খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০১৭: সাংগঠনিক পুনর্গঠনেই মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। নতুন কমিশন গঠনের পর দলটির নেতারা এখন মুখর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে। সা¤প্রতিক সময়ে দলীয় এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার চাপ ছিল দলের অভ্যন্তরে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জোটের তরফে অন্তত একদিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তাবনা ছিল বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের সামনে। কিন্তু বারবার সতর্কভাবেই সে দাবি ও প্রস্তাবনা এড়িয়ে গেছে বিএনপি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দুইঘণ্টার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তারা। দলটির এমন ধীরে চলো নীতির নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতিতে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি ও সাংগঠনিকভাবে সুসংহত হওয়ার জন্য পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। বিএনপি সাংগঠনিক পুনর্গঠন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য জানা গেছে।
নেতারা জানান, দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত, তৃণমূলের ঐক্য অটুট, গতিশীল নেতৃত্ব বাছাই ও কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নেয়া হয়েছিল পুনর্গঠনের উদ্যোগ। সে বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনে প্রশাসনের বাধা, নেতাদের মামলা জটিলতা, দলের জাতীয় কাউন্সিলসহ নানা কারণে বারবার পিছিয়েছে সে সময়সীমা। সারা দেশে দলটির ৭৮ জেলা ও মহানগর ইউনিটের মধ্যে প্রথম দেড় বছরে পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৫টি জেলায়। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শুরুতেই দলের নীতিনির্ধারক ফোরামে প্রক্রিয়াটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারই প্রেক্ষিতে নতুন বছরের প্রথম দুই মাসেই পুনর্গঠন করা হয় ৯টি জেলা ও দুইটি অঙ্গ সংগঠন।
বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটা নিয়মিত কার্যক্রম। সংগঠন ঠিক থাকলে আন্দোলন কিংবা নির্বাচন যে কোনো পদক্ষেপই সফল হয়। আমরা আগামী নির্বাচন এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য যে কোনো আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাই সাংগঠনিক পুনর্গঠনেই জোর দিচ্ছি। আগামী দুই মাসের মধ্যেই অন্তত ১৫টি জেলা এবং কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
২০১৭ সালের প্রথম সপ্তাহেই দুইটি জেলা কমিটির অনুমোদন দেয় বিএনপি। ৪ঠা জানুয়ারি দলের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলমকে সভাপতি ও মাজহারুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন কমিটিতে পরিবর্তন এসেছে সভাপতি পদে। দুইদিন পর ৬ই জানুয়ারি নাজমুল হক সনিকে সভাপতি ও জাহিদুল ইসলাম ধলুকে সাধারণ সম্পাদক করে নওগাঁ জেলা বিএনপির ৩০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। ৩১শে জানুয়ারি অনুমোদন পায় ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট ঝিনাইদহ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নতুন কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান সভাপতি পদে বহাল থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আবদুল মালেক। কিশোরগঞ্জ, নওগাঁ ও মেহেরপুর তিন জেলাতেই সভাপতি পদে পরিবর্তন এলেও বহাল রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। ২৯শে জানুয়ারি মাসুদ অরুণকে সভাপতি ও আমজাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয়েছে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট মেহেরপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। নতুন কমিটিতে দুই পদেই এসেছে পরিবর্তন। ১৩ই ফেব্রুয়ারি চারটি জেলা ও মহানগর কমিটির অনুমোদন দেয় বিএনপি। এর মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি এবং আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপিতে সভাপতি পদোন্নতি পেয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অন্যদিকে মহানগর বিএনপিতে পরিবর্তন এসেছে সভাপতি পদে। অন্যদিকে এসএম শফিকুল আলম মনাকে সভাপতি ও আমীর এজাজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় খুলনা জেলা বিএনপি, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানকে সভাপতি ও মাহবুব আলমগীর আলোকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় নোয়াখালী জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি। খুলনা জেলা বিএনপিতে সভাপতি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন নতুন মুখ। ১৮ই ফেব্রুয়ারি গোলাম নবী আলমগীরকে সভাপতি ও হারুন অর রশিদ ট্রুম্যানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় ভোলা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। ভোলায় পরিবর্তন এসেছে সাধারণ সম্পাদক পদে। এর আগে ২০১৬ সালের শেষ তিন মাসেও বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি পুনর্গঠন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ১লা ডিসেম্বর মোস্তফা কামাল মন্টুকে সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম নূপুরকে সাধারণ সম্পাদক করে অনুমোদন দেয়া হয় ঝালকাঠি জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। ঝালকাঠি জেলা সভাপতি পদে এসেছেন নতুন মুখ। ২৭শে ডিসেম্বর অনুমোদন দেয়া হয় রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট এবং তোফাজ্জল হোসেন তপুকে সভাপতি ও মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি এবং জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদেই আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া ২৮শে ডিসেম্বর মাহমুদুল হক রুবেলকে সভাপতি ও হযরত আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় শেরপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। ২৮শে নভেম্বর শফিকুর রহমান কিরণকে সভাপতি ও সরদার কেএম নাসির উদ্দিন কালুকে সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট শরিয়তপুর জেলা কমিটি। ২০১৬ সালের ২৯শে আগস্ট ঢাকা ও দিনাজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও খন্দকার আবু আশফাককে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা জেলার ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক ও এ জেড এম রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট দিনাজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে দুইটি অঙ্গ দলও পুনর্গঠন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে- ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি গঠন করা হয় যুবদলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস কমিটি। নতুন কমিটিতে সাইফুল আলম নিরব সভাপতি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সাধারণ সম্পাদক ও মামুন হাসান সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। একই সঙ্গে এস এম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি ও সফিকুল ইসলাম মিল্টনকে সাধারন সম্পাদক করে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর এবং রফিকুল ইসলাম মজনুকে সভাপতি ও গোলাম মওলা শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৫ সদস্যবিশিষ্ট নিউক্লিয়াস কমিটি গঠন করা হয়। যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে পদোন্নতি পেলেও পাঁচ সদস্যদের নিউক্লিয়াস কমিটির বাকি চারজনই নতুন মুখ। ১৯শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মামুন আহমেদকে সভাপতি ও অভিনেতা হেলাল খানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাসের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন দুই নতুন মুখ। একজন শিক্ষাবিদ ও একজন অভিনেতার নেতৃত্বে এবারের কমিটি গঠনে শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত ব্যক্তিদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর গঠন করা হয় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আলী। মানবজমিন