Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, রবিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭: 10পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থায় স্বল্প মূলধনী ও লভ্যাংশ না দেওয়া কম্পানিগুলোর শেয়ার দাম হু হু করেই বাড়ছিল। গত বছরের শেষে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসেও জেড ক্যাটাগরির কম্পানির শেয়ার দামে উল্লম্ফলন হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে শেয়ার দাম। মন্দাবস্থা থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে জেড ক্যাটাগরির কম্পানির শেয়ারের পালে হাওয়া লাগে। কোনো কোনো কম্পানির শেয়ার দাম ‘অস্বাভাবিক’ হারে বেড়ে যায়। টানা বৃদ্ধির পর আবারও কমতে শুরু করেছে শেয়ারের দাম।
হিসাব বছর শেষে লভ্যাংশ না দিলে কম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হয়। তবে আবারও লভ্যাংশ দিলে অবস্থার উত্তরণ ঘটে। পুঁজিবাজারে ‘এ’, ‘বি’, ‘এন’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে কম্পানি তালিকাভুক্তি হয়। ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরি, ১০ শতাংশের কম ‘বি’ ক্যাটাগরি, লভ্যাংশ না দেওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরি ও তালিকাভুক্তির পর নতুন কম্পানির লেনদেন শুরু হলে ‘এন’ ক্যাটাগরি। তবে হিসাব বছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণা করলে ক্যাটাগরি পরিবর্তন হয়।
সূত্র জানায়, লভ্যাংশ দিতে না পারা কম্পানিগুলোকে শাস্তিস্বরূপ স্বল্প মূলধনী বা জেড ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হয়। জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনে কম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি এই কম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হয় না। আবার শেয়ার বিক্রি করতেও ৯ দিন অপেক্ষা করতে হয়। সাধারণত কোনো কম্পানির শেয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে লেনদেন করা গেলেও জেড কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় ৯ দিন পর।
অভিযোগ রয়েছে, জেড ক্যাটাগরি কম্পানির শেয়ার দাম বাড়ানো-কমানো নিয়ে কারসাজি বেশি হয়। বাজারে কারসাজি চক্র কম্পানির শেয়ার কিনে ব্রোকারেজ হাউসে জেড ক্যাটাগরির কম্পানি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য কিংবা গুজব ছড়িয়ে দামে প্রভাব বিস্তার করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো কম্পানির আর্থিক হিসাব সব সময় এক রকম হয় না। যেকোনো কারণেই উৎপাদন বা ব্যবসায় বিঘœ ঘটতে পারে। এ জন্যই বছর শেষে ক্ষতির মুখে পড়ে কিংবা লভ্যাংশ দেওয়ার মতো আয় থাকে না কম্পানির। পরবর্তী বছর আর্থিক হিসাব ভালো হবে, লভ্যাংশ ঘোষণা দেবে কিংবা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বাড়বে এমন তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার দাম প্রভাবিত করা হয়। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই না করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও হুজুগে শেয়ার কেনে। এতে শেয়ারের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে। গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার আগে কিনে রাখা শেয়ারে ভালো মুনাফা হয়। এতে কারসাজি চক্র কম্পানির শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যায়। আর জেড ক্যাটাগরির শেয়ার বিক্রিতে ৯ দিনের বাধ্যবাধকতায় সাধারণ বিনিয়োগকারী আটকে যায়। এই সময়ে আগে শেয়ার কিনে রাখা অনেকে বেরিয়ে গেলেও সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের শেষে ডিসেম্বরে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার দামে উল্লম্ফন ঘটে। বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এসব কম্পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা অনেকেই শঙ্কা করেছিল বাজার নিয়ে কারসাজির।
সম্প্রতি বাজারের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি ও জেড ক্যাটাগরির কম্পানি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির কম্পানির শেয়ার দাম বাড়ানো-কমানো নিয়ে কারসাজি হয়। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কম্পানির শেয়ার দামকে প্রভাবিত করে। বাজারে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার দাম বৃদ্ধি শুভ লক্ষণ নয়। জেড ক্যাটাগরির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। ‘

কোনো কম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ‘সংবেদনশীল’ তথ্য আছে কি না স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কম্পানি জানায় কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে কোনো কম্পানির জবাবে সন্তুষ্ট না হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। গত বছরের শেষ দিকে লভ্যাংশ দিতে না পারলেও জেড ক্যাটাগরির আট কম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তদন্তে নেমেছে বিএসইসি। গত ৬ ডিসেম্বর কমিশনের সাধারণ সভায় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ঋণাত্মক হওয়া সত্ত্বেও স্বল্প সময়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পায় রহিমা ফুড করপোরেশন, ফাইন ফুডস, বিডি অটোকারস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের। ওই সময়ে রহিমা ফুড করপোরেশনের বিষয়ে আলাদা তদন্ত হওয়ায় এটিকে বাদ দিয়ে অন্য সাতটি কম্পানির মূল্যবৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।
গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে দেখা গেছে, জেড ক্যাটাগরির ৪৬ কম্পানির মধ্যে ১৮ কম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। আর ২০ কম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। আটটি কম্পানির শেয়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত বছরের শেষ ও চলতি বছরের শুরুতে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে উল্লম্ফন ছিল। তবে এখন এই কম্পানিগুলোর শেয়ার দাম নিম্নমুখী হয়েছে। কোনো কম্পানির শেয়ার দাম টানা ৮-১০ কার্যদিবস বেড়েছে। এখন আবারও শেয়ার দাম টানা নিম্নমুখী হয়েছে।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দাম ক্রমাগতভাবেই বাড়ে। ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দাম বাড়ে পাঁচ টাকা। এই সময়ের পর তিন কার্যদিবস কমার পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তবে এখন আবারও কমতে শুরু করেছে শেয়ার দাম। ১৫ জানুয়ারি থেকেই ক্রমাগত বাড়ছিল আজিজ পাইপসের শেয়ার দাম। ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রমাগত বাড়ায় শেয়ারপ্রতি দাম বেড়েছে ১০.২ টাকা। এই সময়ের পর থেকে কমছে শেয়ার দাম। সাভার রিফ্যাক্টরিজের শেয়ার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ১৫ জানুয়ারি শেয়ার দাম ছিল ৫৪.৭ টাকা। সাত কার্যদিবসে দাম বেড়েছে ২২ টাকা। এখন ক্রমাগত কমছে শেয়ার দাম। ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার দামও ক্রমাগত বেড়েছে। ২১ ডিসেম্বরে চার টাকার শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট টাকা। ১৮ জানুয়ারি থেকে দাম কমছে। বঙ্গজ লিমিটেডের শেয়ার দাম গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই বেড়েছে। জানুয়ারি শেষে ক্রমাগত কমছে শেয়ার দাম। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার দাম কমেছে ১.৩ টাকা। বিডি ওয়েলডিং ইলেকট্রনিকসের শেয়ার দাম ২৮ ডিসেম্বর থেকেই বেড়েছে। তিন দিনেই শেয়ার দাম বেড়েছে। এই সময়ের পর থেকে ক্রমাগত কমছে দাম। বিচ হ্যাচারির শেয়ার দাম ২৭ ডিসেম্বর থেকে বাড়তে থাকে। পাঁচ কার্যদিবস দাম বাড়ে। এরপর তিন দিন দাম কমার পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়। এভাবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা উত্থানের পর ক্রমাগত কমছে লেনদেন। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কম্পানির শেয়ার দাম গত ডিসেম্বর থেকে বেড়েছে। তবে আবারও দাম কমতে শুরু করেছে। জিলবাংলা শেয়ার ১২ ডিসেম্বর থেকেই বেড়েছে। আবার কমতে শুরু করেছে।