খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০১৬: বানের জলে ভেসে আসা বন বিশেষজ্ঞদের হাতে ধৃত ভারতীয় বুনোহাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’ কয়েকদিনে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুইবার শিকল ছিড়ে পালাবার চেষ্টা করেও সফল না হয়ে সোমবার সকাল থেকে শুয়ে রয়েছে কাঁদামাটিতে। উদ্ধারকর্মীদের শত চেষ্টাতেও দাঁড়াতে পারছে না ‘বঙ্গবাহাদুর’। কমে গেছে খাবার গ্রহনও। এদিকে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে স্থানান্তরের জন্য ৪টি পোষাহাতি আনার কথা থাকলেও দেশের কোথাও মিলছে না উচ্চ প্রশিক্ষিত পোষাহাতি। হাতিটির একেক সময় একেক আচরনে বেশ নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে বন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের।
উদ্ধারদলের সদস্য বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন শেরপুর অঞ্চলের ফরেস্টার মামুনুর রশিদ জানান, হাতিটিকে কয়ড়া বাইদ্যা বিলের মাঝামাঝি এলাকায় কাঁদামাটিতে চারপায়ে লোহার শিকল ও পিঠে মোটা নাইলনের রশি দিয়ে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। শনিবার ও রোববার সকালে দুইবার পালাবার চেষ্টা করে। উদ্ধারকর্মীদের প্রচেষ্টায় হাতিটি পালাতে না পারায় সোমবার সকাল ১১টার দিকে বাঁধাস্থানের কাঁদামাটিতে শুয়ে পড়ে। হাতির পায়ের নিচে কাঁদামাটি সরে গিয়ে শক্ত মাটি না থাকায় এবং শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ায় দাঁড়াতে পারছে না বলেও তিনি জানান।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেড়মাসের অধিক সময় ধরে বুনোহাতিটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭০০-১৮০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। পর্যাপ্ত খাবার, ঘুম ও সঙ্গীহীন হয়ে পড়ায় হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়া স্বাভাবিক। এছাড়া ৫-৬ বার অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘মেটাল ডার্ট’ প্রয়োগ করে উদ্ধার এবং লোহার শিকল ও মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখায় সে নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। তবে তাকে কলাগাছ, কলা, আখ, গুড়, বাঁশপাতাসহ পর্যাপ্ত খাবার এবং স্যালাইন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিনসহ টানা চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে বশে এনে স্থানান্তর করতে চারটি পোষাহাতি আনার কথা থাকলেও দেশের কোথাও মিলছে না উচ্চ প্রশিক্ষিত পোষাহাতি। গাজিপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে মাত্র একটি ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি হাতি আনার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন অঞ্চল ঢাকার সাবেক উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বলেন, ‘বঙ্গবাহাদুর’কে স্থানান্তর করতে পোষাহাতি যে কোন সময় এসে পৌছাবে। তারপর পোষাহাতি ও মাহুতের সাহায্যে বুনোহাতিটিকে প্রায় এক কিলোমিটার হাটিয়ে ডাঙায় নেওয়া হবে। ডাঙায় নিয়ে হাতিটিকে ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘মেটাল ডার্ট’ প্রয়োগের মাধ্যমে অচেতন করে ক্রেনের সাহায্যে ট্রাকে ওঠানো হবে। এজন্য তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা থেকে ক্রেন ও ট্রাক ভাড়া করে রাখা হয়েছে। ‘বঙ্গবাহাদুর’কে কোথায় রাখা হবে তা বন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সুত্র জানায়, ২৮ জুন ভারতের আসাম থেকে ভারতীয় বুনোহাতিটি বাংলাদেশে আসে। দেশের ৫টি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুনের একমাস পর ২৮ জুলাই জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আসে হাতিটি। গত বৃহষ্পতিবার দুপুর উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামে হাতিটিকে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘মেটাল ডার্ট’ (চেতনানাশক ইনজেকশন) প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়।