খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৭: উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক দ্বিতীয় বৃহত্তর তেঘর মেলা কাগজে কলমে এ মেলার সঠিক কোন ইতিহাস না থাকলেও মেলাটি যে বহুদর্শী পুরনো তাতে কোন দ্বিমত নেই। নাম ডাকও আছে এই মেলার। মেলার পুরো ইতিহাস বলতে পারে এমন বয়সী মানুষের দেখা না মিললেও মেলাটি যে কয়েক’শ বছরের পুরনো তা শোনা যায় অত্র এলাকার প্রায় লোকের মুখে মুখে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হতে ৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়ন কার্যালয়ের পার্শ্বে অবস্থিত এ ঐতিহাসিক তেঘর মেলা। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির পর শিব মন্দিরকে ঘিরে ভক্তদের নাচগান ও ডালা পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় শিব মন্দির পূজা। শুরু হয় ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ঐতিহাসিক এ মেলা। মেলাকে ঘিরে দূর দূরান্ত এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেলায় ভীর জমাতে থাকে হরেক রকম ব্যবসায়ীরা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয় নি। মেলার ১ম থেকে শেষ পর্যন্ত চোখে পড়ে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভীড়। ঐতিহ্যবাহী মেলায় একদিকে যেমন পাওয়া যায় রকমারী মিষ্টান্ন, তেমনি পাওয়া যায় বর্ণিল সাজের চুড়ি ফিতা ও প্রসাধনী।
চিরায়ত গ্রাম বাংলার পুরোনো এবং জনপ্রিয় এ মেলায় গ্রামীণ ডাল মসলা, পাঁচফোড়নসহ বহু পদের মসলার সমাহার দেখা যায় এ মেলায়। মেলার মাঝখানটায় বহুদর্শী পুরোনো শিব মন্দিরের চারপাশ ঘিরে বসে পোড়া মাটির তৈজসপত্রের দোকানীরা। পিছিয়ে থাকে না সাংসারিক কাজে ব্যহৃত লোহার তৈরি জিনিস পত্রের দোকানী কামাররা। মেলায় আগত মেলা প্রেমীদের কেনা কাটায় পরিপূর্ণতা আনতে পাওয়া যায় মেলার প্রধান আকর্ষণ সনাতন পদ্ধতিতে চালের আটার তৈরি লাল সাদা ঝুরি (কানমুড়ি) ও জিলেপী। আনন্দ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে শিশু কিশোরদের জন্য মেলায় রয়েছে নাগরদোলা, লাকী কুপন লটারী, ফর ও বালা খেলা। এসব কিছুর সাথে বৈশাখের বাহারী সাজ মিলেমিশে উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক তেঘর মেলা যেন উত্তর জনপদের সববয়সী ও শ্রেণী পেশার মানুষের এক নিবিড় মিলন মেলা।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানায় এ মেলা দীর্ঘ পুরোনো। গ্রামীণ এ মেলা গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের মিলন কেন্দ্র ও বাহারী কেনাকাটার গ্রাম্য বাজার। তাই এই মেলা যেন তাদের প্রাণের মেলা।
জয়পুরহাট জেলা সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, প্রতিবছর একই সময়ে চৈত্র সংক্রান্তির মধ্য দিয়ে ১লা বৈশাখ উপলক্ষে শুরু হয় আনন্দের উৎসব ঐতিহাসিক তেঘর মেলা। জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পক্ষ থেকে মেলার জন্য ৭ দিনের অনুমতি দেওয়া হলেও চাহিদা পূরন ও দর্শনার্থীর আকাক্সক্ষা মিটাতে তা ১৫ থেকে ২০ দিন চলতে থাকে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। সুদীর্ঘ কয়েকশত বছরের পুরোনো এ মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে অত্র এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁর পক্ষ থেকে সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।