খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া সেই আলোচিত কোটি টাকা মূল্যের বিলাশ বহুল রহস্যময় প্রাডো গাড়ির মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গাড়ির মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাতীয় পার্টির নেতা খন্দকার হেফজুর রহমান। গত দেড় বছর আগে ঢাকার গুলশান থেকে গাড়িসহ তিনি গুম হন। দেহরক্ষী, গাড়ির চালককে পাওয়া গেলেও জাতীয় পার্টির নেতা খন্দকার হেফজুর রহমানের সন্ধান এখনো মেলেনি।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ার দস্যুনারায়ণপুর বাজার সংলগ্ন শীতলক্ষা নদী থেকে গুম হওয়া নেতার ব্যবহৃত প্রাডো গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাতে তার স্ত্রী সালেহা বেগম ঢাকার সিআইডির সহযোগিতায় কাপাসিয়া থানায় এসে গাড়িটি শনাক্ত করেন। কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর এতে রহস্যঘেরা কোটি টাকার প্রাডো গাড়ির রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
খন্দকার হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ঢাকার বাড্ডার ৬৭/৩ নম্বর বাড়ি থেকে তার প্রাডো গাড়ি নিয়ে বের হন। তিনি দেহরক্ষী ক্যাপ্টেন শওকত, আবদুল আওয়াল, চালক শাহ আলমকে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে গুলশানের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িটি গুলশান-১ এর চেকপোস্টের লিং রোডের মাথায় পৌঁছলে সাদা পোশাকধারী অপরিচিত কয়েকজন গাড়িটি গতিরোধ করে। এ সময় তারা অস্ত্রের মুখে দেহরক্ষী ও চালককে নামিয়ে দিয়ে তার স্বামী হেফজুর রহমানকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। ওই সময় থেকে স্বামীর সন্ধান এবং গাড়িটির কোনো হদিস পাননি বলে তিনি জানান।
এ ঘটনায় সালেহা বেগম বাদী হয়ে অপহরনের পর দিন গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। নিরুপায় হয়ে সালেহা বেগম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবর প্রতিকার চেয়ে একটি আবেদন করেন। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানা পুলিশ মামলা (মামলা নং-৬৩) গ্রহণ করে। ওই সময় মামলাটি তদন্ত করেন গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী হাসান। কিন্তু ওই সময় তিনি এই মামলার কোনো অগ্রগতি বা রহস্য উন্মোচন করতে পারেননি। পরে মামলাটি তদন্ত করেন ঢাকার সিআইডি গুলশান উত্তর ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল কাইউম। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ১৯ জানুয়ারি কাপাসিয়ার দস্যুনারায়ণপুর বাজার সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর মাছের ঘের থেকে হারিয়ে যাওয়া গাড়িটি কাপাসিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে। গাড়িতে ব্যবহৃত নম্বর প্লেটে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-২০২৯ লেখা ছিল। অনুসন্ধান করে এই নম্বরটির মালিকের কোনো হদিস পায়নি পুলিশ। পরে কাপাসিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুলাল মিয়া আদালতের অনুমতি নিয়ে গাড়ির চ্যাসিস ও ইঞ্জিন নম্বর উল্লেখ করে বিআরটিএ-তে অনুসন্ধান চালায়। এতে প্রকৃত মালিক ও গাড়ির নম্বর পাওয়া যায়। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৭৫৬, রেজিস্ট্রেশন তারিখ ২৭-১১-২০০৪।
নিখোঁজ হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম আরো জানান, তিনি জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাইসাইকেল প্রতীকে অংশ নেন।
সিআইডি গুলশান উত্তর ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল কাইউম সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি নেতা হেফজুর রহমান গুম হওয়া রহস্য এখনো উদঘাটন করা যায়নি। তবে গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় এখন রহস্য উদঘাটন সহজ হবে।