Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: 25ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ফরিদ হত্যাকারিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সোমবার দুপুর ১২টা উপজেলা চত্তর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় উপজেলা কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম এ্যাডভোকেট, ভূঞাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুৎ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম আজহার, আওয়ামী লীগ নেতা মর্তুজ আলী, আনোয়ার হোসেন জিন্নাহ, রহিজ উদ্দীন আকন্দ, ইউসুব চকদার প্রমুখ। বক্তারা অভিলম্বে হত্যাকারিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখমুখি করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য গত বছর ৬ডিসেম্বর সকালে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ফরিদের গলা কাটা লাশ তাঁর নিজ বাড়ী ভারই গ্রামের পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। আগের দিন রাতে তিনি নিখোঁজ হন। ওই দিন নিহতের ছোট ভাই ফজলুল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামী করে ভুঞাপুর থানায় মামলা করেন। ১৫ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক তাহেরুল ইসলাম তোতা, যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য আব্দুল হামিদ ভোলা, অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সরকারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে সম্পূরক আরেকটি মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত থানা ও আদালতে সম্পুরক দুটি মামলা একত্রে তদন্তের আদেশ দেন। মামলা দুটি তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেন। তাদের তদন্তে বেড়িয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এর মধ্যে এ হত্যার পরিকল্পনাকারী ও ঘাতকদের অর্থদাতার তালিকায় রয়েছে দলের শীর্ষ চার নেতার নাম। এ মামলায় আটককৃত আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দ পুলিশ সুত্রে জানান, এ হত্যাকান্ডের সাথে দলীয় নেতাদের সম্পৃত্ততা রয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারী আটককৃত আসামী ভারই মধ্যোপাড়া গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মাঈনুল হাসান ওরফে মাসুদ এহত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেন। তার জবানবন্দিতে জানান, কিছু নেতার সাথে মতবিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটে। ঘটনার এক মাস আগে পরিকল্পনা করা হয়। পাঁচদিন আগে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। শপথ করা হয় পুলিশের কাছে কেউ ধরাপড়লে অন্যদের নাম প্রকাশ করবে না। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম বলেন। টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রুপন কুমার দাস মাসুদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
গত ১২ফেব্রুয়ারী এ ঘটনার সাথে জড়িত আটককৃত আসামী মকবুল হোসেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঘাতকদের সাথে হত্যার চুক্তি করেন এবং ওই নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হত্যাকারীদের কাছে পৌঁছে দেন। নেতাদের ও খুনিদের মধ্যে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেন। মকবুল উপজেলা অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং ভারই দক্ষিণপাড়া মৃত হামিদ তরফদারের ছেলে।
এ হত্যা মামলায় আটক শওকত হোসেন ওরফে সৈকত গত ৪ফেব্রুয়ারী আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, ঘটনার ১মাস আগে ফরিদ হত্যার পরিকল্পনা করে। শওকত ও তার সহযোগীদের দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ওই তিন নেতা। তারা এক লাখ টাকা অগ্রীম দেন। ঘটনার পাঁচ দিন আগে বৈঠক করেন এবং শপথ নেন যে, কেউ ধরা পড়লে অন্যকারো নাম প্রকাশ করবে না। ঘটনার দিন শওকত নিজ হাতে ফরিদের গলা কেটে হত্যা করে। পরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ফরিদের মুঠোফোনসহ সব আলামত ভারই গ্রামে এটিবি নাম ইটভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হয়। সৈকত ভারই মধ্যোপাড়া ওয়ারেজ আলীর ছেলে।
এ মামলার আটক আরেক আসামী ভারই মধ্যপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে নাসির উদ্দীন রানা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি আদালতে জানান, ফরিদ হত্যার পরিকল্পনা হয় এক নেতার বাসায় বসে। নেতাদের টাকা পেয়ে এ হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। ফরিদের গলা কাটার সময় সে পা ধরে রেখে ছিল।
এদিকে এসব তথ্য মিডিয়ায় আসার পর থেকে অভিযুক্ত নেতারা আতœগোপনে চলে গেছেন। এর মধ্যে একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, একজন সদস্য এবং একজন নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য রয়েছেন। এসব জনপ্রতিনিধিরা প্রায় এক মাস যাবৎ অনুপস্থিত থাকার কারণে ব্যহত হচ্ছে দাপ্তরিক নানা কার্যক্রম।