খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৬:
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশিরাও। দুর্ভোগের কারণে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীসহ পর্যটকরাও ভারত থেকে ফিরে আসছেন প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে।
গত ৮ নভেম্বর মোদি সরকার ১ হাজার ও ৫শ টাকার নোট বাতিল করায় বিপাকে পড়েছেন দেশটিতে ভ্রমণরত বিদেশিরা। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশিদের ক্ষেত্রে ৫’শ এবং ১ হাজার টাকার নোট বহাল রাখার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তে শিথিলতা রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা।
ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের ভেলরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নীলফামারী শহরের সবুজপাড়া মহল্লার আজিজ আহমেদ শুভ জানান, আমিসহ আরো দুজন বৃহস্পতিবার (১০নভেম্বর) পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করি।
প্রবেশের পর বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করতে গিয়েই ঝামেলায় পড়ি। বিনিময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা দিতে পারছে না প্রয়োজনীয় টাকা। জনপ্রতি সর্বোচ্চ একহাজার টাকা দিয়ে আপাতত চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এছাড়া রয়েছে কম রেটে বাংলাদেশি টাকা বিক্রি। বাংলাদেশি ১শ টাকার বদলে তারা দিচ্ছেন ৭০টাকা।
আজিজ আহমেদ অভিযোগ করেন, ভেলরে যাওয়ার জন্য অন্তত ১ লাখ টাকা প্রয়োজন হলেও চারদিন শিলিগুড়িতে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরত আসি।
তিনি আরো বলেন, রেস্তোঁরা, আবাসিক হোটেল অথবা বাসে উঠলেই সংশ্লিষ্টরা আগেই জানিয়ে দেন ৫শ কিংবা ১হাজার টাকার নোট গ্রহণ করা হবে না।
ভারতে যাওয়া সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের ধুলিয়া গ্রামের সহিদুল ইসলাম অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতে প্রবেশ করার পর থেকে ভারতীয় টাকার জন্য হন্যে হয়ে বেরিয়েছি। কেউ টাকা দিতে পারেননি। কোনো রকমে ১শ টাকার কিছু নোট সংগ্রহ করে চলেছি সেখানে।
চিকিৎসার জন্য যাওয়া ব্যবসায়ী নুর আলম বলেন, ৫শ ও ১হাজার টাকার নোট তুলে নেওয়ায় নোটগুলো অচল হয়ে পড়েছে দেশটিতে। কেউই গ্রহণ করছেন না। ভিক্ষুক থেকে শুরু করে পরিবহন, রেস্তোঁরা, আবাসিক হোটেল এমনকি দানের ক্ষেত্রেও।
নুর আলম অভিযোগ করেন, চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা হলেও ভেলরে যেতে পারতাম। কিন্তু বিনিময়কারীরা দিতে পারেননি। ব্যাংকে গিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বিদেশি হিসেবে।
প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা না করিয়ে দেশে ফিরি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভারত ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেন নীলফামারীর ব্যবসায়ী নুর আলম।
দুর্ভোগের চিত্র স্বচোখে দেখে নুর আলম বলেন, নুতন নোট ছাড়লেও সেগুলো সংগ্রহে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইনে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকছেন প্রত্যাশীরা। তাও আবার একজন সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার বেশি সংগ্রহ করতে পারবেন না।
ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি বন্দরে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী প্রভাস মজুমদার বলেন, আমরাও ব্যাংক থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারছি না। মানুষের দীর্ঘ লাইনের কারণে। কোনো রকমে ১শ টাকার কিছু নোট সংগ্রহ করে ভারতে আসা বিদেশিদের দিয়ে চলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে তিনিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভারতে না আসার পরামর্শ দেন।
গত ৮ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেয় মোদি সরকার। পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে তার অভিযোগ, সীমান্তপারে জাল নোট ছড়াচ্ছে শত্রুরা। আর দুর্নীতির কারণেও দেশ কালো টাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা ও সন্ত্রাস-চক্রের জাল টাকা মুছে ফেলতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।