
শনিবার এমন ঘটনার পর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মূল আলোচনার বিষয় নোমান। জনপ্রিয় এই নেতা এবার দাবি আদায়ে কী নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামছেন?
নোমানের কাছ থেকে এ প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব না মিললেও তার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্যে এমন কিছুরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর গত ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এতে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি দুটি পদ খালি রয়েছে।
স্থায়ী কমিটিতে নতুন দুই সদস্যের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঠাঁই পেয়েছেন। তবে জোরালো গুঞ্জন থাকলেও জায়গা হয়নি চট্টগ্রামের আরেক প্রভাবশালী নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের। তাকে আগের পদ অর্থাৎ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ নোমান এবং তার অনুসারীরা।
কমিটি ঘোষণার পরপরই পদ ছেড়ে দেয়ার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন নোমান। পরে অবশ্য তার বক্তব্য গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জানা গেছে,কমিটি ঘোষণার পর তার অনুসারীরা তখনই মাঠে নামতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সান্ত্বনা দিয়ে দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আশায় কিছুদিন সময় নেয়া হয়। গণমাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে আল্টিমেটামও দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রায় মাস হতে চললেও ক্ষোভের বিষয় নিয়ে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ নেই। উল্টো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন, কমিটিতে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। যারা বাদ পড়েছেন তাদের পরবর্তিতে অন্যান্য কমিটিতে সুযোগ দেয়া হবে। না হলে আগামী কাউন্সিলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এমন বক্তব্যে নিরাশ হয়ে পড়েন আবদুল্লাহ আল নোমান ও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, নোমানের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে চট্টগ্রামে শোডাউন করেছেন তার অনুসারীরা। শনিবার নগরীর দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন নসিমন ভবন চত্বরে কয়েক শ নেতাকর্মী বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ আল নোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “দলে আমার অবমূল্যায়নে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না। পরিবর্তনের আশায় বেশ কিছু দিন সময় অপেক্ষা করেছিলাম। এবার অপেক্ষার পালা শেষ; অধিকার আদায়ে মাঠে নামতে চায় নেতাকর্মীরা। তাদের কী দিয়ে সান্ত্বনা দেব আমি।’
নেতাকর্মীরা বলছেন,‘আমাদের অপেক্ষার পালা শেষ। আবদুল্লাহ আল নোমানকে দলের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে এবার মাঠে নামব আমরা। ’
চট্টগ্রাম মহানগর টেরি বাজার ব্যবসায়ী দলের সম্পাদক আব্দুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিক্ষোভ সমাবেশে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন। আর এই বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে মাঠে নামার প্রস্তুতি।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক সভা করে অধিকার আদায়ের অন্দোলন শুরু হবে বলে জানান আবদুল মান্নান।
আর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের শুধু নয়, আবদুল্লাহ আল নোমান পুরো দেশে বিএনপির রাজনীতির অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাকে স্থায়ী কমিটিতে না রাখা অদূরদর্শিতার পরিচায়ক।
চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি মূলত নোমানের হাত ধরেই সমৃদ্ধ হয়েছে দাবি করে নাজিম উদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির স্বার্থে আবদুল্লাহ আল নোমানকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এদিকে চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে আবদুল্লাহ আল নোমানের অসামান্য অবদান স্বীকার করলেও স্থায়ী কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নিয়ে তার অনুসারীদের ক্ষোভ নিয়ে বিরক্ত দায়িত্বশীল নেতারা। তবে কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মহানগর বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে নোমানের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানোর পরও তারা অংশ নেননি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির সভাপতি ড. শাহাদাত হোসেন বলেন,‘নতুন নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন আমার। তবে নোমান ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। নোমান ভাইয়ের নেতৃত্ব ছাড়া চট্টগ্রাম বিএনপি অভিভাবকহীন।’
তিনি বলেন,‘অনুসারী নেতাকর্মীরা নোমান ভাইয়ের অবমূল্যায়ন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। ফলে তারা মাঠে আন্দোলন করার জন্য উদগ্রীব। ’
এক প্রশ্নের জবাবে শাহাদত বলেন, ‘দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে নিজেরা কী পেলাম-না পেলাম, তার চেয়ে বরং সংকট উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে।’ দলের প্রয়োজনে মাঠে সব সময় থাকবেন বলেও জানান তিনি।