন। তারপর পুজোর দিন সেই সাপ বের করা হয় ঝুড়ি থেকে। নিয়ে আসা হয় এই মেলায়। মেলায় নিয়ে এসে সেই সাপ নিয়ে চলে পুজো অর্চনা থেকে নানা খেলা। এরপর মেলা শেষ হতেই সমস্ত সাপ অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় জঙ্গলে।