খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬: রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকজন সংসদ সদস্য আচরণবিধি মানছেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তারা পছন্দের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পক্ষে ভোট চাইছেন। শুধু তাই নয়, ভোট দেয়ার পর ব্যালট পেপারের ছবি মুঠোফোনে তুলে আনার জন্য ভোটারদের কয়েকজন সাংসদ চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়াগেছে। গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার দোগাছি এলাকার স্বপ্নপল্লী নামে একটি পার্কে রাজশাহী-১(গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ভোটারদের নিয়ে ভূরিভোজ করেছেন। এছাড়াও জেলার পুঠিয়া উপজেলা সদরের তাজ কমিউনিটি সেন্টারে ভোটারদের নিয়ে ভূরিভোজ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা।
এ সময় তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুকে ভোট দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সভা দুটিতে উপস্থিত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে তানোর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা স্বপ্নপল্লীতে যেতে শুরু করেন। তাদের দেখে এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। পরে দুপুরের দিকে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী সেখানে যান। এ সময় তিনি স্বপ্নপল্লীর ভেতরে ভোটারদের নিয়ে নির্বাচনী আলোচনা সভা শুরু করেন। সভা শেষে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুর তালগাছ ও দুই নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পদপ্রার্থী গোলাম মোস্তফার হাতি প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি সবাইকে শপথ করান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় হাজির হওয়ার জন্য উপজেলার সবকটি ইউপির চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তানোরের মোট ১২০ জন ভোটার সেখানে হাজির হয়েছিলেন।
ওই সভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ভুলু ও গোলাম মোস্তফাকে ভোট দিতে ভোটারদের একরকম নির্দেশ দেন। এরপর তাদের নিয়ে ভূরিভোজ করেন সাংসদ ফারুক চৌধুরী। এদিকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করেছেন। পুঠিয়া উপজেলা সদরের তাজ কমিউনিটি সেন্টারে শনিবার দুপুরে এই সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু, সদস্য পদপ্রার্থী গোলাম ফারুক ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মর্জিনা বেগমের পক্ষে ভোট চান। ওই সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু ও সদস্য পদপ্রার্থী গোলাম ফারুকও উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তারা নির্বাচনের ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। জানা গেছে, গত কয়েকদিন আগে থেকেই ওই সভায় উপস্থিত হতে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে এ দিন দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিলেন, যারা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। নির্বাচনের অন্যান্য প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, সাংসদ ফারুক চৌধুরী ও আবদুল ওয়াদুদ দারার এই নির্বাচনী প্রচারণা সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। তারা নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলতে গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ওটা নির্বাচনী সভা নয় দলের বনভোজন ছিল। সেখানে দলের নেতাকর্মীদেরই আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আর তানোরের সব জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। তাদের নিয়ে বনভোজন করা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না। সেখানে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে নির্বাচনের বিষয়েও আলাপ হয়েছে। তারা আমার কাছে মতামত জানতে চেয়েছেন আমি আমার মতামত জানিয়েছি। তাদের মতামতও আমি নিয়েছি। আর সভা আয়োজন করা হয়েছে রাজশাহী জেলার বাইরে। সুতরাং আমার মনে হয় এতে কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কী না তা জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন স্পষ্ট করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন,আচরণবিধি সবাইকে দেয়া হয়েছে। সবাই জানেন,কীসে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, আর কীসে হয় না। তবে কোনো প্রার্থী এ ব্যাপারে লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে মাহবুব জামান ভুলুর প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন,ভোট দেয়ার পর ব্যালটের ছবি তুলে আনার জন্য ভোটারদের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি। তাই ভোটকেন্দ্রে ক্যামেরা ও মোবাইল নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আর নির্বাচনে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হচ্ছে, এমপিরা ভোটারদের নিয়ে সভা করছেন। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। এসব করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।