খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৬: সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গঙ্গাস্নানের মধ্যদিয়ে শনিবার শুরু হয়েছে রাস ৩দিন ব্যাপি রাস উৎসব। সুন্দরবনের দুবলারচরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বনের এই দ্বীপে প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে বসে রাসমেলা। ইতিমধ্যে অসংখ্য হিন্দু পুণ্যার্থী আর পর্যটক এ উৎসবে শামিল হতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে এসেছেন বনের পাশের এই চরে।
এই উপলক্ষে রকমারী উপকরন নিয়ে মেলাও বসেছে দুবলার চরে। সুন্দরবন ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে ওঠা দ্বীপ দুবলার চর। কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনার এই চরে বহুকাল ধরে চলে আসছে রাস মেলা। দুবলার চরের রাস মেলার ইতিহাস নিয়ে নানান মত প্রচলিত আছে।
জানা যায় ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই মেলা শুরু করেছিলেন। এই সাধু দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবনযাপন করতেন।
অন্য একটি মতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস মেলা। আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
এ উপলক্ষেই সুন্দরবনে দুবলার চরে পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। দুবলার রাস মেলায় দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশ থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী ও পর্যটকের সমাগম করছে দু’দিন আগে থেকে। প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ এ উৎসবে সামিল হবে বলে আয়োজক কমিটি জানান। বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প সামগ্রীর সমাগম ঘটেছে এ মেলায়। হিন্দুদের নানান পূজার্চনার ফাঁকে সন্ধ্যায় ওড়ানো হবে ফানুস। মেলার মূল প্রার্থণা হবে ভোরেরপ্রথম জোয়ারে পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে।
সূর্য ওঠার আগেই সমুদ্রের বেলাভূমিতে প্রার্থণায় বসবেন পুণ্যার্থীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রেও জোয়ার শুরু হয়। এদিকে সুন্দরবনের দুবলার চরে ৩ দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎস সুষ্ঠুুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বন বিভাগসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সুন্দরবন জুড়ে বন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জারি করা হয়েছে অঘোষিত রেড এলার্ট। মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাট ভাবে মেলা উদযাপনের প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে।
এবার সুন্দরবনের ৮ টি পয়েন্ট দিয়ে রাস মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোর কোলের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। দর্শনার্থী ও তীর্থ যাত্রীদের জান মালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি মেলায় র্যাব, কোষ্ট গার্ড ও পুলিশ টহল দিচ্ছে।
এছাড়া মেলায় চোরা শিকারীদের রুখতে সব ধরণের দর্শনার্থীর অগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূণ্য স্নানের সময় কোনো পটকা ফুটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।