Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: 23কুলেন্দু শেখর দাস,সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম গাফিলতিতেপ্রতিবছরের মতো এবারো সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ১৩ টি হাওরে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ফসল রক্ষা বেড়ি বাঁধ নির্মানের অধিকাংশ কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় লক্ষাধিক কৃষক পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অধিকাংশ বাঁধে এক টুকড়ি মাটি না দিয়ে লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পাউবো কর্মকর্তারা। এভাবে সরকার কর্তৃক কোটি কোটি টাকা হাওরপাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র ভরসা বোরো ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সময়মতো বাধঁ নির্মাণ না হওয়ার কারণে ফসল ডুবির ঘটনা ঘটলেও তাদের টনক নড়েনি। ফলে চলতি মৌসুমে ও বোরো ফসল রক্ষা নিয়ে কৃষকরা রয়েছেন হতাশায়। জামালগঞ্জ পাকনা হাওরের ছোট-বড় ১৬ টি, সানোয়া ডাকুয়া হাওরের ৬ টি ও হালির হাওরে ২৭ টি বেড়ি বাঁধ ও ক্লোজারের মধ্যে ২০ শতাংশ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষুভে ফোঁসছেন কৃষকরা।
কৃষকদের মতামতের তুয়াক্কা না করে হাওরে জমি নেই, এমন লোকদের নিয়ে উপজেলা ফসল রক্ষা কমিটি গঠন করায় কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর শংঙ্কা বিরাজ করছে। সরেজমিনে হাওরের বিভিন্ন বাঁধ ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় কোথায় হাওরের বাঁধ নির্মানে তেমন কোন কাজ চোখে পড়েনি। নাম মাত্রে কয়েকটি বাঁধে কাজ চললেও তা সন্তোষ জনক নয় বলে কৃষকদের দাবী। বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মনের কাজ দ্রুত ও ঠেকসই সম্পন্ন না হলে অকাল বন্যায় (পাহাঢ়ী ঢলে) শুধু জামালগঞ্জ অংশেই প্রায় ৩’শ কোটি টাকার সোনালী ফসল তলিয়ে যাবে। বছরের একটি মাত্র বোরো ফসলকে ঘিরেই হাওরের কৃষকদের যত স্বপ্ন। ফসল ভালো হলে আনন্দ উৎসবে সময় কাটান তারা। পাহাঢ়ী ঢল (অকাল বন্যা) শীলাবৃষ্টি, খড়াসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব সময় কৃষকদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সুনামগঞ্জের বোরো ফসল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গত মওসুমে ফসল হারিয়ে নতুন ফসলের আসায় অনেক কৃষকই পথে বসে মহাজনী দাদন, চড়া সুদে কৃষি জমি আবাদ করে কোন রকম দিনযাপন করে সোনালী ফসল ঘরে তুলতে স্বপ্নে জাল বুনছেন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারো পাউবোর চরম গাফিলতি, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে সোনালী ফসল ঘরে ওঠবে কি-না তা নিয়ে শংসয়ে রয়েছেন ফসল নির্ভর হাজার-হাজার কৃষক ও গৃহস্থ পরিবার। চলতি মৌসুমে বোরো ফসলের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা, হাইব্রীড উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ৫৯২৫ মে:টন, উফসী জাতীয় ফসল ৯১৪১৫ মে:টন, স্থানীয় জাতের ফসল ৮৮১ মে:টনসহ অন্যান্য ফসল প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন । যার বাজার মুল্য হবে প্রায় ৩’শ কোটি টাকা। পাহাঢ়ী ঢল (অকাল বন্যা) এর হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য প্রতি বছরই পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টিকাদারী প্রতায় বাঁধ-বেড়ি বাঁধ নির্মান করে আসছে। সম্প্রতি নাম মাত্রে কয়েকটি বাঁধের কাজ শুরু করলেও তা চলছে কচ্চপ গতিতে।
এ ব্যপারে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার ইফসুফ আল-আজাদ বলেন, “জামালগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মান কমিটি অথর্ব”। যাদের এই হাওরে কোন জমি নেই, তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এগুলো কৃষক-কৃষাণী মারার আলামত। পাউবোর অধিনে সব কাজই চুরি বিদ্যা। হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ফসল রক্ষার দাবী জানান তিনি। উপজেলার ৯ সদস্যের কমিটিতে থাকা উপজেলা প্রকল্প বায়বায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহাদাৎ হোসেন ভুইয়া বলেন, আমরা শুধু কমিটিতেই থাকি আসলে আমাদের কোন তদারকির দায়িত্ব নেই। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড.সাফায়েত হোসেন সিদ্দকী বলেন, পাউবোর কাজে আমাদেরকে শুধু মিটিং করার সময় ডাকা হয়। উপস্থিতির স্বাক্ষর নিলেও মতামতের কোন গুরুত্ব দেয়না। জামালগঞ্জের হাওরের দায়ীত্বে থাকা পাউবো’র কর্মকর্তা রঞ্জন দাসের কাছে কত টাকার কাজ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি লুকুচুরি করে সময় ক্ষেপন করে বলেন পরে জানাবো। সময় মতো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। হাওরের এস.ও নিহার রঞ্জন ও আলী রেজারর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। দ্রুত গতিতে বাঁধের কাজ করলে গুণগতমান সঠিক হবে কি-না তার কোন উত্তর দেননি রঞ্জন দাস।
এ ব্যপারে সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধরমপাশা-তাহিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন চরম ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে বলেন, বাঁধের কারণে ফসলের কোন ক্ষতি হলে দায়ভার পাউবোসহ পিআইসি কমিটিকেই বহন করতে হবে।