Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০১৬ :  কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেনের সরকারি বাস ভবনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সন্ত্রাসীরা বাস ভবনের ঘুরে ঢুকে চেয়ার টেবিল, জানালা দরজা ভাংচুর ও গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র তছনছ করে। পরে ইউএনও’র ফোন পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছিলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকারের পুত্রসহ ১০/১২ জনের একটি দল ওই ন্যাক্করজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে ওই ঘটনাটি ঘটে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেনের অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার হাসপাতালে ভর্তি তার এক রোগী দেখতে যায়। এসময় বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতাল জুড়ে অন্ধকার ভুতঁরে অবস্থা। হাসপাতালের ইনডোরে আলো নেই কেন-এমন বিষয় মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে জানতে চান আ’লীগের ওই সভাপতি। এনিয়ে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটির মিনিট পাঁচ পরেই ওই সভাপতির পুত্র মিশু মিয়া (২৮) সহ ১০/১২ জনের একটি দল হাসপাতালের আবাসিক বাস ভবনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে পড়ে চেয়ার টেবিল ভাংচুর ও কাগজপত্র তছনছ করে এবং কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয়ে চরম ভাবে লাঞ্জিত করে। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ইউএনও ও থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, ‘আ’লীগ নেতার ওই পুত্র মিশু মিয়া এর আগেও হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ওপর হামলা করেছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে ওই সময়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাবুদ আলী অপমান সহ্য করতে না পেরে রাজীবপুর ছেড়ে চলে গেছে।’ ওই আ’লীগ নেতার কারনে আমরা হাসপাতালের কেউ নিরাপদ নই এখন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রথমে আ’লীগের সভাপতি মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকি দেয়। এর পরই তাঁর তার ক্যাডাররা আমার কক্ষে ঢুকে হামলা চালায়। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও স্যার ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ সময় মতোই ছুটে আসে কিন্তু সন্ত্রাসীরা সরকারি দলের নেতার স্বজন হওয়ার কারনে তাদের গ্রেপ্তার করেনি।’ রাতে হাসপাতাল অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরই হাসপাতালের ইনডোরে আলোর ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয় স্টোরকে। ওই সময়ে হাসপাতালের জেনারেটর নষ্ট ছিল যা মেরামতের প্রক্রিয়ায় ছিল। আ’লীগের সভাপতি মোবাইল ফোন করেই আমাকে হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে আমি আমার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে এবং থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি এখন চরম নিরাপত্তহীনতার মধ্যে অবস্থান করছি। যে কোনো স্থানে পেলে আমার ওপর আবার হামলা করার ঘোষনা দিয়েছে তারা।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা প্রথমে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। হাসপাতালে আলো নেই কেম-কথাটি জানতে চেয়েছিলাম মাত্র। পরে আমার ছেলেসহ যারা ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা ঠিক করেনি। এ বিষয়ে আমি আমার ছেলেদের অপরাধের বিচার করতে চেয়েছি। এনিয়ে কোনো রিপোর্ট করার দরকার নেই।’
রাজীবপুর উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘হাসপাতালের অভ্যন্তরে যে ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে আ’লীগ জড়িত নয়। এটা সম্পূর্ন আ’লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁর অপকর্মের দায় দল নিবে না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাস ভবনের সঙ্গেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাসভবন। রাতে চিৎকার শুনে আমিই প্রথম ডাক্তারকে এবং পরে থানা পুলিশকে খবর দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পৃথীশ কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এবিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’