খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬: রাঙ্গামাটি জেলা সদরে শেষ মুহূর্তে এসে জমছে কোরবানি পশুর হাট। স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা এখন প্রচুর দেশী গরু নিয়ে আসছেন সদরসহ রাঙ্গামাটির পশুর হাটগুলোতে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাঁকডাকে এখন সরগরম শহরের দু’টি বড় পশুর হাট।
বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি সদরে পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বসেছে কোরবানি গরুর হাট। তবে বসচেয়ে বড় দু’টি হাট বসেছে শহরের রিজার্ভবাজার ও পৌর ট্রাক টার্মিনালে। হাট দ’ুটি ঘুরে দেখা গেছে, দু’টিতেই প্রচুর গরু আনা হয়েছে। তবে হাঁকডাকে দাম চড়া হওয়ায় গরু কিনতে পারছেন না ক্রেতা অনেকেই। অন্যদিকে রাঙ্গামাটির হাট থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি গরুর চালান নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বাইরের বিভিন্ন জেলায়। ফলে স্থানীয় হাটগুলোতে গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় ক্রেতাদের। আর এতে দৌরাত্ম্য বেড়েছে স্থানীয় দালাল ও ব্যবসায়ী সিনন্ডিকেট চক্রের। পাশাপাশি অতিরিক্ত ইজারা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে।
দেখা গেছে, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর গরুর চালান বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলার বাইরে। বিষয়টির ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ জেলার খামারিদের উৎপাদিত প্রচুর গরু পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে। এ জেলায় খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে প্রচুর গরু পালন করেন। তাই এ জেলার বাইরেও প্রচুর গরু নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এতে খামারি ও ব্যবসায়ী উভয়ে মুনাফা অর্জনে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে মোটাতাজা করতে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক ওষুধ কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠায় পাহাড়ি অঞ্চলের বেশিরভাগ গরু হয় উজ্জ্বল রঙের ও সুঠামদেহী। গরু মোটাতাজা করণে খাবানো হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য। ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের গরুর প্রতি ক্রেতাদের কদর ও নজর বেশী বলে জানান খামারী ও ব্যবসায়ীরা। তবে রাঙ্গামাটির গরু জেলাই বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় হাটে গরুর চড়া দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ক্রেতারা।
শহরের পৌর ট্রাক টার্মিনাল ও রিজার্ভবাজার পশুর হাট গিয়ে দেখা যায়, দালালদের সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য আর গরুর চালান বাইরে যাওয়ার কারণে গরুর দাম খুব চড়া বলে জানান স্থানীয় ক্রেতারা। ফলে স্থানীয় হাটে গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পৌর ট্রাক ট্রার্মিনাল পশুর হাট থেকে গরু কিনতে যাওয়া মো. মোতাহের হোসেন চোধুরী নামে এক ক্রেতা বলেন, হাটে এবার প্রচুর গরু দেখা গেলেও দাম খুব চড়া। ছোট বড় মাঝারি সব আকারের গরুর দাম বেড়েছে। গত বছর যে আকারের গরু ৪০-৫০ হাজার টাকায় কেনা গেছে এবার সেগুলোর দাম ৬০-৬৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে বড় আকারের ৭০-৮০ হাজার এবং ছোট আকারের ৪০-৫০ হাজার টাকা। এতে মধ্যবিত্ত লোকজনের কোরবানির গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পৌর ট্রাক টার্মিনাল হাটের সভাপতি রুহুল আমিন জানান, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা হতে কোরবানির পশু হাটে আসছে। গত বছরের তুলানায় এ বছর গরুর দাম একটু বেশি। তবে রাঙ্গামাটির চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গরু যাচ্ছে বাইরে। এটা রাঙ্গামাটিবাসীর জন্য ভালো। তিনি দালাল ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শহরের নিউ রাঙ্গামাটি রিজার্ভবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার কাউন্সিলর মো. হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতি বছর ঈদুল আজহা আসলে পৌর ট্রাক টার্মিনালে অবৈধভাবে পশুর হাট বসানো হয়। আসলে পশুর হাট বসানোর কথা রিজার্ভবাজারে। রিজার্ভবাজার হল সরকারি তালিকাভুক্ত হাট। তাই নিয়ম অনুসারে পশুর হাট বসবে রিজার্ভবাজারে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মো. জুনায়েত ও মো. জাফর বলেন, হাটে এবার প্রচুর গরু দেখা গেলেও দাম বেশ চড়া। বড় বড় ব্যবসায়ীরা রাঙ্গামাটি থেকে গত সপ্তাহ ধরে ট্রাকে ট্রাকে গরু চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিয়ে যাচ্ছেন। যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পশুর হাটে। তাছাড়া গরুর খাবার ও পরিবহন খরচ এবং কর্মচারীর বেতনসহ সবক্ষেত্রে বাড়তি খরচ হওয়ায় এবার স্থানীয় হাটে গরুর দাম বেড়েছে।
রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রশিদ জানান, রাঙ্গামাটি শহরে দুইটি বড় পশুর হাট বসেছে। দু’টি হাটেই আইনশৃংখলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার রাখা হয়েছে। জাল টাকা রোধে প্রতিটি হাটেই টাকা পরীক্ষার যন্ত্র বসানো আছে। পশুর হাটে গরুর দালাল ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কোনো দৌরাত্ম্যের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।