Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

u23016_187611_258148

খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০১৭:   শিশু মানেই দুরন্ত, চঞ্চল ,পৃথিবীর সমস্ত চঞ্চলতা যেন তাদের মাঝে ভর করে পৃথিবীকে প্রাণচঞ্চল করে তোলে । অনেকেই শিশুদের দুষ্টামি ও চঞ্চলতা নিয়ে আক্ষেপ প্রদর্শন করলেও চঞ্চলতাই কিন্তু প্রতিটি প্রি-স্কুল শিশুর বৈশিষ্ট্য । সাধারণভাবে প্রি-স্কুল বা  প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশুর বয়সসীমা আড়াই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত । কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানীর মতে, ৩-৫ বছর বয়সীকে প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়ে থাকে।
আমরা আমাদের সমাজ বাস্তবতা থেকে উপলব্ধি করতে পারি যে সবাই সবার জায়গা থেকে মনে করে যে সে যা বলছে সঠিক বলছে। বিশেষ করে প্রি-স্কুল শিশু পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবা-মা তাদের শিশুর সঙ্গে করা তাদের অস্বাভাবিক আচরণকে সব সময় স্বাভাবিক মনে করে আসছে   তাদের ধারণা তারা যা করছে শিশুর মঙ্গলের জন্য করছে । এমনকি এই অবুঝ শিশুর গায়ে হাত তুলেও তারা কখনও অনুভব করতে পারেন না যে শিশুর সঙ্গে তারা অন্যায় করে ফেলছেন!
শিশু পরিচালনায় জন্য প্রতিটি বাবা-মার সঠিক ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকার প্রয়োজন।  প্রাক-স্কুলগামী শিশুদের জন্য দুই ধরনের নির্দেশিকা রয়েছে যা দ্বারা তাদের পরিচালনা করতে হয়।
১) কথায় নির্দেশিকা
২) কাজের নির্দেশিকা
১) কথায় নির্দেশিকা
শিশুকে আদেশ বা নির্দেশ যাই দেয়া হোক না কেন তা নেতিবাচক বলা যাবে না, ইতিবাচক বলতে হবে। যেমন-শিশু ঘর নোংরা করলে তাকে তার জন্য বকা বা নিষেধ না করে ঘর ময়লা করার পর তাকে নিয়েই ঘর পুনরায় ঘুছানো যেতে পারে। এর থেকে শিশু সৌন্দর্য সম্পর্কেও ধারণা পাবে।
এই বয়সী শিশুকে সব কিছু হাতে হাতে শিখানোর চেয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। শিশু তার চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করবে। যেমন, মা শিশুর পিছনে দুধের বোতল নিয়ে ঘুরবে না। বরং শিশু নিজেই মায়ের কাছে দুধের বোতল খুঁজবে।
শিশু তার পছন্দ মত যা করতে চায় তা যদি তার জন্য কোনোরূপ ক্ষতির কারণ না হয় তাহলে তা তাকে করতে দিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা যায় শিশুকে শিশু মনে করা হয় না আর বড়রা শিশুর মতো আচরণ করে। যেমন- বাড়ির কলিং বেলের আওয়াজ হলেই শিশু গেট খুলতে দৌঁড় দেয়। কিন্তু তার চেয়েও দিগুন দৌঁড়ে বড় সদস্যাটি গেট খুলে দেয়। এই ক্ষেত্রে শিশু গেট খুলতে পারলে তাকে তা করতে দিতে হবে। আর না পারলে তাকে কোলে নিয়ে গেট খোলার সুযোগ দিতে হবে।
অভিভাবককে শিশুর এমন বন্ধু হতে হবে যেন তার কণ্ঠ শিশুর জন্য আস্থার স্বর হয়। যেমন, অনেক ভীড়ের মধ্যে যখন শিশু তার মাকে খুঁজে না পায় তখন হটাৎ মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে তার মধ্যে স্বস্তি আসবে। কিন্তু শিশুর যদি এমন হয় যে কোনো ভাবে কোথাও পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলো আর হটাত তার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে ‘আত্মা রাম খাঁচা ছাড়া’ হয়ে যাওয়ার দশা হলো। সে তার ব্যথা লুকানোর চেষ্টা করলো, তখন বুঝে নিতে হবে এখানে অভিভাবকের কণ্ঠস্বর শিশুর জন্য আস্থাবাচক নয়।
শিশুর সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যা তাকে লজ্জিত করবে বা ভীত করবে। অনেক অভিভাবক মনে করেন লজ্জা দিলে শিশু কোন কাজ দ্রুত শিখে। বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই। যেমন, শিশু রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে দিলে সকালে উঠে যদি তিরস্কারের মুখে পড়ে তবে সে ভীত হয়ে পড়বে। যা তার টয়লেট ট্রেইনিঙ্গে মারাত্মক বাধা দিবে। আর এছাড়াও এভাবে লজ্জা দিলে শিশুর ব্যক্তিত্বে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। শিশুরা সাধারণত দুর্বল চরিত্রের হয়।
আমরা জানি প্রতিটা শিশু আলাদা, প্রতিটা শিশুর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট, তাই তাদেরকে আলাদা ভাবেই চিন্তা করতে হবে। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য কখনোই অন্যের সঙ্গে তাদের তুলনা করা যাবে না। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
নিজেদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মধ্যে থেকে যতদূর সম্ভব শিশুকে তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। যেমন, শিশু যদি নিজের পছন্দের কবিতা পড়তে চায় তাহলে নতুন কবিতা নিয়ে তাকে চাপ দেয়া যাবে না।
২) কাজের নির্দেশিকা
চারু ও কলার কোনো ধরণের জিনিস শিশুর সামনে মডেল হিসেবে আনা যাবে না। কারণ মডেল দেখলে সে অনুকরণ প্রিয় হয়ে উঠবে, আর তার সৃজনশীল কাজে বাধা আসবে। যেমন – তাকে বৃত্ত ,ত্রিভুজ এই জাতীয় জ্যামিতির চিত্রের মডেল না দিয়েই বলতে হবে গোল করে আঁক ,লম্বা একটা দাগ দাও ইত্যাদি।
শিশুদের স্বনির্ভর করার জন্য ন্যূনতম সাহায্য করতে হবে। যেমন- শিশু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাইলে তাকে উঠতে দিতে হবে কিন্তু তার সুরক্ষার জন্য পিছনে থাকা বা একটা হাত ধরে থাকতে হবে।যেন শিশু পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়।
শিক্ষণ দ্রুত করার জন্য পুরস্কার একটি মাধ্যম। যেমন, আপনার একটি ছোট হাসিও শিশুর জন্য পুরস্কার হতে পারে।শিশু যাই করুক না কেন তাকে হাত তালি দিয়ে, মুচকি হেসে,সাবাশ বলে,কোলে তুলে নিয়ে,গালে চুমু দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবকদের দুরদর্শিতা খুবই প্রয়োজন। যেমন, শিশুর কাছাকাছি বিপদজনক কিছু থাকলে আগেই মাকে সতর্ক থাকতে হবে। ঘরে সুইচ বোর্ড শিশুর নাগালের মধ্যে হলে মাকে বিপদ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা করে রাখতে হবে এবং সেখানে টেপ বা ফার্নিচার জাতীয় কিছু রাখতে হবে যেন শিশু তা দেখতে না পায়।
কোনো কাজে যদি সীমারেখা নির্দেশ করতে হয় তাহলে শিশুকে একদম স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। যেমন- ছাঁদের কিনারায় শিশু যেতে পারবে না তা তাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর এমন অবস্থায় শিশু যেন তার কথা শুনে তার জন্য অন্য বড় সদস্যাদের কেও একই নিয়ম মানতে হবে।
সবসময় শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা সবার প্রথমেই মনে রাখতে হবে। যেমন-শিশু পানি নিয়ে দুষ্টামি করতে চাইলে তার স্বাস্থ্য হানীর সম্ভাবনা থাকলে তাকে পানির পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে খেলতে দিতে হবে।
পর্যবেক্ষণ করে শিশুকে বুঝতে হবে যে শিশুর আকাঙ্ক্ষা কি, তার চাহিদা কি, শিশুর যে কোন ধরনের অযাচিত আচরণের পিছনের কারণ কি ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে অভিভাবককে। যেমন-শিশু রাগ দেখাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এই ক্ষেত্রে আদরের ভাষা দিয়েই কেবল শিশুকে বুঝা সম্ভব।
শিশু এমন অনেক কিছুই করতে চায় যা দেখে বড়রা মনে করেন শিশুর জন্য এটা ঠিক নয়। এমন ক্ষেত্রেও ‘না’ কথাটি এড়িয়ে তাকে অন্য কিছু করতে উৎসাহ দিতে হবে। মনে রাখবেন শিশুর মন কাঁদা মাটির মতোই নরম তাই তার মন ভুলানো অনেক সহজ। কিন্তু শিশুর সঙ্গে পেরে না উঠলে নিজেই শিশু হয়ে যাবেন না। বকা, মারধর ছাড়াও শিশুকে বিভিন্ন কাজ থেকে ফেরানো যায়। তবে শিশুর জন্য ক্ষতিকর কাজ ছাড়া অযথা অন্যান্য কাজ থেকে তাকে ফিরানোর চেষ্টা করবেন না। যেমন- শিশু গেট খুলতে গেলে আপনি বারণ করলেন, রিমোট হাতে নিলেও আপনি তা নিয়ে নিচ্ছেন হয়তো শিশুর পছন্দের চ্যানেলটিই ছেড়ে দিলেন, শিশু ঘর ময়লা করছে তাই তাকে যখন তখন খেলতে দিলেন না ইত্যাদি এই সকল কাজে শিশুর কোন ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না তবুও আপনি তাকে বাঁধা দিলেন। এরপর দেখা যাবে শিশু কখন ছুরি ধরেছে আর তখনও আপনি বাঁধা দিলেন, কারেন্টের বোর্ডে হাত দিয়েছে আর আপনি তাকে ধমক দিলেন ইত্যাদি সকল কাজে বাধা দেয়ার পরও শিশু এই থেকে কিছুই শিখতে পারলো না। কারণ তাকে সকল কাজেই বাধা দেয়া হয় তাই তার জন্য ক্ষতিকর কোনটি আসলে তা সে বুঝে না। আর এসবের কারণে শিশুর মেজাজ হয় খিটখিটে,মারমুখী।
শিশুর যেকোনো আচরণের জন্য শিশু দোষী নয় বরং তার পরিবেশ দায়ী। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার সব সময়ই হয় কিন্তু তাই বলে শিশুকে উত্যক্ত করে বা নিজের মন মত পরিচালনা করে সুদূর প্রসারী কোন ফল পাওয়া সম্ভব নয়।