Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

25kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬: নতুন করে সহিংস ঘটনার আশংকায় রায়পুরার নিলক্ষার চরে দড়িকান্দী ও সোনাকান্দী গ্রাম এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারী করা ১৪৪ ধারা এখনো বহাল রয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান সেখানে শান্তি শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য এই ১৪৪ ধারা জারী করেছেন। এর আগে নরসিংদী পুলিশ সুপার আমেনা বেগম নিলক্ষার চরে লাঠিয়ালদের দৌরাত্ব বন্ধের জন্য সেখানে ১৪৪ ধারা জারী করার জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অনুরোধ জানান।

এদিকে গত ১২ নভেম্বর পর পর ৩ দিন রায়পুরার চরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ টেটাযুদ্ধের পর সেখানে নতুন করে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। তবে যে কোন সময়ই পূনরায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকায় সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ লাঠিয়ালদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন গ্রাম ঘেরাও করে তল্লাশী চালাচ্ছে। তবে পুলিশ লাঠিয়াল গ্রেফতারে এখনও উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পারেনি। লাঠিয়ালরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই নিরাপদ দুরত্বে সরে পরে। আবার পুলিশ চলে গেলে তারা এলাকায় ফিরে আসে। গত ১৪ নভেম্বর টেটাযুদ্ধ ও পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হওয়ার পর পুলিশ বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় ৪টি মামলা দায়ের করে। এতে একশ জনকে নাম উল্লেখ করে প্রায় তিন হাজার গ্রামবাসীকে আসামী করা হয়। এসব আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে মালয়েশিয়া প্রবাসী করিম মিয়া (২৮), পিতা ভিকচান মিয়া, সাং গোপিনাথপুরকে পুলিশ অহেতুক কারণে গ্রেফতার করে একটি মামলায় প্রধান আসামী করেছে। তিনি উল্লেখিত দাঙ্গার পরে মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে তার পিতা।

অপর অভিযোগে জানা যায়, প্রাণ ফুড ফ্যাক্টরীতে কর্মরত মতিন (২০), পিতা হাছেন আলী, সাং- গোপিনাথপুরকে একইভাবে পুলিশ গ্রেফতার করে একটি মামলায় প্রধান আসামী করেছেন। অথচ সেও দাঙ্গা চলাকালীন সময়ে তার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলো বলে জানিয়েছেন তার পিতা। দাঙ্গা থামার পর সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের জন্য সদায় করে বাড়ীতে দিয়ে আসতে গিয়ে ছিল। পুলিশের এ ধরণের গ্রেফতার এবং নিরীহদের মামলায় প্রধান আসামী করায় এলাকায় নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোক্ত ব্যক্তিদের সাথে পুলিশের সক্ষ্যতার অভিযোগ রয়েছে। তারা দাঙ্গাবাজ দুই দলের প্রধানদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার না করারও অভিযোগ আছে। দাঙ্গাবাজরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেফতার করছে না। অথচ মালয়েশিয়া কিংবা প্রাণ ফ্যাক্টরীতে চাকুরীরতরা ছুটিতে বাড়ীতে আসলেই তাদেরকে গ্রেফতার করে মামলায় আসামী করার মত অন্যায় অহরই পুলিশ করে যাচ্ছে। নিহতদের পক্ষ থেকে জনৈক তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ২টি মামলা, হক চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা থানায় রুজু করা হয়েছে। গ্রামবাসীর বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া নরসিংদী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলে তদন্ত করে মামলাগুলো এফআইআর হিসেবে গন্য করতে থানাকে নির্দেশ করা হয়েছে।

বলাবাহুল্য যে, বিগত ইউপি নির্বাচনে রায়পুরার নিলক্ষা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্র“পের নেতা প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের সমর্থকদের মধ্যে কমবেশী ১৮টি সংর্ঘর্ষ ঘটে। এসব সংঘর্ষে ৬ ব্যক্তি নিহত, আহত হয় কমবেশী পাঁচশতাধিক। ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় অন্তত: শতাধিক বাড়ীঘরে। চেয়ারম্যান তাজুলের সমর্থকরা আব্দুল হক চেয়ারম্যানের বাড়ী ঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে ছারখার করে দেয়। পরবর্তীকালে গ্রামগুলোতে বর্ষার পানি ঢুকে যাওযায় সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি পানি শুকিয়ে গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের লাঠিয়াল বাহিনী টেটা, বল্লম, এককাইট্টা ও ককটেল বোমা নিয়ে ব্যাপক ব্যাপক রনসাজে সজ্জিত হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এতে আব্দুল হক সরকারের সমর্থকরাও পাল্টা রনসাজ গ্রহণ করলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত ১২ নভেম্বর থেকে পর পর তিন দিন দুই লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ঘটে।