Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

unnamed

খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০১৭: নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারতে গিয়েছেন। আমরা ভেবেছিলাম তিনি দেশের মানুষের জন্য পানি নিয়ে আসবেন। কিন্তু তিনি শূন্য হাতে ফিরে আসলেও হাওড় অঞ্চল পানিতে ভাসছে। সেখানকার প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, নদী শাসন না থাকার কারণে আজকে আমরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা-হবিগঞ্জসহ যে সমস্ত হাওড় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাদের পাশে রাষ্ট্রের এখনই দাঁড়ানো উচিত। তাদের কৃষি ঋণ মওকুফ করে নতুন করে আবার আবাদ করতে পারে সেই ব্যবস্থা কৃষি মন্ত্রণালয় যদি করে তাহলে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা খুশী হবো।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকাসহ প্লাবিত সকল হাওড় অঞ্চলকে দূর্গত ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত নাগরিক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি মো. ওমর ফারুক সেলিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান তামান্না, বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড আবদুর রাজ্জাক, এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা,  সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাংবিধানিক অধিকার ফোরামের সভাপতি সুরঞ্জন ঘোষ, কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজসেবক অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বাদল, বন্ধু দলের সভাপতি শরীফ মোস্তফাজামান লিটু, গণ ঐক্যের সভাপতি আরমান হোসেন পলাশ, সচেতন নাগরিক সংহতির সভাপতি হাবিবুর রহমান বিপ্লব প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান মান্না আরো বলেন, আমাদের দেশের দুই নেত্রী তাদের নির্দেশের বাইরে একটি গাছের পাতাও নড়ে না। এমনকি তাদের নেতাকর্মীরা জোরে কাশি দেয় না, নেত্রী বিরক্ত বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে। সেখানে হাওড় অঞ্চলে এতবড় ক্ষতি হলো কারো কি নজরে কাড়লো না। সম্প্রতি মেয়র বরখাস্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমে বলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানেন না।

প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ফিরে এসে তিনি হিন্দি ভাষায় কথা বললেন। কি এমন আনন্দ পেলেন জানি না যে হঠাৎ করে মায়ের ভাষা ভুলে গিয়ে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনি অবিলম্বে হাওড় অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করার জোর দাবি জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়ে কৃষকদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। হাওড় অঞ্চলের দুর্গত মানুষরা জীবন যুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ এখনো তাদের পাশে কেউ নেই।

তিনি বলেন, অবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে হাওড় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। হাওড় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করে পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত বিনামূর্যে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম হাওড় অঞ্চলে বিস্তৃত করে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি রোধে একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কৃষকের কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে সরকারী দলের নেতারা যেভাকে ব্যাংক লুট থেকে শুরু করে ব্যাপক লুটপাট করছে সেখানে কৃষকের সাধারণ কৃষিঋণ মওকুফ করলে রাষ্ট্রে খুব বেশী ক্ষতি হবে না। সরকারকে মনে রাখতে হবে কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। তাই দেশের কৃষককে বাঁচাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা এই সাত জেলার ১.৯৯ মিলিয়ন হেক্টর ভূমির ৪৩ শতাংশ হাওর অঞ্চল। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ ধান এ অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। এবার ফসল ওঠার ২-৩ সপ্তাহ আগে টানাবর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২ হজার কোটি টাকা। এতে স্থানীয় কৃষকরা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরাসরি তাদের সহায়তা, হাওর অঞ্চলের দুর্যোগ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনা, আগাম বন্যার পানির পরিমাণ নিরূপণ করে তার যাওয়ার উপযোগী প্রশস্ত বাঁধ নির্মাণ করা, বাঁধ এলাকার ভেতরে আগাম জাতের ধান চাষ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মুহুর্তে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পানিতে ভেসে যাচ্ছে তাদের দুর্দশা দুঃখের কথা সেভাবে গণমাধ্যমে উঠে আসছে না। বঞ্চিত মানুষদের অভাব-অভিযোগের কথা এখন রাজনীতিবিদরা ভুলেই গেছেন। অথচ কৃষকদের বেঁচে থাকার উপরই আমাদের শহুরে মানুষেরা ভালভাবে জীবনধারন করছেন। তাদেরকে আমরা যদি সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বাঁচিয়ে রাখতে না পারি এই ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্রের পাশাপাশি সকল রাজনীতিবিদদের নিতেই হবে।