Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০১৬: অবৈধ ব্যাংকিংয়ের দায়ে বন্ধ যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) প্রতারণার শিকার তিন লাখের বেশি গ্রাহক তাদের পাওনা এখন পর্যন্ত ফেরত পাননি। গত ৯ বছর ধরে অর্থ ফেরত পেতে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এখন ক্ষতিগ্রস্তদের একটি ফোরাম দাবি করছে, যুবকের সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির নামে এ সংগঠন সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা ফেরত পেতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে যুবক কমিশনের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুবকের কাছে গ্রাহকের পাওনা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। কমিশন বলেছিল যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে প্রতারিত গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করা যাবে। তবে তারা সম্পত্তির মূল্য কত হতে পারে তা উল্লেখ করেনি। কমিশনের হিসাবে, দেশের ৪৯টি তফসিলি ব্যাংকে যুবকের বিভিন্ন হিসাবে অর্থ ছিল ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সারা দেশে যুবকের নামে মোট জমির পরিমাণ ৬২ হাজার ৩৫০ শতাংশ। ৩১টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল যুবকের। জমি ও বাড়িসহ অন্যান্য সম্পদ প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে বিক্রি করে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা আসল টাকা পরিশোধের সুপারিশ করে কমিশন। এদিকে গত কয়েক বছরে যুবকের প্রচুর সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ অবস্থায় যতটুকু উদ্ধার করা
যাবে তার মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির আবেদনে বলা হয়, যুবকের প্রতারণার কারণে দেড় কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাওনা ফেরত পেতে সারাদেশে শতাধিক মামলা করা হয়। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেও মামলা হয়। এসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দিতে পরপর দুটি কমিশন ও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হলেও এখনও সমাধান হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও কোনো সমাধান পাননি তারা। বৈঠকের পর গত অক্টোবরে অর্থ ফেরত পেতে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবের কাছে আবারও আবেদন জানায় সংগঠনটি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবকের পড়ে থাকা সম্পদের অনুসন্ধান করেছে যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত কল্যাণ সোসাইটি। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে যুবকের জমির পরিমাণ ২ হাজার ২৬৮ একর। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে ১৮টি। বাগেরহাট ও চট্টগামে হ্যাচারি, বান্দরবানে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, তেজগাঁওয়ে শিল্পকারখানা এবং ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন নামে ১৮টি কোম্পানি রয়েছে। যুবকের এসব সম্পদ বিক্রি করলে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।
যুবকের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে বিশেষ আদালত গঠনের ও প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে। পরে আইন মন্ত্রণালয় যুবকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও দেওয়ানি দায় সুরক্ষায় প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে। এর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গ্রাহকের অর্থ ফেরতের বিষয়টি সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ে যুবকের বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত কল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মুকুল বলেন, যুবকের অনেক স্থানের সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এর পরও যুবকের যে সম্পদ আছে, তা বিক্রি করা হলে গ্রাহকদের পাওনার চেয়ে চারগুণ বেশি টাকা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাকরা অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চান।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (রেজসকো) কার্যালয় থেকে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় ১৯৯৬ সালে নিবন্ধন নেয় যুবক। এর পর আইনের ফাঁক গলিয়ে জনগণের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি সঞ্চয় সংগ্রহ করে। বেশি লাভের আশায় যুবকে অর্থ জমা রেখে তিন লাখের বেশি জনগণ প্রতারিত হন। সমকাল