Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

images

খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬: সরকার হতদরিদ্র এবং পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য শীঘ্রই ‘পল্লী রেশনিং’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যেখানে মাত্র ১০ টাকায় চাল ক্রয়ের সুযোগ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বিজিবি সদর দফতর পিলখানার ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব শীঘ্রই পল্লী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে হত-দরিদ্র এবং পঙ্গু-প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পল্লী রেশনিং’এর ব্যবস্থা করবো। এই রেশন কার্ড যাদের হাতে থাকবে মাত্র ১০ টাকায় তারা চাল কিনতে পারবেন। সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে।
এই বিশাল আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আসলে কোন ম্যাজিক নয়। বরং তাঁর জনগণের প্রতি কর্তব্য নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়নের পদক্ষেপ বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য, তিনবাহিনী প্রধান, ঢাবি উপাচার্য’সহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী প্রথম গ্রাহক হিসেবে নব প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিতে একটি একাউন্ট খোলেন।
অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোখলেসুর রহমান ব্যাংকটির ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত এই বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির যাত্রা শুরুর মাধমে বিজিবি সদস্যদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হল।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভাব নাই। আজকে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাই শুধু আমরা নিশ্চিত করি নাই পঙ্গু, হত-দরিদ্র, প্রতিবন্ধীদের আমরা বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শীঘ্রই পল্লী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে হত-দরিদ্র এবং পঙ্গু-প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পল্লী রেশনিং-এর ব্যবস্থা করবো। এই রেশন কার্ড যাদের হাতে থাকবে মাত্র ১০ টাকায় তারা চাল কিনতে পারবেন। সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’
’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলটিকে স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর থেকে যতগুলো সরকার এসেছে তারমধ্যে আমাদের ’৯৬ সালের আওয়ামী লীগের আমলটিকেই বলা যায় স্বর্ণযুগ।
তিনি বলেন, এরপর ২০০১ থেকে পরবতী ৬টি বছর আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না, বাংলার মানুষের জন্য ছিল না। কারণ যে অগ্রযাত্রা আমরা ’৯৬ সালে শুরু করেছিলাম সে চাকা থেমে গিয়েছিল। ২০০৯ এ তারপর আবার যখন সরকার গঠন করি, আবার আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের হার ৫৭ ভাগ থেকে ২২ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে এই হারকে আরো ৮-১০ ভাগ আমরা কমাতে চাই। তাহলে কেউ আর দরিদ্র বলে আমাদের কটাক্ষ করতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা পারবো।
ইতোমধ্যে ৫ কোটি লোক নি¤œবিত্ত থেকে নি¤œমধ্যবিত্তে উঠে এসেছে, জানান প্রধানমন্ত্রী।
মাথাপিছু আয় ১৪শ’ ৬৬ ডলারে উন্নীত করাসহ বিশ্ব মন্দার মধ্যেও আমাদের পবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে।’
তিনি বলেন, অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা এত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন কিভাবে সম্ভব করেছেন ? ম্যাজিক টা কি ?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ম্যাজিক কিছুই না, এটা হল আমাদের আন্তরিকতা। দেশের প্রতি জনগণের প্রতি জনগণের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সেই কর্তব্যবোধ থেকে আমরা যে কাজ করি এবং দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য যে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি তার জন্যেই এই উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। আমি আশা করি, ‘আস্থা সীমাহীন’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে নবগঠিত সীমান্ত ব্যাংকের প্রত্যক কর্মকর্তা-কর্মচারি দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাবে। ব্যাংকটিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাড় করাবে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সমর্থ হবে।
প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, এই ব্যাংক বিজিবি’র সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’
বিজিবি’র উন্নয়নে সরকার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ পাশ করি। এরফলে বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে। ৪টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে যা এ বাহিনীকে আরও গতিশীল ও সুসংগঠিত করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করে ‘বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো’ স্থাপন করেছি। বিজিবিতে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ২৪ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিজিবি’তে ৯৭ জন নারী সদস্য নিয়োগ দেই। এ বছর দ্বিতীয় দফায় আরও ১০০ জন নারী সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় এবছর ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ৫৫টি বিওপি নির্মাণ করছি। পরবর্তীতে আরও ২৫টি বিওপি নির্মাণ করে এই সীমান্ত সুরক্ষিত করা হবে। বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের যে দুর্গম সীমান্ত রয়েছে তা সুরক্ষার জন্য ‘সীমান্ত সড়ক’ নির্মাণের একটি প্রকল্প গত ৭ জুলাই একনেকে অনুমোদন দিয়েছি। আশা করি, অচিরেই এর কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিজিবি’র নিজস্ব এয়ার উইং গঠন করে দিয়েছি যা এর অপারেশনাল সামর্থ্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে থাকে দেশের উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখনই মানুষ শান্তিতে থাকে, উন্নয়নের সুফল ভোগ করে। আমরা গত সাড়ে ৭ বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি, আইন-শৃঙ্খলাসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিজিবি’র সুনামকে অক্ষুন্ন রাখার মাধ্যমে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে আরও নিবেদিতভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশটি আমাদের সকলের। আসুন সকলে মিলে কাজ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি।