Fri. Apr 25th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
সারাদেশে বর্বর বদরুলকে ধিক্কার ও ঘৃণা
 খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর, ২০১৬:‘আমি এক নির্যাতিত মেয়ের বাবা। সন্তান জন্ম দেয়া, তাকে লালন-পালন করা কত কষ্টের। এই কষ্ট আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীদের হামলা। আমার মেয়ের মতো আর কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়।’ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খাদিজা আক্তার নার্গিসকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার বাবা মাসুম মিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে সৌদি আরব থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর মাসুম মিয়া সরাসরি স্কয়ার হাসপাতালে যান। অন্যদিকে, খাদিজার বড় ভাই চীনে অধ্যয়নরত শাহীন আহমদও গতকাল দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর স্কয়ার হাসপাতালে চলে যান। এ সময় তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্কয়ার হাসপাতালের পরিবেশ। হাসপাতালে পৌঁছার পর মেয়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চিকিত্সকদের সঙ্গে কথা বলেন মাসুম মিয়া।
এসময় খাদিজার বাবা, ভাই ও স্বজনদের আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেউ। মেয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে খাদিজার বাবা বলেন, ‘আমার মানসিক অবস্থা ভাল নেই। সবাই শুধু আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন, যেন আল­াহ ওকে সুস্থ করে দেন। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইছি। শুধু সন্তানদের মানুষ করার জন্য জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছি।’
বদরুল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বদরুল আমার বাড়িতে লজিং ছিল সেটা আমি এই ঘটনার পর জানতে পেরেছি। তবে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আমার ভাই আব্দুল কুদ্দুস। এখন তো দেখছি আমার বাড়িতে সে বিষাক্ত সাপ হয়ে ঢুকেছিল।’
খাদিজার ভাই শাহীন আহমদ বলেন, সবাই আমার বোনের জন্য দোয়া করবেন। আল­াহ যেনো ওকে সুস্থ করে দেন। দেশবাসীর কাছে আমার বোনের জন্য দোয়া চাইছি।
অন্যদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন খাদিজাকে দেখতে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি খাদিজার চিকিত্সার খোঁজ খবর নেন। পরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন মা। তাই তিনি খাদিজার সকল ধরনের চিকিত্সার ব্যয়ভার বহন করেছেন। খাদিজার ওপর হামলাকারীর দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকাশ্যে একজন নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে, আহত খাদিজাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম।
উত্তাল সিলেটে আন্দোলন স্থগিত :
সিলেটের ঘরে ঘরে দোয়া চলছে খাদিজার সুস্থতার জন্য। আমাদের আশা সকলের দোয়ায় খাদিজা সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে মন্তব্য করে সিলেট মহিলা কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ফজিলাতুননেসা বলেন, খাদিজার জন্য আমাদের কষ্টের শেষ নেই। কলেজ ক্যামপাসে প্রতিদিনই বিক্ষোভ চালিয়ে যাব, আমরা বদরুলের দ্রুত বিচার দেখতে চাই।
পাষন্ড বদরুলের জন্য যত ঘৃণা ও ধিক্কার। তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সাধারণ মানুষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনও সোচ্চার। এমনকি হামলাকারী বদরুলের মাও জঘন্য ঘটনার জন্য ছেলের শাস্তি চেয়েছেন। বদরুলে এক চাচা বদরুল সম্পর্কে জঘন্য ভাষায় ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ফজিলাতুননেসা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার ছুটিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। ছুটি শেষে স্কুল-কলেজ খুললে আন্দোলন আবার চলবে।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি:
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল ১০টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় জিন্দাবাজার,আম্বরখানা সড়ক অবরোধ করে মিছিল নিয়ে সিলেট জেলা প্রসাশকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ৪ দফা সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করে। দাবিগুলির মধ্যে-দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদরুলের বিচার করতে হবে ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসময় তারা দেশের কোন আইনজীবীকে বদরুলের পক্ষে শুনানীতে অংশ না দেয়ার আহ্বান জানায়। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ পালন করেছেন মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে এডভোকেট শিরিন আক্তার বলেন, পাশবিক এই ঘটনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
সিলেট নগরী ছিল উত্তাল:
বদরুলের শাস্তির দাবিতে গতকালও বিক্ষোভে সিলেট নগরী ছিল উত্তাল। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বদরুলের শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। হামলার প্রতিবাদে গতকালও ঘটনাস্থল এমসি কলেজ ক্যামপাসে বিক্ষোভ পালন করে সেখানকার শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সিলেটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল­াস্ট), সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, জৈন্তিয়া ছিন্নমূল সংস্থা (জেছিস), ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জেলা জোট ও এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন।
ফজিলাতুননেসাকে হত্যার হুমকি: গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ফজিলাতুননেসা যখন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল তখন তার মায়ের মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। এতে বলা হয়, ফজিলাতুননেসাকে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। নইলে তাকেও খাদিজার মত কোপানো হবে। এ ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের লোকজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। চাপা ভয় ও ক্ষোভ বিরাজ করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, হুমকি-ধামকি দিয়ে আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বদরুলের ফাঁসির আগ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
খাদিজার গ্রামের বাড়িতেও আন্দোলন :
গতকাল সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের আউসা গ্রামেও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা বদরুলের ফাঁসির দাবি করেন। হামলাকারী বদরুল আলম প্রায় ৬ বছর আগে লজিং মাস্টার হিসেবে এ বাড়িতেই থাকতো আর এ বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াতো। বদরুলকে নিজের ছেলের মতো দেখলেও আজ বদরুলের হাতে নিজের মেয়ের এ অবস্থায় পরিবার ও প্রতিবেশীরাও বিস্মিত।