Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

48খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৬: নোয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে নিয়েছে ব্যাটারী চালিত রিকসা। আর এসব ব্যাটারী চালিত রিকসাগুলো জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে তৈরী হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক। স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত গতির ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইকের দখলে চলে গেছে জেলার সবগুলো সড়ক। ফলে প্রতিনিয়ত শহরজুড়ে দেখা যায় সীমাহীন যানজট, ঘটছে দূর্ঘটনা। এসব পরিবহনের ব্যাটারী চার্জ করতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করায় জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র লোডশেডিং।

সরেজমিন জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তা-চৌমুহনী সড়ক এলাকা ঘুরে দেখা যায় চৌমুহনী পৌর ভবনের বিপরীত পাশে আরশিনগর অটো সেন্টারে অবাধে তৈরী হচ্ছে শত শত ব্যাটারী চালিত রিকসা। বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে করিমপুর রোড়ের দক্ষিণ পাশে চোখে পড়ে আরশিনগর অটো রিকসা শো রুম, তাজ অটো সেন্টার, আল মদিনা অটো সেন্টার, অটো রিক্সা হাউজ, সিরাজ সাইকেল মাট ও নিউ অটো রিক্সা হাউজ। এসব শো রুমে প্রতিদিন অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে নিজেদের তৈরী করা শত শত ব্যাটারী চালিত রিকসা। এ রিকসাগুলো বৃহত্তর নোয়াখালী ও পার্শবর্তী জেলা কুমিল্লা ও চাঁদপুরে বিক্রয় করা হচ্ছে। জেলায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা অটো রিকসা কারখানা ও শো রুমে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক তৈরী বন্ধ ও বিক্রি না করতে একাদিক বার জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নোয়াখালী নোটিশ প্রদান করলেও বন্ধ হয়নি তাদের অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক বিক্রয় ও তৈরী কার্যক্রম। বরং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক বিক্রয় ও তৈরী কারখানা।

একটি তথ্যে জানা যায়, নোয়াখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলাচলকারী অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষাধিক । যার কোন রুট পারমিট ও বৈধ লাইসেন্স নেই, নেই কোন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এমনকি চালকদের অধিকাংশেরই নুন্যতম ট্রাফিক আইন জ্ঞানটুকুও নেই। শহরের সড়কগুলোতে বের হলেই এ দৃশ্যমান বাহন, বিশেষ করে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইকগুলো লড স্টাইলে রাস্তার মাঝ বরাবর দিয়ে চলতে দেখা যায়। ফলে জেলার সড়ক পথে ক্রমেই যান চলাচলের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে চালকদের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক আটক করে জরিমানা আদায় করা হলেও লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান বা ট্রাফিক আইন বিষয়ে আমাদের কোন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় না।
জেলা শহর মাইজদীতে ইজিবাইক চালক রফিক বলেন, অসৎ কোন কাজ না করে আমার মত হাজার হাজার বেকার যুবক এসকল যানবহন চালিয়ে জীবন-জীবীকা নির্বাহ করছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেন না।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই পেটের দায়ে মোটা অংকের চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। লাইসেন্স না থাকার অজুহাতে এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘুষ বানিজ্যের অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ধরনের যানবাহন।

অভিজ্ঞজনদের মতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক অবৈধ যানবাহন এভাবে চলতে পারেনা। আবার বিকল্প কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি না করে একবারে বন্ধও করা যাবে না। তাদের মতে, জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহনকে আইন-কানুনের কাঠামো ও সুষ্ঠু নীতিমালার আওতার মধ্যে আনা জরুরী।

নোয়াখালী শহরে দীর্ঘদিন থেকে রিকসা-ভ্যানের পাশাপাশি সিএনজি চলাচল করে আসছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় রিকসা-ভ্যানের চেয়ে একটু বেশি গতি সম্পন্ন ব্যাটারি চালিত রিকসা ও ইজিবাইক। সহজলভ্য ও আরামদায়ক বাহন হওয়ায় ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক আস্তে আস্তে শহরবাসীর কাছে জনপ্রিয় গণপরিবহন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

বর্তমানে জেলা শহর মাইজদীসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত রিকসা ও ইজিবাইকের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিকেরও বেশি।

এ গণপরিবহনের চালকদের বৈধতা না থাকায় সড়কে চলাচলে কোন নিয়ম-নীতি তয়াক্কা না করে বেপরোয়া ভাবে চলতে গিয়ে জেলা শহর মাইজদী, মাইজদী বাজার, সোনাপুর, দত্তের হাট, বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা, চৌমুহনী, চাটখিল পৌর এলাকা, সোনাইমুড়ী পৌর এলাকা, কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট, চরজব্বর থানা সড়ক, সেনবাগ পৌর এলাকাসহ প্রভৃতি স্থানগুলোতে প্রায় যানজটের কবলে পড়তে দেখা যায়। যানজটের পাশাপাশি অহরহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র লোডশেডিং।

একদিকে, ইজিবাইক যানজট যন্ত্রনায় কাতর শহরবাসী। অন্যদিকে, শহরে নতুন যুক্ত হয়েছে দ্রুত গতির ব্যাটারী চালিত রিকসা। ফলে যানজট ও দূর্ঘটনা আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।

নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় প্রধান সড়কে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও এখনো প্রধান সড়কে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক চলাচলের কারণে তীব্র যানজট ও দূর্ঘটনার মত ঘটনা ঘটছে।

জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি আই) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকারী নির্দেশনায় প্রধান সড়কে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করতে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে অর্ধশতাধিক ব্যাটারী চালিত রিকসা আটক অবস্থায় আছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. ফারহানুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারী চালিত রিকসা ও ইজিবাইক মোটর-যানের আওতায় না পড়ায় এর বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, তার পরও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাটারী চালিত রিকসা তৈরী কারখানায় ও ইজিবাইক বিক্রয় সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা খানম বলেন, বেগমগঞ্জে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ব্যাটারী চালিত রিকসা তৈরী কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।