Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
bcb-afghanistan-1খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: ক্রিকেট ম্যাচের মহানাটকীয়তায় শুধু সম্মোহিত নয়. কখনও কখনও ব্যথিতও হতে হয়। লজ্জিত হতে হয়, কুণ্ঠিত হতে হয়, মাথা নিচু করে স্বীকার করে নিতে হয় নিজেদের ভুলগুলোকে। শেষ অঙ্কে এসে কখনও বা ত্রুটি থেকে যায়, যেমনি হলো কাল মিরপুরে। মুশফিকের গ্গ্নাভস থেকে সহজ স্টাম্পিং মিস হওয়া, শেষ তিন ওভারে পরীক্ষিত দুই বোলার রুবেল- তাসকিনকে না আনা, নিশ্চিত গতকাল আফগানিস্তানের কাছে ২ উইকেটে হারা মৃত ম্যাচটার পোস্টমর্টেমে বেরিয়ে আসবে টুকরো টুকরো অনেক ভুল। এই হারে কেবল সিরিজ জয়ই পিছিয়ে পড়ল না, দুশ্চিন্তায় রাখল আরও একটি ব্যাপার। নিমন্ত্রণ করে আফগানদের ডেকে এনে রেটিং পয়েন্ট কাটা পড়ল মাশরাফিদের।

ম্যাচটি শততম জয়ের ছিল বলেই কি-না কে জানে, মিরপুরে বারবার ফ্লাশব্যাকের মতোই ঘুরেফিরে আসছিল কখনও আশির দশক, কখনও বা নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশ দলের ছেঁড়া ছেঁড়া মুখচ্ছবি! সেই বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে ফেরা, মাথা নিচু মিডল অর্ডার, সেই টেনেটুনে দুইশ’ করলেই হাততালি! আগে এসবে ‘আমরা এখনও শিখছি…’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হলেও এখন সেই অবস্থায় নেই। আইসিসির সহযোগী সদস্য আফগানিস্তানের কাছে ২০৭ রানে অলআউট হওয়াটা এখন শুধু অঘটনের নয়, অপমানেরও বটে!
যে বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই বিশ্বাসেরই অবমূল্যায়ন করলেন ব্যাটসম্যানরা। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার পর নবাগত বছর কুড়ির মোসাদ্দেকের অপরাজিত ৪৫ রানে ভর করে কোনোমতে ২০৭ রানের পুঁজি গড়েছিল বাংলাদেশ। যক্ষের ধনের মতো তা আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন মাশরাফি। সর্বরোগের চিকিৎসা সাকিব আল হাসানে- অনেকটা এই ভরসায় দলের মূল এই বোলারটিকে চার স্পেলে হাত ঘুরিয়েছিলেন অধিনায়ক। ফলও মিলেছিল। শুরুর ২ উইকেট সাকিবই তুলে নিয়েছিলেন তার আর্মার বোলিং দিয়ে। মাঝে আফগান হিটার শাহজাদকেও ক্যাচ বানিয়েছিলেন। এমনকি নিজের শেষ ওভারে ৩ রান দিয়ে একটি উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও ম্যাচের পরিস্থিতি মেপে নিজেই বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তার ৩১ রানে তার ১ উইকেট শিকারও ম্যাচটিকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিল। নবাগত মোসাদ্দেকও তার প্রথম বলেই আফগান অধিনায়ককে এলবিডবি্লউর ফাঁদে ফেলে ইতিহাস গড়েন! এদিন সবকিছুতেই যেন ছিল প্রথম ম্যাচের রিক্যাপ! ৪২ বলে ২৬, ৩০ বলে ২০ করতে করতে ১৮ বলে ১৩ রান পর্যন্তও স্নায়ুর লড়াই চলেছিল। প্রথম ম্যাচের সঙ্গে এ দিনের অমিলও ছিল।
প্রথম ম্যাচের শেষ তিন ওভারে তাসকিন-রুবেলে ম্যাচ ফিরেছিল। এ দিন পেসার নয়, স্পিনারেই ভরসা খুঁুজে নিয়েছিলেন অধিনায়ক। আর তাই ১২ বলে ১১ রানের সমীকরণের সময়ও রুবেল নয়, বল হাতে তুলে দেওয়া হলো মোসাদ্দেককে। ওই ওভারে একটি ছক্কাতেই সব আশা শেষ হয়ে যায়।
২০৭ রানের ম্যাচ শেষ ওভারে টেনে নেওয়ার একটা চাপা তৃপ্তি খুঁজতে পারেন কেউ কেউ; কিন্তু ম্যাচ শেষে মাশরাফির ইঙ্গিত, ব্যাটিংটাই খুব বাজে হয়েছে। তবে প্রশংসা করেছেন তার নবীন সদস্য মোসাদ্দেকের।
অলরাউন্ডার নৈপুণ্যের জন্য এই প্রশংসা পেতেই পারেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের মাঝে (১১১ থেকে ১৩৯) যখন ৩০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট পড়ে যায় তখনই মোসাদ্দেকের আবির্ভাব। প্রথমে তাইজুলের সঙ্গে দুই-এক করে দৌড়ে একটা ভদ্রস্থ জায়গায় দলকে নিয়ে যাওয়ার পর রুবেলের সঙ্গে শেষ জুটিতে হাত খুলেছিলেন মোসাদ্দেক। দৌলত জাদরানকে যেভাবে লং লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন, যেভাবে পুল খেললেন তা দেখে ঝিমিয়ে পড়া মিরপুরের গ্যালারিও জেগে ওঠে এ দিন। নবম উইকেটে রুবেলের সঙ্গে তার ৪৩ রানের জুটি আর তাইজুলের সঙ্গে ২৪ রানের জুটিতেই শেষ পর্যন্ত দুইশ’ পার হয় বাংলাদেশের।
অল্প রানের এই পুঁজি নিয়ে লড়াই করাটা যে চ্যালেঞ্জিং তা জানাই ছিল মাশরাফির। চার-ছক্কা নয়, এক-দুই করেই এই রান তাড়া করা যায়। তাই আফগান ব্যাটসম্যানদের সামনে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবকে এনেছিলেন তিনি। আফগান ব্যাটসম্যানদের ‘পা’ লক্ষ্য করে আর্মার করেছিলেন সাকিব এলবিডবি্লউর আশাতেই। কিন্তু তার মতো বোলিং করতে পারেননি তাইজুল। উইকেটের চেয়ে রান আটকাতেই বেশি মনোযোগ ছিল তার। আর যাকে নিয়ে খুব ভরসা ছিল, সেই তাসকিন নিজের ৪ ওভারেই দিয়েছিলেন ২৭, রুবেল দিয়েছিলেন ৩ ওভারে ২৪! সেখানেই যেন ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ দল।