খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৬: বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের খলিফারহাট বাজারে একটি কাপড়ের দোকানে চুরির অপবাদে শুক্রবার (৭অক্টোবর) দুপুর ১২টার সময় দুই কিশোরকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের পরে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর রাখা হয়েছে নির্যাতনের পর।
নির্যাতনের শিকার দুই কিশোর হল মো. রুবেল (১৪) এবং মো. আনোয়ার (১৪)। তারা পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি গ্রামের মো. আবুল বাশার ও মো. ইসমাইল হোসেনের ছেলে। রুবেল চরদুয়ানী ইউনিয়নের খলিফারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষার্থী আর আনোয়ার স্থানীয় একটি হাফেজি মাদরাসার ছাত্র।
জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলার খলিফারহাট বাজারের মো. ছগির হোসেনের মায়ের দোয়া বস্ত্রালয়ে গত ১ অক্টোবর রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোরেরা তার দোকান থেকে শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি পিসসহ দোকান থেকে আরো অনেক মালামাল নিয়ে যায়।
রুবেলের মা মোসা. বুলবুলি বেগম (৩৫) বলেন, চুরি হওয়া দোকানের মালিক মো. ছগির, চরদুয়ানী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. মজিবুর রহমান, ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. কবীর মোল্লা এবং ৮ নং ওয়ার্ডের মো. আবদুর রহমানসহ তার অন্য সহযোগীরা দোকানে চুরির জন্য আনোয়ারকে সন্দেহ করে বেদম প্রহার করে। কিন্ত আনোয়ার এ ঘটনার সঙ্গে তার নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলে ছগির ও তার দোসররা আনোয়ারের উপর নির্যানতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে তার ছেলে রুবেলসহ আরো তিন-চারজনের নাম বলার জন্য বলে। নির্যাতনের কারণে সকলের সামনে আনোয়ার রুবেলসহ আরো দুই-তিনজন কিশোরের নাম বলে। এ সময় তারা রুবেলকে বাড়ির কাছাকাছি থেকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন করে। রুবেল ও এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা বার বার অস্বীকার করলে তার উপর নির্যাতনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে রুবেল এবং আনোয়ারকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে করা হয় আবারো অমানবিক নির্যাতন। এ সময় আমি স্থানীয়দের কাছে খবর শুনে ছেলেকে উদ্ধার করতে ছুটে যাই ইউনিয়ন পরিষদে। আমার সামনেও করা হয় রুবেল ও আনোয়ারকে মারধর। পায়ের নিচে ঢুকানোর জন্য আনা হয় বড় সুই। হাত-পায়ের নখ তুলে নেয়ার জন্য আনা হয় প্লাস।
রুবেলের মা আরো বলেন, এমন নির্যাতন থেকে ছেলেকে রক্ষার জন্য আমি উপস্থিত সকলের হাত-পা ধরে আকুতি-মিনতি করি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের তিন সদস্য আমার ছেলেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এ সময় আমি ছেলেকে উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করি এবং বাকি টাকার জন্য আমার ও রুবেলের কাছ থেকে সাদা কাগজ চারটি ও ৫টি স্ট্যাম্পে আটটি স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মা বস্ত্রালয়ের মালিক মো. ছগির দুই কিশোরকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ওরাই আমার দোকানে চুরি করেছে। ওদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের মা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ায় চুরি হওয়া মালামাল আমরা উদ্ধার করিনি। মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তিন ইউপি সদস্যও।
অন্যদিকে আনোয়ারে মা মোসা. হাফিজা আক্তার বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ না করার পরও ছগির ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা আমার ছেলেকে বেদম মারধর করে। এরপর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আমাকেও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। ছেলেটা ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। তাই আমি ছেলেকে মারধর থেকে বাঁচানোর জন্য স্ট্যাম্পে ও সাদা কাগজে টিপ সই দেই এবং আমার ছেলের স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়। মায়ের সামনে সন্তানকে নির্যাতন কোনো মাই সহ্য করেত পারে না। তাই আমি আমার নিরাপরাধ ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তাদের কথায় স্ট্যাম্পে ও সাদা কাগজে টিপ সই দিয়েছি।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্যাতনে শিকার ওই দুই কিশোরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১২ ও ১৩ নং বেডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, সুস্থ হয়ে উঠতে ওদের আরো পাঁচ-সাতদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
পাথরঘাটা থানার ওসি মো. জিয়াউল হক বলেন, দুই কিশোরকে নির্যাতনের ঘটনা তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ই-মেইলে নির্যাতনের শিকার মো. রুবেল (১৪) এবং মো. আনোয়ারের (১৪) ছবি দেয়া আছে।