খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৬ :
গুলশান হামলায় অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার চার জেএমবি সদস্য অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
শনিবার ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) মিরপুর পুলিশ লাইনসে স্থাপিত সোয়াট ট্রেনিং সেন্টারে সদ্য সমাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্যদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা এসব অস্ত্র বিস্ফোরকের সোর্স কোথায়, কি উদ্দেশে কার জন্য এগুলো আনা হয়েছিল, সাপ্লাইয়ার কারা এসব বিস্তারিত তথ্য জানার জন্যই ওই চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, আমরা ইতিমধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। কিন্তু এসব তথ্য প্রকাশ্যে জানানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই ধরণের এক্টিভিস্ট গ্রুপ কিন্তু সহজে ভালভাবে সব কথা বলে দেয় না। তাই তারা কোন তথ্য গোপন করছে কি না তাও যাচাই বাছাই করে দেখছে গোয়েন্দারা।’
ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে তাদের মাসব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজনও পড়তে পারে। কারণ অস্ত্রগুলো সংগ্রহের উদ্দেশ্য কি ছিল, কার কাছে যাবে এগুলো নিয়ে কিন্তু আমাদের তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ বিভিন্ন ভাবে চলমান রয়েছে।’
এর আগে গত ২ নভেম্বর রাতে রাজধানীর দারুসসালাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ আবু তাহের (৩৭) , মিজানুর রহমান (৩৪), মোঃ সেলিম মিয়া (৪৫) ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডাঃ তৌফিককে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে হ্যান্ডমেড গ্রেনেড তৈরীর মূল উপকরণ ৭৮৭টি ডেটোনেটর ও একটি ৯ এমএম বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, তারা জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার ভারতীয় সীমান্তে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের সাথে জড়িত। তারা সাম্প্রতিক সময়ে নব্য জেএমবি’র দেশব্যাপী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গ্রেনেড তৈরীর মূল উপকরণ ডেটোনেটর, জেল ও অস্ত্র ভারতীয় সীমান্ত হতে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসতো। এই বিস্ফোরক ও অস্ত্র সংগ্রহের অন্যতম প্রধান চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার জেএমবি’র বর্তমান দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ওরফে তারা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা গুলশান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড তৈরীর কাঁচামাল ও হ্যান্ডগান (পিস্তল) সহ অন্যান্য অস্ত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে সংগ্রহ করে ছোট মিজান ওরফে তারার মাধ্যমে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ও মারজানের কাছে পৌঁছে দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাত নয়টায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান আক্রান্ত হয়। হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক নিহত হন। প্রায় ১২ ঘন্টার ‘জিম্মি সংকট’ শেষ হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে। ওই কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্টুরেন্টের বাবুর্চিনিহত হন।