Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10kখােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১ এপ্রিল ২০১৭: প্রাচীন একটি প্রবাদ আছে যে, ‘আমাকে ৭ বছরের একজন ছেলে দাও আমাকে, আমি তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে দিব’। এর দ্বারা এটাই ইঙ্গিত করে যে, আমাদের ব্যক্তিত্ব ছোট বেলা থেকেই গড়ে ওঠে এবং এর পর আর খুব বেশি পরিবর্তিত হয়না।

কিন্তু মস্তিষ্কের নমনীয়তা (পরিবর্তনের সামর্থ্য) নিয়ে অনেক বছরের পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে এই ধারণাটি আসলে সত্যি নয়। আমাদের ব্যক্তিত্ব আসলে পাথরের মত শক্ত হয়ে সেট হয়ে যাওয়া কোন বিষয় নয়। এটি জীবনের যেকোন পর্যায়েই পরিবর্তন করা সম্ভব বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় – অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট, সাইকোথেরাপি, রিফ্লেক্টিভ থেরাপি, ইন্টার-পার্সোনাল থেরাপি এবং কগ্নিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) নিলে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে নিউরোটিসিজম (neuroticism)হলে। নিউরোটিসিজম হচ্ছে ৫ টি মানসিক বৈশিষ্ট্যের(অকপটতা, সুবুদ্ধি, বহির্মুখীতা/অন্তর্মুখিতা, শিষ্টতা) একটি যাকে দুশ্চিন্তা, মেজাজ এবং বিষণ্ণতার চালক হিসেবে ধরা হয়। কিছু ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট একে প্রতিটা মানসিক অসুস্থতার (ড্রাগ বা অ্যালকোহল সেবন, বিষণ্ণতা এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার) মূল হিসেবে দেখা হয়। ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবানা ক্যাম্পেইন এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি গবেষক ব্রেন্ট রবারটস সায়েন্স ডেইলিকে বলেন, আমরা বলছি না যে ব্যক্তিত্ব নাটকীয়ভাবে পুনঃসংগঠিত হয়। আপনি একজন অন্তর্মুখী মানুষকে বহির্মুখী করে ফেলতে পারবেন না। কিন্তু এতে এটাই প্রকাশ করা হয়েছে যে ব্যক্তিত্ব উন্নয়নশীল এবং এর উন্নতি করা সম্ভব।
ডা. রবার্ট ২০ বছরের বেশি সময় ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি এমন প্রমাণও দেখেছেন যে, জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাও কারো কারো ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটায় এবং তিনি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেন যে সরাসরি হস্তক্ষেপের দ্বারাও একই রকম পরিবর্তন সম্ভব। তিনি এই গবেষণার শেষে ২০০ এর বেশি গবেষণা প্রজেক্টের পর্যালোচনা করেন, যেখানে ২০,০০০ এর ও বেশি মানুষের অগ্রগতি লক্ষ্য করেন বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপের পর। এখানে বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা এবং পেনিক অ্যাটাকের রোগীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, এছাড়াও বিভিন্ন অপব্যবহারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন যারা তারাও ছিলেন। অধ্যাপক রবার্ট বলেন, আমরা থেরাপির কোন নির্দিষ্ট ধরনের বিষয়ে উৎসাহিত ছিলাম না। কিন্তু আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে ব্যবহার হয় এমন থেরাপিউটিক মডিউল কাজে লাগিয়ে উপাত্ত প্রস্তুত করেছি।

যেহেতু ক্লিনিকগুলোতে যত্নসহকারে তথ্য সংরক্ষণ করা হয় তাই ডা. রবার্ট এর পক্ষে সম্ভব হয়েছিলো এটা পরিমাপ করা যে, রোগীদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়েছিলো কিনা এবং এই পরিবর্তন চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো কিনা। চিকিৎসার পূর্বের এবং পরের কিছু প্রশ্ন করার মাধ্যমে এটি নির্ধারণ করা হয়, যা গড়ে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল। রোগীরা তাৎপর্যপূর্ণভাবেই কম বাতিক গ্রস্থ হন এবং তারা পূর্বের তুলনায় বহির্মুখী হন। অনেক রোগীদের ভালো থাকা এবং দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি ঘটে এবং অনেকেই বলেন যে এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী ছিলো। যে রোগীদের আবেগীয় এবং উদ্বিগ্নতার সমস্যা ছিলো তাদেরই বেশি পরিবর্তন হয়েছিলো।

সর্বোপরি ডা. রবার্ট জেনেছেন যে, এই হস্তক্ষেপগুলোর মধ্যে কোন তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য ছিলো না। হস্তক্ষেপের দ্বারাই পরিবর্তনকে উৎসাহিত করা যায়। তাই বলা যায় যে যদি আপনি থেরাপি নিয়ে থাকেন তাহলে তা চালিয়ে যান।

যদি CBT এর মত হস্তক্ষেপের ফলে ব্যক্তিত্বের স্থায়ী পরিবর্তন করা যায় তাহলে অন্যান্য থেরাপি ও ব্যবহার করা যেতে পারে। ডা. রবার্ট বলেন, আমি যা জেনেছি তা নিয়ে উৎসাহী এবং একে শ্রেণী কক্ষেও ছড়িয়ে দিতে চাই। যেখানে আমরা মানুষকে তার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারি ভালোভাবে। আমরা যা শিখতে পারি সে বিষয়ে আমি খুবই কৌতূহলী।