Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

ap

খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০১৭ (সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার): ০১লা এপ্রিল-আজ, এপ্রিল ফুল ডে। ইংরেজীতে April Fools DAY      বলে এবং সংক্ষেপে “এপ্রিল ফুল” বলে। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের ০১ তারিখে পালিত হয় এপ্রিল ফুল ডে। অনেক সময় অল ফুলস ডে বলেও উদযাপন করা হয়। বন্ধু-বান্ধবকে বোকা বানানো, নিকট লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, পড়শীদের ফাঁকি দেওয়া, প্রিয়জনদের সাথে মিথ্যা বলা বা ধোকা দেওয়া হয় এই এপ্রিল ফুল ডে-তে। এমনকি কৌতুক করার জন্যও এই দিন স্বীকৃত।

এপ্রিল ফুল ডে-র কিছু প্রিকার্সর হলো-
ক) হিলারিয়া উৎসব (রোমান)
খ) হোলি উৎসব (ভারতীয়)
গ) ফুল ফিস্ট (মধ্যযুগীয়)
এসব প্রিকার্সর ছাড়াও এর সাথে জড়িত চসারের ক্যান্টারবারি টেলসও (১৯৩২)। তার লেখা বইয়ের নানস প্রিস্টন টেইলএ ‘এপ্রিল ফুল ডে’-র কথা খুঁজে পাওয়া যায়।

ইরানের পার্সি ক্যালে-ারের হিসেব অনুযায়ী, নববর্ষের ১৩ তম দিনে মজা বা আনন্দ করা হয়। এই দিনটি আবার গ্রেগরিয়ান ক্যালে-ারের হিসেবে ০১লা এপ্রিল বা ০২রা এপ্রিল সদৃশ্য। ঐতিহাসিকদের মতে, ফ্রান্সে ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে নতুন ক্যালে-ার চালু করাকে কেন্দ্র করেই এই ‘এপ্রিল ফুল ডে’র সুচনা হয়। ফ্রান্সের নতুন চালু এই ক্যালে-ারে ০১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ০১লা জানুয়ারীকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এই সিদ্ধান্তে কিছু লোক বিরোধিতা করে। আর এই জন্যই যারা পুরানো ক্যালে-ারের হিসেব অনুযায়ী ০১লা এপ্রিলকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে হিসেব করে দিন গণনা করে আসছিল তাদেরকে প্রতিবছর এই ০১লা এপ্রিল ‘বোকা’ উপাধি দেওয়া হতো।

আবার ফ্রান্সে “এপ্রিল ফুল ডে” পালিত হয় এবং এর সাথে সর্ম্পক আছে মাছের। ইংরেজী এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মাছের ডিম থেকে ফুটে বাচ্চা বের হয় এবং এই বাচ্চা মাছগুলিকে সহজে বোকা বানিয়ে ধরা যায়। এজন্যই ফ্রান্সীয়রা ০১লা এপ্রিল পালন করে “এপ্রিল ফুল ডে” বা এপ্রিলের মাছ। এই দিন বাচ্চারা একজন অন্যজনের পিঠে তাদের অজান্তেই কাগজ দিয়ে বা অন্য কোন উপাদান দিয়ে বানানো মাছ লাগিয়ে বা ঝুলিয়ে দেয় এবং তা যখন অন্যরা দেখে তখন তারা বলে উঠে “এপ্রিল ফুল ডে”এবং চিৎকার করে।

যুক্তরাজ্যে ‘এপ্রিল ফুল ডে’-তে প্রাপককে অর্থাৎ যিনি এপ্রিলের বোকা হন তাকে “এপ্রিল ফুল” বলে হাসি-তামাশা ও চিৎকার করে প্রকাশ করা হয়।

