Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৬: 2কিউবা বিপ্লবের নেতা থেকে বিশ্বজুড়ে সাম্যবাদের স্বপ্নচারীদের নায়ক হয়ে ওঠা ফিদেল কাস্ত্রোকে ‘নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে চলা ট্রাম্প বলেছেন, কিউবাবাসী এখন ‘আরও মুক্ত’ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
১৯৫৯ সালে সশস্ত্র অভ্যুত্থানে সামরিক শাসক জেনারেল বাতিস্তাকে হটিয়ে কিউবার ক্ষমতায় এসে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন ফিদেল কাস্ত্রো। এরপর পাঁচ দশক যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে যান তিনি।
ক্যারিবীয় সাগরের যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের অবকাশ যাপনের বিনোদন কেন্দ্র কিউবাকে পুরোপুরি বদলে দেন ফিদেল। কিউবার অধিকাংশ মানুষ দেশকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নায়ক হিসেবে দেখেন ফিদেল কাস্ত্রোকে। অপরদিকে সমালোচকরা তাকে দেখেন ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে।
ফিদেলের ছোট ভাই কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কিউবা বিপ্লবের কমান্ডারের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন।
পরে এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “কিউবা একটি কর্তৃত্ববাদী দ্বীপ হিসেবে থাকলেও এটা আশা করা যায় যে, দীর্ঘদিন চেপে থাকা বিভীষিকা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ার শুরুর দিন হতে পারে আজ।। এটা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া যেখানে চমৎকার কিউবাবাসী শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা নিয়ে বাস করতে পারে, যা তাদের প্রাপ্য।”
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ নিয়ে যখন উত্তেজনা বাড়ছিল সে সময় ১৯৬১ সালে কিউবার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে ছেদ টানে ওয়াশিংটন। আরোপ করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, যা অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে চলে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ২০১৫ সালে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ওয়াশিংটন-হাভানা।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প কিউবা নিয়ে ওবামার নীতির সমালোচনা করলেও বিবৃতিতে তা পাল্টানোর কথা বলেননি। কট্টরপন্থি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প বলেছেন, কিউবানরা যাতে ‘সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতার দিকে যাত্রা শুরু করতে পারে’ তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব করবে তার প্রশাসন।
তবে ওবামা বলেছেন, ইতিহাসই ফিদেলের কাজের মূল্যায়ন করবে। এই সময়ে আমেরিকা ‘কিউবার জনগণের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে’।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০৬ সালে ভাইয়ের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতি থেকে অবসরে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।
তার মৃত্যুর খবরে হাভানায় অনেকে শোক বিহ্বল হয়ে পড়েন। “আমি সব সময় বলছিলাম, এটা হতে পারে না। তারা এখন এটা বলছে, কিন্তু আমি বলছি-এটা হতে পারে না,” বিবিসিকে বলেন এক নারী সরকারি কর্মকর্তা।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিন্ন মতাবলম্বী কিউবানদের গ্রুপ ‘লেডিজ ইন হোয়াইট’ এক টুইটে লিখেছে, “ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করতে পারেন, আমি করব না।” কারাবন্দি ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্ত্রীরা এই গ্রুপ গঠন করেছিলেন।
ফিদেলের মৃত্যুর খবরে উল্লাস হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে, এই শহরে দেশত্যাগী কিউবানদের একটি বড় অংশের বসবাস।
ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্েযই যুক্তরাষ্ট্রের নীতির একনিষ্ঠ সমালোচক হয়ে ওঠেন ফিদেল। ওয়াশিংটনের দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সামরিক অভিযানের ধারাবাহিক হুমকির মধ্েযও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ঊপকূল থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপ দেশ কিউবায় কমিউনিস্ট বিপ্লব এগিয়ে নেন তিনি।
কিউবায় তার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় সামরিক আগ্রাসন না চালালেও ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করতে একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যায় বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। কিউবার গোয়েন্দাদের দাবি অনুযায়ী, কেবল সিআইএ কাস্ত্রোকে হত্যার জন্য ৬৩৮টি চেষ্টা চালিয়েছে, যার মধ্যে আছে সিগারেটে বিস্ফোরক বা স্কুবা ডাইভিং স্যুটে বিষ মাখিয়ে; ছিল মাফিয়া স্টাইলে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও।
বিশ্ব নেতাদের অনেকেই ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে বর্ণনা করেছেন মস্কোর ‘আস্থাভাজন ও নিষ্ঠাবান বন্ধু’ হিসেবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, তার দেশের মানুষ ‘একজন ভালো ও সত্িযকার কমরেডকে’ হারিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনও ফিদেলের আমলে কিউবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির কথা স্বীকার করেছেন।
ফিদেল কাস্ত্রোকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে জ্ঞানী’ অভিহিত করে ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা বলেছেন, “তিনি কখনও ভুল করেননি। আমার কাছে ফিদেল চিরন্তন। একমাত্র ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠজন।”
ফিদেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিসও। ২০১৫ সালে কিউবা সফরের সময় এই কমিউনিস্ট নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি।
বিপ্লবীদের প্রতি ফিদেলের আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো।