খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৩ জুলাই ২০১৬: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সন্ত্রাসবাদ দমনসহ সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
রবিবার শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে ক্যামেরন গুলশান হামলায় পুলিশসহ হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও নারকীয় হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন।
গত মে মাসে জাপানে ইসে সিমায় জি সেভেনের আউটরিচ মিটিংয়ের বাইরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সূত্র ধরে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমরা সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ দমন এবং এর শিকড় উন্মোচনে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
ক্যামেরন চিঠিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লড়াইয়ে পাশে থাকার ব্যক্তিগত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ ধরনের বর্বর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য নজিরবিহীন। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে ধারণ এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে যেসব দেশ কাজ করছে সন্ত্রাসবাদ আজ তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি চিঠিতে আরো বলেন,পবিত্র রমজানের শেষে সবাই ঈদের আনন্দের জন্য একত্রিত হতে যাচ্ছেন। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ধর্মের নামে সহিংসতার জায়গা ইসলামে নেই সেই বিষয়টি আমাদেরকে জোরের সঙ্গে বলা উচিত।
সন্ত্রাসবাদ বিশ্বশান্তির হুমকি:জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। শনিবার নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতি ঢাকার হামলাকে ‘জঘন্য’ ও ‘কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করা হয়েছে। পরিষদ বলেছে, আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি গুরুতর হুমকি। এই হুমকি মোকাবেলায় সন্ত্রাসী সংগঠন ও ব্যক্তিসহ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে হামলায় জড়িতদের সাথে সাথে অর্থায়ন ও পরিকল্পনাকারীকে বিচারের আওতায় আনার উপর জোর দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।
ইইউ, কানাডা, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিন্দা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শুক্রবার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে নির্মম জঙ্গি হামলায় কয়েকজন বিদেশিসহ নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকায় জঙ্গি হামলায় কয়েকজন ইতালি, জাপানি, বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকের হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই অপ্রতিরোধ্য গতিতে অব্যাহত থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব ধরনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের হামলাকে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঢাকায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কানাডা এবং দেশটি সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশনার বিনয়েট-পিয়ের লারামি রবিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ডিওনের বিবৃতি উল্লেখ করে বিনয়েট-পিয়ের লারামি বলেন, মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন আইন ও মানুষের প্রতি কানাডার অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা হবে।
গুলশান হামলাকে অমানবিক ও ক্ষমার অযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।পাশাপাশি ওই হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকায় রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া এ ধরনের অমানবিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ, এখানে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান জেনসেন এক শোক বিবৃতিতে গুলশান হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন,এমন অর্থহীন সন্ত্রাসের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং যেকোনো উপায়ে এ ধরনের সন্ত্রাস দমন করতে হবে। সবাইকে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও স্বাভাবিক জীবনধারাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। এজন্য কঠোরভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।