Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি ২০১৭:  64‘গুলশান-১ এর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা নয়’ নিজের দেওয়া এমন বক্তব্য ভুল বলে মেনে নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। গুলশান-২ এ অবস্থিত উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

মেয়র বলেন, ‘দুই দিন আগে দেওয়া আমার এ মন্তব্য যদি ভুল মনে হয় তা হলে ভুল। যদি বলা হয় তদন্তের আগে আমি এ কথা বলতে পারি না, তাহলে তাই মেনে নিচ্ছি। আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলাম।’
তবে এটাও বলছি, ‘যে ব্যক্তি ওই বিল্ডিংয়ের নাড়ি-নক্ষত্র জানেন তিনি তো এ কথা বলতেই পারেন। আমিও সে অবস্থান থেকে বলেছিলাম।’
মেয়র বলেন, ‘১৯৮৩ সালে নির্মিত মার্কেকটি অনেক আগে থেকেই অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে। বুয়েটের ঝুঁকিপ্র্ণূ ভবনের প্রণীত তালিকায়ও এই ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রতিবেদন দিয়েছে। ২০০২ সালেই মার্কেটের ওই ভবনে বিভিন্ন বিম ও কলামে ফাটল দেখা দেয়।’
আমরা দীর্ঘ দিন থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি মার্কেটেগুলোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। মাত্র গত বছর গুলশানের এই মার্কেটের শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। কিন্তু কিছু মানুষ আছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তাদের অন্যরকম স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এটা কখনও করতে দেওয়া হবে না। অন্তত এই মেয়রের সময়ে তা করতে পারবে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি এই শহরকে জলতে দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ঘটনার পর ব্যবসায়ী নেতাদের দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত দুই দিনে ডিএনসিসিকে ঘিরে কিছু কিছু মন্তব্যের জের ধরে কিছু আপেক্ষিক অস্পষ্টতার জন্ম হয়েছে। এটা পরিষ্কার করা আমাদের দায়িত্ব। তাই আমরা কিছু ছবি, কিছু তথ্য আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে তুলে ধরছি। এতে করে আমার বিশ্বাস আমাদের উপর নগরবাসীর আস্থার জায়গাটি শক্ত হবে। এমন অভিমত প্রকাশ করেন মেয়র।
মেয়র বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। একটি নিরপেক্ষ ও সচ্চ তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করুন। তদন্ত পরবর্তী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ডিএনসিসি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে। সকলকে সাথে নিয়ে আগামীর নিরাপদ ঢাকা গড়ার কথা দিচ্ছি।
এসময় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মেয়র বলেন, মার্কেটের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বহু ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হয়েছেন। আগামী কয়েক বছরেও এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীদের মেয়র আশ্বস্থ করে বলেন, আপনাদের দুর্গম যাত্রায় ডিএনসিসি সর্বাবস্থায় আপনাদের পাশে থাকবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই ধংস্তুপের মধ্য থেকেই আবার জীবন জেগে উঠবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আগামীকে সাজানোর দায়িত্ব আমার, আপনার, আমাদের। আমরা আপনাদের প্রতিপক্ষ নই। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আপনাদের জন্য যা যা করা দরকার ডিএনসিসি সককিছু করবে।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, মাকেটে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য মেট্রো গ্রুপ যে কাজ পেয়েছে তা নিয়ম কানুন মেনেই পেয়েছে। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মামলার কারণে তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। আমরা (সিটি কর্পোরেশন) এখনো তাদের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারিনি।
মার্কেটে কারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি আর কি বলবো। ‘আকালমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়’(বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ঠ)।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নাশাকতা এবং যথা সময়ে আগুন না নেভানোর অভিযোগ সিটিকর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের উপর। কিন্তু তাদের েিদ্য়ই তদন্ত কমিটি। কমিটিতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিও নাই। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেয়র তদন্ত কমিটিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ও আশপাশের ওয়ার্ডের কয়েকজন কাউন্সিলর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত গুলশান ডিএসসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার রাত ২টার দিকে ডিসিসির দুটি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন লাগার ১৫ মিনিটের মধ্যে কাঁচা মার্কেটটি ধসে পড়ে। পরে আগুন পাকা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ। তবে আগুন তখনো পুরোপুরি নেভেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরেও কাঁচা বাজারের ধ্বংসস্তূপের ভেতর ধোঁয়া বিরুতে এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পানি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
ডিসিসি কাঁচা ও পাকা মার্কেটে ৬ শতাধিক দোকান ছিল। আগুনে প্রায় আড়াইশ’ দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে এবং বাকিগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানানো হয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।