খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০১৭: বরগুনায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ রোকেয়া বেগমকে (৪৫) শিকলে বেঁধে শিশু মেয়ের সামনে নির্যাতন করেছেন স্বামীর পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী মোশারফ ও আসমা নামে তার এক দেবরের স্ত্রীকে আটক করেছে বরগুনা থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত দশটার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার আট নম্বর ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা গ্রামে স্বামী মোশারফ খলিফার বাড়ির তালাবদ্ধ ঘর থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় শিকল কেটে গৃহবধূ রোকেয়া বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। নির্যাতিতা গৃহবধূ রোকেয়া তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের মোনসাতলী গ্রামের আক্কাস তালুকদারের মেয়ে। তাঁর স্বামী মোশারেফ খলিফা (৫০) ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি থাকেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার একটি ইটভাটায়। ঘটনার সময় রোকেয়ার স্বামী মোশারেফ ছিলেন কর্মস্থল ইটভাটায়।
ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই প্রতি বছর যৌতুকের টাকা চাইতেন স্বামী মোশাররফ খলিফা। তাঁর বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে যৌতুক দেওয়ার জন্যে চাপ দিয়ে আসছিলেন তাঁর স্বামী মোশারেফ খলিফা। জমি বিক্রি করতে অস্বীকার করায় তাঁকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্যাতন সইতে না পেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছোট মেয়ে আফিফাকে নিয়ে বাবার বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তাঁর দেবর মো. আলতাফ খলিফা (৪০), ভাসুরের ছেলে মো. আল আমিন খলিফা (২৫), মো. ইমরান খলিফা (২৭) ও মো. কবির খলিফা তাঁকে মারধর করে পায়ে শিকল দিয়ে খাটের সঙ্গে তালা মেরে রাখেন। খবর পেয়ে তালতলী থেকে তাঁর বাবা মো. আক্কাস তালুকদার ও ভাই মো. ইয়াকুব তালুকদার ছুটে আসেন। তাঁকে উদ্ধার করতে চাইলে তাঁদেরও মারধর করে আহত করেন তাঁরা।
নির্যাতিতা রোকেয়ার পিতা আক্কাস তালুকদার জানান, নির্যাতনের খবর পেয়ে মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে এসে তিনিও মারধরের কবলে পরেন। দিশেহারা হয়ে বরগুনা থানা পুলিশের সহযোগিতা নেন তিনি। এ ঘটনায় জামাতা মোশারেফসহ আল-আমিন, আল-আমিনের স্ত্রী, ইমরান ও কবিরকে আসামি করে ওই গৃহবধূ থানায় মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
বরগুনা থানার ওসি এস এম মাসুদুজ্জামান বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি গৃহবধূ রোকেয়া বেগমকে উদ্ধার করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ইমরান খলিফার স্ত্রী আসমা বেগমকে এবং শুক্রবার সকালে নির্যাতিতার স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোকেয়া ও তার শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বরগুনা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাবউদ্দিন বলেন, রাতে পুলিশ ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।