০১লা এপিলের বোকা বানানো বা ধোকা দেওয়ার উপর অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। ০১লা এপ্রিল ২০১৪, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকুইনাস কলেজের এক প্রফেসর নিয়ম করেন যে ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোন ছাত্র-ছাত্রীর ফোন বেঁজে উঠলে লাউড স্পিকারে ফোনে কথা বলতে হবে। আর ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক ছাত্রীর ফোন বাজে এবং সে ফোনে খবর আসে যে ছাত্রীটি গর্ভবতী হয়েছে। তখন লজ্জিত প্রফেসর ক্ষমা প্রার্থনা করলে ছাত্রীটি বলেন তিনি তার প্রগেনেন্সি টেস্টের ফলাফল আশা করছিলেন। সন্তান জন্ম নিলে তিনি তার নাম রাখবেন ‘এপ্রিল ফুল’! অর্থাৎ ফোনের আলাপটি ছিল সাজানো।

এভাবেই দেশে দেশে মিথ্যা, ধোকা, কৌতুক, প্রতারণা বা ছলনা করে প্রতি বছর ০১লা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন হয়।

তবে, প্রথম বোকা ছিল কারা ফ্রান্স, বৃটেন, মেক্সিকো, সুইডেন না-কি ভারতীয়রা। এই প্রশ্নে উত্তর ইতিহাসের অনেক ঘটনার মতো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে ‘এপ্রিল ফুল ডে’-র ঘটনাসমূহে রস, কৌতুক, বোকা বানানো, ধোকা দেওয়া আর আমোদ-প্রমোদের পাশাপাশি রয়েছে বেদনার ইতিহাস এবং সেই বেদনা হচ্ছে মুসলমানদের বেদনা। ‘এপ্রিল ফুল ডে’-র সৃষ্টির সাথে রয়েছে মুসলমানদের করুণ ও মর্মস্পর্শী এক ইতিহাস। ইতিহাসটি হলো-

ইউরোপের স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক-বিন-যিয়াদ এর নেতৃত্বে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে ইসলামী পতাকা উড্ডীন হয় এবং মুসলিম সভ্যতার গোড়া পত্তন হয়। প্রায় আটশত বছর পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের শাসন বহাল থাকে। পরে ধীরে ধীরে মুসলিম শাসনও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মুসলিম শাসকরা ভোগ বিলাসে মত্ত থেকে আস্তে আস্তে ইসলাম থেকে দুরে সরে যেতে থাকে। ফলে আশেপাশের মুসলিম দেশগুলোও ধীরে ধীরে মুসলমানদের হাত ছাড়া হয়ে খ্রিস্টানদের দখলে যেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আসে স্পেনের পালা। স্পেনের পালায় মুসলিম শাসনে নেমে আসে পরাজয়। খ্রিস্টানরা গ্রাস করে নেয় স্পেনের বিজয় পতাকা। এক পর্যায়ে মুসলিম নিধনের লক্ষে খ্রিস্টান রাজা ফার্ডিন্যা- বিয়ে করেন পর্তুগীজ রানী ইসাবেলাকে। এই বিয়ের ফলে মুসলিম বিরোধী দুই বৃহৎ খ্রিস্টীয় শক্তি সম্মিলিত শক্তি রূপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে। রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যা- খুঁজতে থাকে স্পেন দখলের উপযুক্ত সময় এবং সে সুযোগ পেয়েও যায়।

