Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০১৬:রাজধানী ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশজুড়ে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। এ কারণে নিয়মিত ঠিকানা জঙ্গিরা। অভিযানে সাধারণ জঙ্গিরা আটক বা নিহত হলেও, মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের একটি বড় অংশ ভারতে ঢুকে পড়েছে, অথবা ঢোকার চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ ৫ম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই আশংকার কথা জানিয়েছে সীমান্তে পাহারা একেবারে নিশ্ছিদ্র করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
বৈঠকে ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম, প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজ্জু, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মেহরিশিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি শহীদুল হক, বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী প্রমুখ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বাসস’কে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি, মাদক চোরাচালান, জাল নোট, শিশু ও নারী পাচার, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও বহিঃ সমার্পন চুক্তি বিষয়ে প্রধান্য পায়। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির সন্তোষজনক বাস্তবায়নের ফলে ছিটমহলবাসীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হওয়ায় উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুই দেশের সীমান্তে পাহারা বাড়ানোর জন্য রাজনাথ সিংহকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন বলে শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার পর থেকে আতঙ্কে কাঁপছে বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়ছে ভারতসহ গোটা উপমহাদেশে। এমন একটি সময়ে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর দু’দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বসল দিল্লিতে। এ বৈঠকে কোনও সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি হয়নি ঠিকই, কিন্তু গোটা পরস্থিতি খতিয়ে দেখে সীমান্তে নিরাপত্তা পরিকাঠামোকে জোরদার করার প্রশ্নে একমত হয়েছে দু’পক্ষ। আগামী ১৬ অক্টোবর গোয়ায় বিমস্টেকের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সন্ত্রাস-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠক সারবেন তিনি। তার আগে এই বৈঠকের মাধ্যমে সন্ত্রাস প্রশ্নে সমন্বয়কে ঝালিয়ে নিল দু’দেশ।
গুলশান হামলা সম্পর্কে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে জানিয়েছে, গুলশানে জঙ্গি হামলা পরিকল্পিত আক্রমণ। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের উপস্থিতি রয়েছে— এই বার্তা আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দেওয়া।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল অঙ্কের ব্যবসা হয়। জাপানও বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। দু’দেশের নাগরিকদের হত্যা করে বিদেশিদের মধ্যে ত্রাস ছড়ানো ছিল হামলার লক্ষ্য।
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, ইতিমধ্যেই গুলশান হামলায় অভিযুক্ত জেএমবি সদস্য মোহাম্মদ সালেহান ও তার প্রায় ১২জন সঙ্গী আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দিয়ে ভারতে ঢুকেছে।
বৈঠকে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে আটক আইএস জঙ্গি মুসার বিষয়ে ঢাকাকে তথ্য জানিয়েছে দিল্লি। এতে বলা হয়েছে, মুসার সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনআইএ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মুসার কাছে বাংলাদেশে হামলা চালানোর বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল।
বাংলাদেশে জঙ্গিদের আস্তানার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিয়েছে মুসা। যা ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। গুলশান হামলার পর আর এক হোতা মোহাম্মদ সুলেমানের সঙ্গে মুসা একাধিক বার বৈঠকও করেছিল। ঢাকার আশঙ্কা, সুলেমান সম্ভবত উত্তর ভারতে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।
এদিকে বাসস জানিয়েছে, ভারতে গমনেচ্ছু বাংলাদেশী ভিসা প্রার্থীদের সুবিধার্থে ভারতীয় হাই কমিশন র্কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বাংলাদেশ-এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশী ভিসা গ্রহণ কারীরা যেন একই স্থান নীতির পরিবর্তে তাদের সুবিধা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন বন্দর (পোর্ট) ব্যবহার করতে পারেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। ভারতীয় পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা আশ্বাস দেয়া হয়।
মাদক চোরাচালান রোধে উভয়পক্ষ একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে কার্যকর থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তবে বংলাদেশের স্বরাষ্টমন্ত্রী সীমান্ত হত্যার হার শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত উভয় দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত বহিঃসমার্পন চুক্তির কার্যক্রম অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে এই চুক্তির একটি ধারা সংশোধন করা হয়। এরফলে ভারতে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে আনা অধিকতর সহজ হবে।
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সীমান্তের দূর্গম এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চলাচলের জন্যে ভারতীয় পক্ষ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। এছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৬৫ বছরের সিনিয়র সিটিজেনদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা দেওয়ার আহ্বান জানালে ভারতীয় পক্ষ তা বিবেচনা করার বিষয়টি জানানো হয়।