Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি ২০১৭:  60মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনী নিপীড়ন চালায়নি বলে দেয়া দেশটির সরকারি কমিশনের প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বুধিবার সরকারি কমিশনের অর্ন্তবর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই দিন একে পদ্ধতিগতভাবে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এবং ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে আখ্যা দেয় এইচআরডব্লিউ।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ধরে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারি কমিশনের প্রতিবেদন এবং এইচআরডব্লিউর প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হলো।
গত অক্টোবরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনায় বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের মাঝে ঘৃণা ও নিপীড়নের মাঝে বেঁচে থাকা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা সেনা অভিযানের মুখে হাজারে হাজারে পালাতে বাধ্য হয়।
অভিযানকালে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পারা ব্যক্তিরা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারের দাবি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘সাজানো’। তবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপ তীব্রতর হওয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে সরকার কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়।
বুধবার সরকারি কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ নাকচ করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের জোর করে বিতাড়নের অভিযোগও অস্বীকার করা হয়।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাখাইনের অস্থিতিশীল এলাকার ‘বাঙালি’ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা, মসজিদ-মাদরাসার ভবনগুলো প্রমাণ করে সেখানে কোনও গণহত্যা বা ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি।
রোহিঙ্গাদের দেশটির আদিবাসী সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে তাদের বাঙালি বা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে আসছে মিয়ানমার।
রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন
রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত মিয়ানমার সরকারের কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির সেনাবাহিনীর একজন সাবেক জেনারেল। যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত এই সেনাকর্মকর্তার দাবি, রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, অবৈধ গ্রেফতার এবং নির্যাতনের অভিযোগের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউ, এই প্রতিবেদনকে পদ্ধতিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছে।
প্রতিবেদনের ব্যাপারে সংস্থাটির মন্তব্য, পরিস্থিতিকে খারাপ নয় বলে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত টানার যে চিরাচরিত রীতি হয়েছে এ প্রতিবেদন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক নিরসনের উদ্দেশ্যেই প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ৪৮৫ জন বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলা হলেও এতে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের ধরে পুলিশের পেটানো এবং লাথি দেয়ার একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় সরকারি কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। যাতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করা হলো।
নাগরিকত্ব বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এতে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এর চার বছর পর গত বছরের অক্টোবরে ফের বড় ধরনের নিপীড়নের মুখে পড়ে রোহিঙ্গারা।