সময়টা ছিল ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ। এই ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে রাজা ফার্ডিন্যা- ও রানী ইসাবেলার সেনাবাহিনী সম্মিলিতভাবে স্পেন আক্রমণ করেন এবং তৎকালীন সময়ে মুসলিম সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল গ্রানাডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এক পর্যায়ে মুসলমানদের অসর্তকতার কারনে খ্রিস্টান বাহিনী ঘিরে ফেলে গ্রানাডা। তাদের সম্মিলিত আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুসলমানরা গ্রানাডা নগরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। গ্রানাডার তিনদিকে খ্রিস্টান বাহিনী ঘিরে রাখে এবং একদিকে থাকে মহাসমুদ্র। এই মহাসমুদ্রই থাকে একমাত্র মুসলমানদের বাঁচার পথ। অবরুদ্ধ মুসলমানরা বাচাঁর জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। মুসলমানদের এই অসহায় অবস্থায় সচতুর রাজা ফার্ডিন্যা- প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি ঘোষণা দেন যে, প্রধান ফটক খুলে দিয়ে যারা অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে বা সমুদ্র পাড়ে রক্ষিত নৌযানগুলোতে আরোহন করবে তাদেরকে সব রকমের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রাজা ফার্ডিন্যা- এর এ ঘোষণা শুনে মুসলমানরা সরল মনে প্রধান ফটক খুলে দিয়ে অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদে আশ্রয় নেয় এবং কেউ কেউ সমুদ্র পাড়ে রক্ষিত নৌযানগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু ইতিহাসের নরপিশাচ রাজা ফার্ডিন্যা- তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নির্দেশ দেন সবগুলো মসজিদে তালা লাগিয়ে দেওয়ার এবং নৌযানগুলিকে মাঝ দরিয়ায় ভাসিয়ে দেওয়ার। এরপর বিশ্ব মানবতাকে পদদলিত করে রাজা ফার্ডিন্যা- এর নির্দেশে একযোগে মসজিদগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং মধ্য সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হয় নৌযানগুলোকে। এর ফলে অগ্নিদগ্ধ বা আগুনের লেলিহান শিখার মাঝে ও পানিতে হাবু-ডুবু খাওয়া লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী-পুরুষ আর শিশুর আত্ম চিৎকারে ভারি হয়ে উঠে স্পেনের আকাশ-বাতাস। মহুর্তের মধ্যে নির্মম, নিষ্ঠুর-অমানবিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় প্রায় সাত লক্ষ মুসলমানদের তাজা প্রাণ। এর মধ্যে থেকে দু’একজন কোনমতে বাঁচলেও তাদেরকে জোড়পূর্বক খ্রিস্টান বানায়। এ ঘটনার মধ্যদিয়েই ইতি ঘটে স্পেনের আটশত বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাস আর রচিত হয় নির্মম, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য, জঘন্যতম মানবতা লঙ্ঘনের হৃদয়বিদারক, লোমহর্ষক এক ইতিহাস। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ০১লা এপ্রিল। সেদিন রাজা ফার্ডিন্যা- আনন্দে উল্লসিত হয়ে বলেছিলেন, “হায় মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা।” তারপর থেকে মুসলমানদের বোকা বানানোর এই বিশ্বাসঘাতকতা বা শঠতা স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ০১লা এপ্রিল এ দিনটিকে তারা হাসি-ঠাট্টা, মিথ্যা প্রেম দেওয়া-নেওয়ার দিন হিসেবে পালন করে আসছে এবং তারা আরো বিভিন্ন রকমের রসিকতার খেলাও খেলে থাকে-যা মুসলমানদের কাছে বড় করুণার-বড় বেদনার। আজ অবধি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বে বোকা বানানোর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ দিবস উপলক্ষে ‘এপ্রিল ফুল ডে’ সম্বন্ধনীয় বিশেষ কার্ড ও নিমন্ত্রণ পত্র বের হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং এর জন্য খরচ করা হয় হাজার হাজার ডলার। আমাদের বহু সংস্কৃতিম-িত এ উপমহাদেশে যে কোন উৎসবকে সাদরে পালন করা হয়। ইতিহাস জেনে হোক বা না জেনে হোক আমাদের পূর্বসূরীরা কোন না কোনভাবে এ দিবসের সাথে কোন একসময় সম্পৃক্ত হয়েছে। আজও (ইতিহাস জেনে হোক বা না জেনে হোক) এ দিবসটি আমাদের দেশে পালিত হয় (তবে, আজও আমাদের দেশে অনেকেই এ দিবস পালন করেন না)।

লেখকঃ মোঃ মিজানুর রহমান-(সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার)