খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭: শরীয়তপুরে জেলা আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে এক বছরে ও পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। পাশাপাশি আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ভিতরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। পৌরসভা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অধিকাংশ কমিটি চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। এতে করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আ’লীগ নেতা কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে পাল্টা পাল্টি সভা সমাবেশ ও কর্মসূচী পালন করছে। শীর্ষ নেতারা বলছেন খুব শীঘ্রই কমিটি পূর্নাঙ্গ করে দেয়া হবে।
আওয়ামীলীগ দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালের ২৭ র্ফেরয়ারী শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শরীয়তপুর ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত হন পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সভাতি সাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় অনল কুমার দে কে। কমিটি গঠনের প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলে ও এখনো জেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতা কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ত্যাগী নেতা কর্মীদের দাবী কাল বিলম্ব না করে দ্রুত পূর্নাঙ্গ কমিটি করা হোক। এদিকে শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.সুলতান হোসেন মিয়া বার্ধক্য জনিত কারনে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম। তারঁ পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছেন আঃ সালাম হাওলাদার। সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম তালুকদা কে দলীয় শৃংখল ভঙ্গের অজুহাতে বহিস্কার করার কারনে দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুব রাজ্জাক। ফলে দু’টি পদই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। শরীয়তপুর পৌরসভার আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (মিল্টন) পাহাড় মারা যাওয়ায় পর থেকেই এ পদটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন এম এম মজলিস খান। একই ভাবে চলছে শরীয়তপুর জেলার অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ।
এ দিকে জেলা যুবলীগ কমিটি মেয়াদ উর্ত্তীর্ন হয়েছে অনেক আগেই। জেলা ছাত্রলীগের কর্মকান্ড চলছে ঢিলে ঢালা ভাবে। বিশেষ করে গত ৪ বছর পূর্বে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহবায়ক করা হয়েছে মোঃ মহসিন মাদবরকে। যুগ্ন আহবায়ক করা হয় টিপু কোতোয়াল ও রাশেদুল ইসলাম রাশেদ কে। ৩ মাসের আহবায়ক কমিটি দিয়ে কাযক্রম ২ বছর পরিচালনা করা হলেও এখনো কোন পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি।এ কারনে জেলা ছাত্রলীগের কর্মকান্ড চলছে ঢিলে ঢালা ভাবে। দীর্ঘদিন যাবত শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের র্শীষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দল চরম ভাবে দেখা দিয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন (অপু)ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি শরীয়তপুর পৌসভার সাবেক মেয়র আঃ রব মুন্সি। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীয়তপুর-১ আসনেরে সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক। দু’িট গ্রুপের সমর্থকরাই এখন জেলা সদরে সক্রিয় রয়েছেন। তারা যে যার অবস্থান ঠিক রেখে সমর্থকদেরকে জেলা কমিটিতে স্থান করে নেয়ার জন্য লবিং তদবীর করে যাচ্ছেন। দু’িট গ্রুপের শক্ত অবস্থানের কারনে জেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে বলে দলীয় সাধারন নেতা কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। গত ইউপি নির্বাচনে দু’টি গ্রুপের সন্বয়হীনতা ও গ্রুপিংয়ের কারনে মনোয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারী দল। যার ফলে শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলায় অধিকাংশ প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের পর থেকে এ যাবত কাল দলীয় সকল কর্মসূচী উভয় গ্রুপই আলাদা আলাদা ভাবে পালন করে আসছে। এতে করে দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে যেমন বেড়েছে দুরত্ব, তেমনি বাড়ছে দ্বিধা বিভক্তি। গত কয়েক মাস পূর্বে জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মোঃ মহসিন মাদবর নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে অক্রান্ত হয়। এ দিকে নড়িয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের কমিটি গুলো মেয়াদ উর্ত্তীন না হলেও এ কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বাদ দিয়ে একতরফা ভাবে কমিটি গঠন করার কারনে পদবঞ্চিত হয়েছে সক্রিয় নেতা কর্মীরা। এতে করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে চাপা ক্ষোভ।
আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি সাবেদুর রহমান খোকা সিকদারের বিরুদ্ধে সাবেক সভাপতি আঃ রব মুন্সি প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন। ফলে দলের ভিতরে আভ্যন্তরীন কোন্দল চরম ভাবে মাথা চাড়া দিয়েছে । আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের দাবী শীঘ্রই বসে পূর্নাঙ্গ কমিটি করে দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল ফজল মাষ্টার বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীয়তপুর-১ আসনেরে সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ কমে গেছে। রীতিমত এলাকায় আসে না। জেলা আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে পুনাঙ্গ কমিটি করতে বিলম্ভ হচ্ছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রত্রিুয়া চলছে। আশা করি খুব শিঘ্রই পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারবো।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন,রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকায় এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকার কারনে এক জায়গায় বসা হয়নি । এ কারনে কমিটি করতে বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া কমিটি পূর্নাঙ্গ করার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কারো কোন কোন্দল বা দ্বিমত নেই। শীঘ্রই কমিটি পূর্নাঙ্গ করা হবে।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সবাইকে নিয়ে বসে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে দিব।